যিনি দলীয় মনোনয়ন পাবেন তাঁর পক্ষে কাজ করার শপথ নিলেন মনোনয়ন প্রত্যাশী সকলেই ॥ অপপ্রচারকারীদের কঠোর সমালোচনা করলেন এমপি আবু জাহির

মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভা গতকাল সন্ধ্যায় শহরের টাউন হলে অনুষ্ঠিত হয়। পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটুর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোঃ আলমগীর চৌধুরী। ওয়ার্কিং কমিটির সভায় হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে যারা নির্বাচন করতে আগ্রহী এবং দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী তাদের নাম আহবান করা হয় এবং প্রত্যেক প্রার্থীকে দাঁড়িয়ে নিজের পরিচয় এবং রাজনৈতিক পরিচয় দিতে আহবান জানানো হয়। সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ১০ জন তাদের আগ্রহ ব্যক্ত করে নিজের ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক পরিচয় ও কর্মকান্ড তুলে ধরেন। পরে একজন তার নাম প্রত্যাহার করে নেন। যারা হবিগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তাঁরা হলেন পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হবিগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান মেয়র মোঃ মিজানুর রহমান মিজান, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু, জেলা যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি সৈয়দ কামরুল হাসান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মর্তুজ আলী, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষকলীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ নূরুল আমিন ওসমান, পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য শঙ্খ শুভ্র রায়, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লন্ডন প্রবাসী মোঃ নূর উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল ও পৌর আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক শেখ তারেক উদ্দিন সুমন। মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েও পরে নাম প্রত্যাহার করে নেন বশিরুল আলম কাউছার। এদিকে মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নামের তালিকায় স্বাক্ষর করে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জেলা কমিটির কাছে প্রেরণ করেন। জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এই তালিকায় স্বাক্ষর করে আজ শুক্রবার আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রেরণ করবেন। যদিও তালিকা প্রেরণে পৌর কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ও জেলা কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ ৬ জনের সাক্ষর লাগে। কিন্তু হবিগঞ্জ পৌর কমিটি উপজেলা কমিটির মর্যাদাপ্রাপ্ত হওয়ায় উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর লাগবে না বলে সভায় জানান এমপি আবু জাহির।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির বলেন, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র ও সংবিধান অনুসরণ করে প্যানেল তৈরী করে পৌর মেয়র পদে আগ্রহীদের তালিকা পৌর কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ও জেলা কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষর করে তা কেন্দ্রে প্রেরণ করবেন। এখানে টাকা খেয়ে কেউ মনোনয়ন দেয়ার সুযোগ নেই। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দলীয় সভানেত্রী মনোনয়ন দিয়ে থাকেন। কিন্তু হবিগঞ্জ পৌরসভার বিগত উপনির্বাচনে কিছু কুচক্রি মহল আমার নামে অপপ্রচার করে আমি নাকি মোটা অংকের টাকা নিয়ে মিজানুর রহমান মিজানের দলীয় মনোনয়ন চুড়ান্ত করেছি। ওয়ার্কিং কমিটির সভায় তিনি এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনের কসম খেয়ে বলেন, আমি কোন টাকা নেইনি। যারা এসব অপপ্রচার করেছে তারা জারজ সন্তান। সভায় তিনি প্রকাশ্যে এ ব্যাপারে কথা বলতে মেয়র মিজানুর রহমানকে আহবান জানালে মেয়র মিজান দাঁড়িয়ে বলেন মনোনয়ন পেতে তিনি এমপি আবু জাহিরকে কোন টাকা দেননি।
সভায় এমপি আবু জাহির আরও বলেন, আমি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে বলেছিলাম স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হলে দলে বিভক্তি সৃষ্টি হবে। আর এর প্রভাব পড়বে কেন্দ্রীয় নির্বাচনে। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ দলীয় প্রতীকেই স্থানীয় নির্বাচন সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নেন। তিনি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশ্যে বলেন, রাস্তাঘাটে ব্যানার ফেস্টুন লাগিয়ে নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে ঘুরে বেড়ালে চলবে না। এখানে এসে দাঁড়িয়ে কথা বলতে হবে। নিজের আগ্রহ প্রকাশ করতে হবে। নিজের রাজনৈতিক পরিচয় দিতে হবে। আমাদের কাজ প্যানেল তৈরী করে কেন্দ্রে প্রেরণ করা। এখানে অবৈধ বাণিজ্যের কোন সুযোগ নেই। দলীয় মনোনয়ন পেতে আগ্রহী সবাইকে শপথ নিতে হবে আমরা নৌকা পাইলেও আছি না পাইলেও নৌকার পক্ষে আছি। অঙ্গীকার করতে হবে শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষে আমরা কাজ করবো।
