এসএম সুরুজ আলী ॥ হবিগঞ্জের বিভিন্ন হাওরে বোরো ধানের চারা গজিয়ে উঠার পর পোকার আক্রমণে বিনষ্ট হচ্ছে। এতে জমিতে বোরো ধান চাষ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় এবার ১লাখ ২২ হাজার ৪ শ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এবার গত বছরের চেয়ে ১হাজার ৬শ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হবে। এবার ৫ লাখ ৮ হাজার ৬৭০ টন ধানের উৎপাদন নির্ধারণ করা হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে দ্রুত ও ভাল ফলন পেতে জেলার বিভিন্ন হাওরে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করে চারা লাগানো হয়। কিন্তু চারাগুলো গজিয়ে উঠার পর পরই পোকার আক্রমণে বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষকরা বার বার জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করেও পোকার আক্রমণ থেকে চারাগুলো রক্ষা করতে পারছেন না। এ অবস্থায় কৃষকরা একই জমিতে ২য় বার বীজতলা তৈরী করে চারা রোপন করছেন। দ্বিতীয়বার রোপন করা চারাগুলোতেও পোকা আক্রমণ করেছে। এতে ধানের গাছগুলো লালচে রং ধরে মরে যাচ্ছে। কিছুতেই পোকার আক্রমণ থেকে চারা রক্ষা করা যাচ্ছে না। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তারা বোরো ধানের চাষ করতে পারবেন কি না নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়েছেন। বিশেষ করে বানিয়াচং উপজেলার কৃষকদের জমিতে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলার আতুকুড়া গ্রামের কৃষক আখলাছ মিয়া জানান, প্রতি বছর ৪০/৫০ খের জমিতে তিনি বোরো ধানের চাষ করেন। এবারও ৪০/৫০ খের জমিতে বোরো ধানের চাষ করবেন তিনি। এ লক্ষ্য নিয়ে বোরো ধানের বীজতলা তৈরী করেছিলেন। ধানের বীজ থেকে চারা গজিয়ে উঠার পর পরই এক ধরণের ভাইরাস জনিত পোকা ধানের চারায় আক্রমণ করছে। এতে চারাগুলো লাল রং ধারণ করে মরে যাচ্ছে। সার, কীটনাশক দিয়ে ধানের চারাগুলোকে বাঁচানো যাচ্ছে না। তিনি বলেন- প্রথম দফায় ক্ষতি হওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় আবারও বীজতলা তৈরী করে চারা লাগানোর জন্য জমিতে ধান ফেলা হচ্ছে। ২য় পর্যায়েও ধানের চারাগুলো মরে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বোরো ধান চাষ করতে পারবো কি না এ নিয়ে চিন্তায় পড়েছি। সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন সহযোগিতা পাচ্ছি না। এ অবস্থায় কৃষকদের কীটনাশকসহ সরকারী সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতা প্রদানের আহ্বান জানান।
হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ তমিজ উদ্দিন খান জানান, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বীজতলা তৈরী করে চারা রোপন করা হয়েছে। বোরো ধান চাষে কৃষকরা বাধাগ্রস্ত হবেন না। আমাদের পক্ষ থেকে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। জেলায় প্রায় ৭০ হাজার কেজি বীজ বিতরণ করেছি। আমাদের ৮ জন কৃষি অফিসার সরেজমিনে মাঠ পরিদর্শন করছেন। আমি নিজে পরিদর্শন করেছি। আমাদের বীজতলার রং এখন সম্পূর্ণ সবুজ। আমি আশা করছি, এ বছর কৃষকদের বীজতলায় আর সমস্যা হবে না। আমাদের পক্ষ থেকে কৃষকদের সকল ধরণের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।