১৫ থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করা যাবে ॥ ৩০ ডিসেম্বর অনলাইনে লটারী
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ হবিগঞ্জের স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এবার তৃতীয় ও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ৪৮২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবার সুযোগ পাচ্ছে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করা হবে। লটারী প্রক্রিয়ায় ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। এ খবর শুনে অভিভাবকদের মাঝে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা লটারি প্রক্রিয়ায় আনন্দিত, আর মেধাবী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মন খারাপ। যদি লটারীতে তার সন্তানের নাম না উঠে?
প্রতি বছরই এই দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজেদের সন্তানকে ভর্তি করাতে পিতা-মাতার রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নামেন। দিন নেই রাত নেই নিজের নাওয়া খাওয়া ভুলে অভিভাবকরা সন্তানকে নিয়ে ছুটেন প্রাইভেট টিউটরের বাসায়। প্রাইভেট টিউটরের কাছ থেকে বাসায় ফিরেও নিস্তার নেই। প্রিয় সন্তানকে নিয়ে পড়ালেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন অভিভাবকরা। কাক্সিক্ষত দিনে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ শেষে প্রতীক্ষায় থাকেন ফলাফলের। প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জিত না হলে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা ভেঙ্গে পড়েন। কিন্তু এবার ভর্তি পরীক্ষার এ ধারাবাহিকতা থাকছে না। এবার করোনা ভাইরাসের কারণে কাক্সিক্ষত এ দুটি বিদ্যালয়ে তৃতীয় ও ৬ষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে লটারী প্রক্রিয়ায়। এতে অভিভাবকদের মাঝে আনন্দ দেখা দিয়েছে। অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেন এ প্রক্রিয়ায় ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হলে শিক্ষার্থীর উপর থেকে যেমন চাপ কমবে, তেমনি পিতা মাতারও চাপ কমবে। তারা এ প্রক্রিয়াকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। আবার অনেকে এ প্রক্রিয়ায় দ্বিমতও পোষণ করেন। কারণ লটারী প্রক্রিয়ায় কে কতটা মেধাবী তা যাচাই বাছাই করার সুযোগ নেই। যে কেউ লটারীতে বিজয়ী হলে ভর্তি হতে পারবে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আলফাজ উদ্দিন দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ-কে জানান, এবার করোনা ভাইরাসের কারণে স্কুল থেকে কোন ভর্তি ফরম বিতরণ করা হবে না। শুধু অনলাইনে ভর্তি আবেদন করা যাবে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করা হবে। এ বছর তৃতীয় শ্রেণিতে মর্নিং ও ডে শিফটে ৬০ জন করে ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। আর ৬ষ্ঠ শ্রেণিতেও ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। তবে এ বছর ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করা হবে ১২২ জন। এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন ২ জন শিক্ষার্থী বিদ্যালয় থেকে ছাড়পত্র নিয়ে চলে যাওয়ায় এবার ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে ১২ জন। তৃতীয় ও ৬ষ্ঠ শ্রেণি ছাড়া অন্যকোন শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে কি না এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজ রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভর্তি কমিটির মিটিং রয়েছে। অন্যকোন শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে কি না এটি ওই মিটিং-এ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আব্দুল কবির জানান, এ বছর তৃতীয় শ্রেণিতে মর্নিং ও ডে শিফটে ৬০ জন করে মোট ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। আর ৬ষ্ঠ শ্রেণিতেও ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। তাছাড়া আজ রবিবার ভর্তি কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে অন্যকোন শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে কি না।
শিফা আক্তার নামে এক অভিভাবক বলেন, তিনি গত বছর তার পুত্রকে হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে এবং কন্যাকে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করতে সারা বছর প্রাইভেট টিউটরের কাছে ছুটেছেন। নাওয়া খাওয়া ভুলে বাসায়ও নিয়মিত তিনি তাদের যতœ নিয়েছেন। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় তার সন্তানদ্বয় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এতে তিনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। শুধু তাই নয় তার সন্তানরাও বিমর্ষ হয়ে পড়ে। যা পরবর্তীতে তাদের লেখাপড়ায় প্রভাব ফেলে। এ বছর লটারী প্রক্রিয়ায় ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হবে জেনে তিনি আনন্দিত। তিনি এ প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়ে ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত রাখার আহবান জানান।
কাউছার মিয়া নামে একজন অভিভাবক জানান, তিনি তার সন্তানকে হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে প্রাইভেট টিউটরের পাশাপাশি নিজেও শ্রম দিয়েছেন। কিন্তু তার সন্তান ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এতে তিনি যেমন কষ্ট পেয়েছেন তার সন্তানও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। তাই এবার লটারী প্রক্রিয়ায় ভর্তি কার্যক্রমকে তিনি স্বাগত জানান। তিনি বিশ^াস করেন একজন দুর্বল শিক্ষার্থী যদি ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পায় তাহলে সে শিক্ষকদের সুযোগ্য দিক নির্দেশনা ও ভাল শিক্ষার্থীদের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে ভাল হয়ে উঠতে পারে।
এছাড়া জেলার বানিয়াচং এলআর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন জানান, এ বছর তাদের বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। করোনা মহামারির কারণে বিদ্যালয় থেকে কোন ভর্তি ফরম বিতরণ করা হবে না। ভর্তি কার্যক্রম চলবে অনলাইনের মাধ্যমে। পরে লটারীর মাধ্যমে বিজয়ী নির্বাচিত করে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।
বানিয়াচং সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্বাস উদ্দিন আহমেদ জানান, এ বছর বিদ্যালয়ে লটারী প্রক্রিয়ায় ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। এ বছর ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। অন্যান্য শ্রেণিতে কতজন ভর্তি করা হবে তা উপজেলায় মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
মাধবপুর গোবিন্দপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নুরুল ইসলাম জানান, তাদের স্কুলে অন্যান্য বছর ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হতো। এ বছর এখনো এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। আজ স্কুলে এ ব্যাপারে সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ভর্তি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ভর্তি প্রক্রিয়া ঃ সারা দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। আগামী ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন নেওয়া হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাজমুল হক খান সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। মাউশির ওয়েবসাইটে (www.dshe.gov.bd) ভর্তির বিজ্ঞপ্তিটি জারি করা হয়েছে। শুধু অনলাইনে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত টেলিটকের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে (https://gsa. teletalk.com.bd) আবেদন করা যাবে। ৩০ ডিসেম্বর অনলাইনে লটারির মাধ্যমে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে।