এসএম সুরুজ আলী ॥ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী বলেছেন, আড়াইশ’ শয্যা হবিগঞ্জ আধুনিক হাসপাতালে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকার কারণে ডেঙ্গু রোগী আসলে কোন পরীক্ষা বা চিকিৎসার সুযোগ না থাকায় রোগীদেরকে রেফার করা হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত কোন রোগীকে যাতে রেফার করতে না হয়, এ জন্য যন্ত্রপাতি আনার ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, হাসপাতালের ডাক্তার সংকট নিরসনসহ সকল সমস্যা সমাধানের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করবো। ইনশাল্লাহ হাসপাতালে আর কোন সমস্যা থাকবে না। মন্ত্রী বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য হাসপাতালের অধিকাংশ চিকিৎসক বাইরে ক্লিনিকে প্র্যাকটিসে ব্যস্ত থাকেন। তাদেরকে বদলী করা হলেও তারা এই প্র্যাকটিসের জন্য বদলী ঠেকানোর চেষ্টা করেন। গতকাল সোমবার হাসপাতালের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এরপূর্বে প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তৃতা করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা (বিপিএম-পিপিএম সেবা), জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ নুরুল ইসলাম, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ রথীন্দ্র চন্দ্র দেব, হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান মিজান, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি হারুনুর রশিদ চৌধুরী, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডাঃ নাসিমা খানম ইভা, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সালেহ উদ্দিন আহমেদ, প্রচার সম্পাদক অনুপ কুমার দেব মনা, মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী, জেলা মহিলা লীগ সভাপতি জমিলা বেগম।
সভার শুরুতে প্রতিমন্ত্রী হাসপাতাল পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ রথীন্দ্র চন্দ্র দেবকে বলেন হাসপাতালের কোন সিটে বালিশ নেই। বালিশের ব্যবস্থা করতে হবে। সাথে সাথে তত্ত্বাবধায়ক বালিশ আনার নির্দেশ দেন। এছাড়াও প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমার কাছে অভিযোগ রয়েছে, সিটের উপরের কাপড়গুলো ধোয়ার সময় সাবান বা পাউডার ব্যবহার করা হয় না। এ সময় তত্ত্বাবধায়ক প্রতিমন্ত্রীকে বলেন, এ বিষয়টি তিনি অবগত নন। পরে ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা হাসপাতালের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক অনুপ কুমার দেব মনা বলেন, প্রায় সময় হাসপাতালের ইমার্জেন্সী বিভাগের সামনের প্রধান ফটকে যানজট লেগে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও হাসপাতালে বাইরের ড্রেনগুলোতে ময়লা ফেলা হচ্ছে। এসব ময়লা থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে। এছাড়াও হাসপাতালের সামনে ইট বিক্রি করা হচ্ছে। এগুলো সরানোর জন্য তিনি পরামর্শ দেন।
হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, হাসপাতাল থেকে দালাল কিছুটা কমেছে, তবে অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালের কিছু অসাধু স্টাফ নিজেরা দালালি করছে। এছাড়াও অনেকে সময় দেখা যায়, রোগীরা ঔষধ আনতে গেলে হাসপাতালের সামনে ফার্মেসীর মালিক পক্ষের লোকজন এগিয়ে আসেন। অনেক সময় কার ফার্মেসীতে রোগীকে আগে নিবেন এ নিয়ে ফার্মেসী মালিকদের মধ্যে ঝগড়া লেগে যায়। সাংবাদিক হারুনুর রশিদ চৌধুরীর বক্তব্যের প্রতি সমর্থন করেন অনুপ কুমার দেব মনা। এ সময় মন্ত্রী বলেন- যেসব স্টাফ দালালি করে তাদের তালিকা তৈরি করে বদলী করা হবে। জেলা মহিলালীগের সভাপতি জমিলা বেগম বলেন, হাসপাতালের বর্হিবিভাগ থেকে সাধারণ গরীব রোগীরা এসে ঔষধ নেয়ার ৫টাকা দিয়ে টিকেট নেন। কিন্তু তাদের ঔষধ দেয়া হয় না। তাদের বলা হয়, বাহির থেকে ঔষধ নিতে। এখানে গরীব লোকজন চিকিৎসা নিতে আসেন। যখন ঔষধ পান তখন তারা অনেকটা বিপাকে পড়েন। হাসপাতালের ঔষধ বাড়াতে হবে। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী হবিগঞ্জ হাসপাতালের শায়েস্তানগরস্থ পুরাতন পোস্টমর্টেম ঘরের (চিড়াখানা) পরিত্যক্ত জমির সীমানা নির্ধারণ করাসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের বক্তব্য শোনার পর প্রতিমন্ত্রী বলেন, হাসপাতালের রোগীদের সঠিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। কোন রোগী যাতে অপ-চিকিৎসার শিকার না হন, সেদিকে চিকিৎসকদের লক্ষ্য রাখতে হবে। হাসপাতালে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। তিনি আগামী মাসিক সভায় শায়েস্তানগরস্থ পুরাতন পোস্টমর্টেম ঘরের (চিড়াখানা) স্থান সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন বলে জানান। প্রতিমন্ত্রী হাসপাতালের পাশে অবৈধভাবে ইট বালু বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দেন।
এছাড়া প্রতিমন্ত্রী হাসপাতালের কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য মুক্তিযোদ্ধা হায়দর আলীকে আহ্বায়ক করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দেন। কমিটির সদস্যরা হলেন- হাসপাতালের আরএমও ডা: শামীমা আক্তার, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি হারুনুর রশিদ চৌধুরী ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক অনুপ কুমার দেব মনা। সভায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বলেন, আগে হাসপাতাল থেকে সার্টিফিকেট দিতে দেরী করা হতো। এখন গতি বেড়েছে। তিনি ময়না তদন্তের রিপোর্টসহ অন্যান্য রিপোর্টগুলো দ্রুত দেয়ার জন্য আহ্বান জানান। পুলিশের পক্ষ থেকে সকল ধরণের সহযোগিতা করার নিশ্চয়তা দেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা। সভা শুরুর আগে মন্ত্রী হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন এবং রোগীদের সাথে কথা বলেন। পরে তিনি মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহের উদ্বোধন করেন।
আড়াইশ’ শয্যা হবিগঞ্জ হাসপাতালের কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com