আমার কাছে অভিযোগ রয়েছে, অনেক সরকারি কর্মকর্তা গাছ চুরির সাথে জড়িত। মাধবপুরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। অবৈধ বালু উত্তোলনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
জেলা প্রশাসক বললেন অবৈধভাবে সিলিকা বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান পরিচালনা করবো
এসএম সুরুজ আলী ॥ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী বলেছেন, যেভাবে বন উজার হয়েছে তা আর মেনে নেয়া যায় না। যে বনের গাছে হাত দিবে তার কালো হাত ভেঙ্গে দিতে হবে। যারা নির্বিচারে গাছ ও বন উজার করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গাছ চুরি একটি সামাজিক অপরাধ। এই গাছ চুরির ফলে দেশ এবং সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অতীতে গাছ চুরির বিষয়ে আদালত কঠোর ভূমিকা পালন করে। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। সামাজিকভাবে আন্দোলন গড়ে তুলে গাছ চুরি ঠেকাতে হবে। আমার কাছে অভিযোগ রয়েছে, অনেক সরকারি কর্মকর্তা গাছ চুরির সাথে জড়িত রয়েছেন। যদি এর প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। নার্সারী যারা করেন তারা গাছ সাপ্লাই দিবেন, কোন অফিসার গাছ সাপ্লাই দিতে পারবে না। তিনি বিচার বিভাগের উদ্দেশ্যে বলেন, গাছ চোরদের ধরা হলে তাদের যেন সঠিক বিচারের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী সাজা প্রদান করা হয়।
সোমবার দুপুরে হবিগঞ্জ নিমতলা প্রাঙ্গণে বৃক্ষ রোপন অভিযান এবং জেলা বৃক্ষ ও ফলদ বৃক্ষ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন। মন্ত্রী আরও বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার রেমা, কালেঙ্গা, রঘুনাথ, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান এবং অন্যান্য বনাঞ্চল রয়েছে। সেগুলোতে কেউ হাত দিলে তাদের কালো হাতে ভেঙ্গে দেয়া হবে। তিনি বিশে^র সবচেয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য্য স্থান হলো সুন্দরবন। সুন্দরবনের পরেই আমাদের হবিগঞ্জের বনাঞ্চল সুন্দর। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর আমাদের হবিগঞ্জ। বিধাতা যেন আপন হাতে তৈরি করেছেন। এখানে নদী খাল, বিল হাওর রয়েছে, যাদের সৌন্দর্য্যে কোন শেষ নেই। আমরা পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এগুলোর উন্নয়নে প্রকল্প বরাদ্দ দেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, হবিগঞ্জের বনাঞ্চলগুলো প্রকৃতি টিকিয়ে রাখছে। প্রকৃতি যাতে ধ্বংস না হয়, মানুষ যাতে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারেন সেদিকে সকলকে নজর রাখবে হবে। তিনি আরো বলেন, নির্বিচারে বন উজারের কারণে সারা পৃথিবীতে জলাবায়ুর পরিবর্তন হয়েছে। এর ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রাও বেড়ে গেছে। এই দুর্যোগ থেকে বাঁচতে বৃক্ষ রোপনকে সামাজিক আন্দোলনে রূপান্তরের বিকল্প নেই। প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, মাধবপুরে অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশ যেমন ধ্বংস হচ্ছে। বালু উত্তোলনের কারণে সুরমা ব্রীজ দুর্বল হয়ে গেছে। তিনি জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে অবৈধ বালু উত্তোলনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই বালু উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাবে। এতে এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে। প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, দেশের পরিবেশ সুরক্ষায় প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। তিনি ৭২ সালে রেসকোর্স ময়দানে ঘোড় দৌঁড় বন্ধ করে গাছ লাগিয়েছিলেন। তার হাতেই সূচনা হয়েছিল উপকুলীয় বনায়ন। আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হলেন পরিবেশ সুরক্ষার আধুনিক রূপকার। নতুন প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে হলে বনায়নের কোন বিকল্প নেই। তিনি অক্সিজেন পেতে প্রত্যেকের বাড়িতে গাছ লাগানোর আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশে ইকো ট্যুরিজম এর মাস্টার প্লান তৈরির কাজ চলছে। সকলের অংশগ্রহণে আমরা পরিবেশ সুরক্ষা করতে চাই। হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন হবিগঞ্জ-২ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম সাজ্জাদ হোসেন ও হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান মিজান। বক্তৃতা করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক অমিতাভ পরাগ তালুকদার, জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক তমিজ উদ্দিন খান, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান শহীদ উদ্দিন চৌধুরী ও সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট আকবর হোসেন জিতু, হবিগঞ্জের উপ-বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল-মামুন।
মন্ত্রী এর আগে একটি র্যালিতে অংশ নেন এবং মেলার স্টলগুলো পরিদর্শন করেন। তিনি মেলা প্রাঙ্গনে একটি পলাশ গাছের চারা রোপন করেন।
কো ম্যানেজম্যান্ট কমিটি, রেমা-কালেঙ্গা বণ্যপ্রাণী অভয়ারন্য সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বন বিভাগের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বৃক্ষ মেলায় ফলজ, বনজ্য, ঔষধীসহ ২৫টি স্টল অংশ গ্রহণ করছে। মেলা চলবে ৭দিন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান বলেন, রেমা, কালেঙ্গা যে এতা সুন্দর বনাঞ্চল আমার জানা ছিল না। আমাদের বনাঞ্চলগুলোকে রক্ষা করতে হবে। বন উজার বন্ধ করতে হবে। গাছ চুরির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি নিজেদের আগামী প্রজন্মকে রক্ষার জন্য বাসা-বাড়িতে গাছ লাগাতে হবে। একটি গাছ আপনাদের পরিবারে যেমন অক্সিজেনের অভাব পূরণ করতে পারে তেমনি জ¦ালানীর প্রয়োজনও মেটাতে পারে। তাই গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান।
জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ বলেন, জেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনের কারণে উন্নয়ন প্রকল্প ব্রীজ, কালভার্ট রাস্তাঘাট ভেঙ্গে যাচ্ছে। আমরা বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করে বালু উত্তোলন বন্ধ করলে বালু উত্তোলনকারীরা আবার উত্তোলন শুরু করেন। আমরা এখন অভিযান পরিচালনা করে চা বাগান, খাল, রাস্তার পাশ থেকে অবৈধভাবে সিলিকা বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য অভিযান পরিচালনা করবো।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বলেন, বৃক্ষ হলো আমাদের প্রকৃতির ফসল। বৃক্ষ রক্ষায় সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। বৃক্ষ নিধন রক্ষায় আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগিতা করার প্রয়োজন আমরা ততটুকু সহযোগিতা করবো। তিনি বলেন আমাদের সমাজ জীবন ও পরিবেশকে বাঁচাতে হলে বৃক্ষ রোপন প্রয়োজন। এদিকে গতকাল উদ্বোধনের পর থেকেই মেলায় দর্শনার্থীসহ ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। অনেক ক্রেতা মেলা থেকে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ক্রয় করেছেন।