মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ যে কোন দেশের উন্নয়নে যুব সমাজের ভূমিকা অনস্বীকার্য। যুব সমাজকে বাদ দিয়ে দেশের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন কল্পনা করা যায় না। কারণ যুব সমাজ হচ্ছে একটি দেশের উন্নয়নের চালিকাশক্তি। তাই দেশের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ডে সকল শ্রেণি ও স্তরের যুব সমাজ বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া দলিত যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করতে হবে। নতুবা দেশের কাক্সিক্ষত অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে।
এ প্রসঙ্গে চুনারুঘাট হাতিমারা চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ধনঞ্জয় চৌহান বলেন, স্থানীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে দলিত যুবসমাজের চিন্তা চেতনাকে মূল্যায়ন করার মতো সামাজিক অবস্থান আমাদের সমাজে এখনো তৈরী হয়নি। আর এই অবস্থান তৈরী না হওয়ায় তাদের মধ্যে থাকা সুপ্ত প্রতিভা সুপ্তই থেকে যায়। কারণ স্থানীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে যারা নেতৃত্ব দেন বা যে সকল জনপ্রতিনিধি জড়িত থাকেন সাধারণত তারা সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ। আমাদের সমাজে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ব্যক্তি এবং যাদের মানুষ ভয় পায় সেই প্রকৃতির লোকজনকে উন্নয়ন কর্মকান্ডে যুক্ত করার প্রবণতা বেশি। দলিত যুব সমাজ এমন কোন প্লাটফর্ম পায় না, যে প্লাটফর্মে তারা তাদের ইচ্ছা অনিচ্ছা বা উন্নয়নমূলক চিন্তা চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারে। দলিত যুব সমাজের যেহেতু আর্থিক দৈন্যতার কারণে শিশুকালে এবং কৈশোরে কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়তে হয় তাই তাদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ তুলনামূলক কম থাকে। তারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের খাবার যোগানোর চেষ্টায় নিজেদেরকে ব্যস্থ রাখার ফলে সমাজের অনেক অসঙ্গতি দেখা সত্ত্বেও তা তারা প্রকাশ করার সাহস পায় না। দলিত যুব সমাজকে সুবিধাভোগী জনগণ কাছে টেনে না আনলে এবং তাদের সঠিক মর্যাদা দিয়ে পাশে না রাখলে স্থানীয় উন্নয়নের যত ভাবনাই তাদের থাকুক না কেন তা তারা বাস্তবায়ন বা প্রকাশ করতে পারবে না।
চা শ্রমিক রমেশ মুন্ডা বলেন, যে কোন দেশের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন কর্মকান্ড সম্পন্ন করতে হলে যুব সমাজকে উন্নয়ন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে দলিত যুব সমাজ অনেক পেছনে পড়ে আছে। তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তারা স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারে না। তাছাড়া সমাজের অনেকেই দলিতদের নিচু জাত হিসেবে গণ্য করে দূরে সরিয়ে রাখেন। আমাদেরকে এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দলিতদের সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই তারা দেশের সকল উন্নয়ন ভাবনায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারবে।
স্থানীয় উন্নয়ন ভাবনায় দলিত যুব সমাজ এ প্রসঙ্গে হবিগঞ্জ শহরের মাতৃছায়া কেজি এন্ড হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক বন্ধু মঙ্গল রায় বলেন, যৌবনই মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। যুব সমাজ হচ্ছে জাতির আশা-ভরসার কেন্দ্রস্থল। জাতীয় জীবনে যে কোন গুরুত্বপূর্ণ, যে কোন আপদকালীন মুহূর্তে যুবসমাজ অগ্রণী এবং সাহসী ভূমিকা পালন করতে পারে। অতীতে তারা দেশের দুর্যোগে বিভিন্ন আপদকালীন মূহূর্তে দেশবাসীকে আশা দিয়ে, ভরসা দিয়ে, শক্তি দিয়ে, মেধা মনন দিয়ে, প্রতিভা দিয়ে প্রেরণা জুগিয়েছে। শুধু তাই নয় বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারীর সংকটকালীন মূহূর্তেও যুব সমাজের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আমাদের যুবসমাজ জাতির আপদকালীন বিভিন্ন সময়ে যে ভূমিকা পালন করেছে বা পালন করে যাচ্ছে তা অনুকরণ ও অনুসরণযোগ্য। যুবক-যুবতীরাই হচ্ছে দেশ ও জাতির প্রাণশক্তি। এরাই হচ্ছে সকল কর্মকান্ডের মূল চালিকাশক্তি ও ভবিষ্যতের কর্ণধার। তাই যুবসমাজকে বাদ দিয়ে জাতীয় জীবনে উন্নতি ও অগ্রগতির কথা ভাবাই যায় না।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সমাজের অনেকেই দলিতদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখে থাকেন। তাদের প্রতি সমাজের এই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য মনোভাব মানসিকভাবে তাদেরকে ছোট করে রাখে। তাছাড়া ভোটের হিসেবে বড় জনগোষ্ঠী না হওয়ায় তাদের ন্যায্য অধিকার থেকেও তারা বঞ্চিত হয়। যেখানে নিত্য দিনের খাবার জোগাড় করাই তাদের জন্য মারাত্মক সমস্যা সেক্ষেত্রে তারা সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের ভিতরে আসতে পারলেই নিজেকে অনেক ভাগ্যবান বলে মনে করে। তাই যদি দলিত যুব সমাজকে উন্নয়নের ভাবনায় আনতে হয় তাহলে অবশ্যই আগে তাদের সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত হলে তাদের চিন্তা চেতনা প্রকাশের সুযোগ থাকবে এবং সমাজে তাদের চিন্তা ভাবনার মূল্যায়ন ঘটবে।