এ সময় এমপি আবু জাহির প্রার্থীদের দাঁড়িয়ে নিজের আগ্রহ প্রকাশ, রাজনৈতিক পরিচয় ও শপথ পাঠের আহবান জানান। তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী সকলেই একে একে দাঁড়িয়ে নিজের আগ্রহ প্রকাশ করে রাজনৈতিক পরিচয় তুলে ধরেন এবং দলীয় মনোনয়ন না পেলেও শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন তাকে বিজয়ী করতে তার পক্ষে কাজ করবেন বলে অঙ্গীকার করেন।
এমপি আবু জাহির বলেন, পৌর আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় যারা আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তাদের তালিকা করা হয়েছে। সকল আবেদন যাচাই-বাছাই করে নিয়ম অনুযায়ী শুক্রবার ঢাকায় প্রেরণ করা হবে। এই তালিকার বাইরে অসদুপায় অবলম্বন করে কেউ মনোনয়ন পাওয়ার সুযোগ নেই।
এ ব্যাপারে সভায় উপস্থিত হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোঃ মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি বিগত উপনির্বাচনে পৌরবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হই। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর স্বল্প সময়ের মাঝে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড করতে। দৃশ্যমান উন্নয়ন কর্মকান্ড সম্পন্ন করতে আমাকে পৌরবাসী সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন। তাই আবারো মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে আমি আগ্রহ প্রকাশ করেছি। আমার বিশ্বাস আমার কর্মের মূল্যায়ন করা হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ হবিগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ আমার কর্মের মূল্যায়ন করবেন।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মেয়র প্রার্থী মোঃ নূরুল আমিন ওসমান বলেন, আমি আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেতে আগ্রহ প্রকাশ করে পৌর আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির কাছে আবেদন দিয়েছি। ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে আমার রাজনৈতিক জীবন শুরু করি। অদ্যাবধি আওয়ামী লীগের আদর্শ অনুসরণ করে কৃষকলীগের মাধ্যমে দলকে উজ্জীবিত করে যাচ্ছি। আমার বিশ্বাস দল আমাকে মূল্যায়ন করবে। তিনি আরও জানান, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেতে আগ্রহ প্রকাশকারীদের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় শপথ পাঠ করানো হয়েছে যারাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান, শেখ হাসিনা যাকে মনোনীত করবেন সকলে মিলে তাকে বিজয়ী করতে তার পক্ষে কাজ করবেন। কেউ দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধাচারণ করবেন না।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি সৈয়দ কামরুল হাসান বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছি। দলের দুঃসময়ে পাশে ছিলাম আজও আছি। আমার অতীত কোন খারাপ রেকর্ড নেই। তাই আমি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে আগ্রহ প্রকাশ করে আবেদন করেছি। আমার বিশ্বাস দল আমাকে মূল্যায়ন করবে। তিনি বলেন, সভায় প্রার্থী হতে আগ্রহ প্রকাশকারী সবাইকে শপথ পাঠ করানো হয়েছে। সবাই শপথ করে বলেছেন দলীয় সভানেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন সবাই মিলে তাকে বিজয়ী করতে তার পক্ষে কাজ করবেন।
পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য শঙ্খ শুভ্র রায় দৈনিক হবিগঞ্জের মুখকে বলেন, তিনি দলীয় মনোনয়ন পেতে আগ্রহ প্রকাশ করে আবেদন করেছেন। দল তাকে মূল্যায়ন করে দলীয় মনোনয়ন দিলে তিনি সকলের সহযোগিতায় বিজয়ী হবেন। তবে দল তাকে মনোনয়ন না দিলে দলীয় সভানেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন তাকে বিজয়ী করতে কাজ করবেন বলে তিনি সভায় দাঁড়িয়ে শপথ নিয়েছেন।
পৌর আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক শেখ তারেক উদ্দিন সুমন বলেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী। তাই তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। দলের সুসময় দুঃসময় সকল সময়েই তিনি পাশে থেকেছেন। সিনিয়র নেতৃবৃন্দের দিক নির্দেশনা মতে মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। তাই আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পেতে আগ্রহ প্রকাশ করে আবেদন করেছেন। তাঁর বিশ্বাস দল তাকে মূল্যায়ন করবে। তিনিও সভায় দাঁড়িয়ে মাইকে শপথ নিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী যাকেই মনোনয়ন দেবেন তাকে বিজয়ী করতে কাজ করবেন।