শহরের বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পাড়া মহল্লায় পাহারাদার নিয়োগ করতে হবে
রাতে শহরের প্রধান সড়ক ও ফাঁড়ি রাস্তাসহ অলিগলিতে পুলিশের টহল বাড়াতে হবে

মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ হবিগঞ্জ শহরে একের পর এক চুরির ঘটনা প্রতিরোধে ব্যবসায়ীরা কি ভাবছেন তা পর্যায়ক্রমে পাঠকদের সামনে তুলে ধরছে দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ। চুরি প্রতিরোধে হবিগঞ্জ শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন আমাদের কাছে। দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকার পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।
হবিগঞ্জ শহরের তিনকোনা পুকুর পাড় এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ হাফিজুর রহমান সুমন বলেন, হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। তাদের মাঝে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। এমন পরিস্থিতিতে তারা কি করবেন না করবেন তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় ভোগছেন। তিনি শহরের চুরি প্রতিরোধে এলাকা ভিত্তিক ২ জন করে পাহারাদার নিয়োগের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, শহরের অনেক জায়গায় ব্যবসায়ীরা নিজ উদ্যোগে পাহারাদার নিয়োগ দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও অনেক জায়গায় এখনো কোন পাহারাদার নেই। তাই চুরি প্রতিরোধে শহরের সর্বত্র পাহারাদার নিয়োগ করতে হবে। নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার স্বার্থেই পাহারাদার নিয়োগ দেয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। ২ জন পাহারাদার নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাহারাদার ২ জন হলে তাদের মধ্যে জড়তা আসে না। তারা কাজে ফাঁকি দেবে না। কখনো ঘুম আসলে বা ভাল না লাগলে তারা একে অপরের সাথে কথা বলে জড়তা কাটিয়ে নিতে পারবে। তাছাড়া একজন পাহারাদার হলে সে এক স্থান হতে অন্য স্থানে যাওয়ার ফলে একপাশ অনিরাপদ থাকে। তখন চোর এই সুযোগ নিয়ে চুরি করে থাকে। পাহারাদার দুই জন হলে সে সম্ভাবনা কম।
চুরি প্রতিরোধে প্রশাসনের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও ভূমিকা নেয়ার আহবান জানান তিনি। পাশাপাশি রাতের বেলা দোকানের সামনে ও পেছনে বাতি জ¦ালানোর উপর তিনি গুরুত্বারোপ করে বলেন, দোকানের সামনে পেছনে বাতি জ¦ালানো থাকলে পাহারাদার ডিউটি করার সময় চারপাশ তার নজরে আসবে। এতে দোকানে চুরি সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে কম।
রাতে পুলিশের টহল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাতে পুলিশ গাড়িতে করে পাহারা দেয়। তারা ডিউটির সময় পাহারাদারদের সাথে কথা বলে, তাদের খোঁজ খবর নেয়। এতে ভাল কাজ হয়, তবে তারা নিয়মিত টহল দিলে কাজ হতো বেশি।
চোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা চোর আটক করে পুলিশে দিলে তাদের উল্টো হয়রানী হতে হয়। চোরেরা কিছুদিন জেল খেটে আইনের ফাঁক গলিয়ে বেরিয়ে আসে। সম্প্রতি তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকার তিন দোকানে চুরি সংঘটিত হয়। এর প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা রাস্তা অবরোধসহ আন্দোলন করেন। হোটেল থেকে চোরও আটক করা হয়। চোরেরা কৌশল অবলম্বন করে নিজের বাসায় না থেকে হোটেলে অবস্থান করে। তাই তিনি শহরে চুরি প্রতিরোধে হোটেলে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার দাবি জানান। তাছাড়া যারা হোটেলে অবস্থান করে তাদের সঠিক তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না উল্লেখ করে তিনি হোটেলে অবস্থানকারীদের সঠিক তথ্য সংরক্ষণের দাবি জানান। যাতে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে সহজেই অপরাধিকে সনাক্ত করা যায়।
তিনি বলেন, কারা চোর তাদের তালিকা প্রশাসনের কাছে রয়েছে। প্রশাসন ইচ্ছে করলেই ওই তালিকায় থাকা চোরদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে চুরির ঘটনা উদঘাটন করতে পারে।
সিসি টিভি ক্যামেরা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের এলাকায় অধিকাংশ ব্যবসায়ীই আর্থিকভাবে তেমন স্বচ্ছল নয়। তারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। আর হাতে গোনা কয়েকজন রয়েছেন স্বচ্ছল। তাই সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানোর উদ্যোগ নিলেও অনেকেই তাতে আগ্রহী হন না। তার পরও তারা তিন কোনা পুকুর পাড় থেকে টাউন হল পর্যন্ত সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি প্রশাসনকে উদ্যোগী হওয়ার আহবান জানান। প্রশাসন উদ্যোগী হলে ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে এ উদ্যোগ সফল করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
চৌধুরী বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আছকির মিয়া বলেন, চুরি প্রতিরোধে শুধু মার্কেট ভিত্তিক পাহারাদার নিয়োগ করলে চলবে না, শহরের বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পাড়া মহল্লায় পাহারাদার নিয়োগ করতে হবে। রাতে শহরের প্রধান সড়ক ও ফাঁড়ি রাস্তাসহ অলিগলিতে পুলিশের টহল বাড়াতে হবে। তাছাড়া চুরি প্রতিরোধে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, শহরের প্রবেশ পথ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মার্কেটে সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি। আর এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন। এছাড়া মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় প্রশাসনের উদ্যোগে সচেতনতামূলক সভা সমাবেশ করলে চুরি অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। পাশাপাশি তিনি চুরি প্রতিরোধে শহরে পুলিশের টহল জোরদারের দাবি জানান।