আজ আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস
আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট থেকে ॥ চুনারুঘাট উপজেলার রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যের ময়নাবিলে ৩৮ পরিবার (৭৬টি) মহাবিপন্ন বাংলা শকুনের আবাসস্থল। এটি দেশের বৃহত্তম শকুনের আবাসস্থল। ২০১৫ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব কনজারভেশন ফর নেচার (আইইউসিএন) এসব শকুন রক্ষায় কাজ শুরু করে। পর্যাপ্ত খাবারের সংকট, আশ্রয়স্থল ধ্বংস হওয়া এবং প্রাণীর ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রোফেন ব্যবহারের কারণে বাংলা শকুন দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ চলতি বছরের মার্চ মাসে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের বরকাপন, বুড়িকোনা ও রসুলপুরের মাঠ থেকে ১৪টি মরা শকুন উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে এগুলো রেমা কালেঙ্গা আবাসস্থলের শকুন। ডাইক্লোফেনাক-জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা কোনো মৃত গবাদিপশুর মাংস অথবা বিষ প্রয়োগে মৃত কুকুর-শিয়ালের মাংস খেয়ে শকুনগুলো মারা যেতে পারে। এ অবস্থায় ২ সেপ্টেম্বর বন বিভাগ ও আইইউসিএন যৌথভাবে আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস পালন করছে মৌলভীবাজারে। সেখানে প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ আমির হোসেন চৌধুরী উপস্থিত থাকবেন। তবে রেমা কালেঙ্গায় নেই কোন আয়োজন।
আন্তর্জাতিক শকুন শুমারি মতে, গত দুই দশকে পৃথিবী থেকে ৯৯.৯৯ শতাংশ বাংলা শকুন মারা গেছে। শকুনকে বলা হয় প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মী। পশু-পাখিসহ নানা প্রাণীর মৃতদেহ খেয়ে পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এ প্রাণী। কিন্তু পরিবেশের জন্য অপরিহার্য্য এই প্রাণী মানবসৃষ্ট কারণে এখন মহাবিপন্নের পথে। পরিসংখ্যান মতে বাংলাদেশে ৬ প্রজাতির শকুন রয়েছে। এর মধ্যে বাংলা শকুন অতিবিপন্ন একটি প্রজাতি। বিশেষজ্ঞদের মতে, পশু চিকিৎসায় ব্যবহার্য ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রোফেন শকুনের বিলপ্তির মূল কারণ। বন বিভাগের মতে, সারা দেশে বাংলা শকুনের সংখ্যা ২৬০টি। আশার কথা মহাবিপন্ন এই বাংলা শকুন রক্ষায় ২০২১ সাল থেকে দেশে কিটোপ্রোফেন জাতীয় ঔষধ উৎপাদন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এছাড়া এর আগে ডাইক্লোফেনাক নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
সিলেট বিভাগের একমাত্র হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের রেমা-কালেঙ্গা সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ৩৮ পরিবার বা ৭৬টি বাংলা শকুন রয়েছে। তবে ৫২ থেকে ৬০টি শকুন এখন দেখা যায়। এসব শকুন রক্ষায় সরকারের সাম্প্রতিক প্রচেষ্টা পরিবেশ ও প্রকৃতিপ্রেমিকদের মধ্যে বেশ আশাও জাগালেও দিন দিন শকুন বাড়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবে কমছে। চুনারুঘাটের রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য বিলুপ্তপ্রায় শকুনের জন্য ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর ‘নিরাপদ এলাকা’ ঘোষণা করা হয়। ওই নিরাপদ এলাকা ঘোষণা করে সেখানে শকুন সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়, যেখানে শকুন নিরাপদে প্রজনন ও বিশ্রামের সুযোগ করে দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে সেখানে নির্মাণ করা হয় শকুনের খাবার স্টেশন। সরকারের বন বিভাগ এবং ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব কনজারভেশন ফর নেচার (আইইউসিএন) বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে একটি প্রকল্পের আওতায় শকুন সংরক্ষণের এই উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে।
আইইউসিএর সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার সীমান্ত দিপু জানান, রেমার ময়নাবিলে ৩৮ পরিবার শকুন রয়েছে। তিনি জানান, প্রতি বছর শকুন একটি করে ডিম পাড়ে, তবে তাদের মধ্যে ৭২.৪ শতাংশ ডিম থেকে বাচ্চা হয়। ২০২১-২২ সালে ১৪টি বাসা সনাক্ত করা হয় এবং ২০২২-২৩ সালে ১৮টি বাসা সনাক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে ১৩টি সফল। সেই হিসেবে রেমায় প্রতি বছর ৮ থেকে ১০টি বাচ্চার জন্ম হচ্ছে। তিনি জানান, সিলেট বিভাগে ৭০ থেকে ৮০টি শকুন রয়েছে। এর মধ্যে রেমায় ৭৬টি শকুন। গত ২ বছরে সেখানে ২৮টি গরু খাবার হিসেবে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে শকুনের প্রজনন সময় সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এসব খাবার দেওয়া হয়। তিনি জানান, তাদের আন্ত:সীমানা রোড, মৃত্যুহার কারণ এবং সামগ্রিক সংরক্ষন বিষয়ে তথ্য জানার জন্য ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে একটি শকুনের পায়ে স্যাটেলাইট রিং পড়ানো হয়।