জলাবদ্ধতা থেকে শহরবাসীকে রক্ষা করতে জেলা প্রশাসককে নিয়ে মাঠে নেমেছেন মেয়র মিজান

এসএম সুরুজ আলী ॥ দুই দিনের বর্ষণে হবিগঞ্জ শহরের অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে লোকজনকে হাঁটু পানি ভেঙ্গে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পানিবন্দী লোকজন। বিশেষ করে শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসা-বাড়ির ভিতরে পানি ঢুকে যাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অনেক পরিবার। এ অবস্থায় তারা জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবি জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে শহরের চৌধুরী বাজার কাঁচামাল হাটা, চৌধুরী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, সার্কিট হাউজ, জেলা প্রশাসকের বাসভবন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, হকার মার্কেট, নোয়াহাটি, ঘাটিয়া বাজার, পুরান বাজার, শায়েস্তাগঞ্জ, পইল রোড, উত্তর শ্যামলী, দক্ষিণ শ্যামলী, গোসাইপুরসহ শহরের অধিকাংশ এলাকার রাস্তায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে শুক্রবার চৌধুরী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে অসংখ্য মুসল্লী হাঁটু পানি ভেঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকার মুসল্লীগণ বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সম্মুখীন হন। চৌধুরী বাজার কাঁচামাল হাটাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাঁচা বাজার। এ বাজারের পান হাটা দিয়ে প্রবেশ করলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়া পঁচা, কাঁদা পানি দিয়ে হাটতে হয়। এখানে জলাবদ্ধতার পানির সাথে কাঁচামালের বিভিন্ন জিনিস পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ওই দুর্গন্ধ ও পচা পানি সব সময় ব্যবসায়ীদের চলাচলের কারণে অনেকেই চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জলাবদ্ধতা থেকে নিরসনের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।
শুটকি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়া জানান, বাজারের ভিতরের রাস্তাগুলো শুটকি হাটার চেয়ে প্রায় দেড় ফুট উঁচু। ফলে একটু বৃষ্টি হলেই শুটকি বাজার পানিতে তলিয়ে যায়। পাশাপাশি ড্রেনগুলোও ময়লা আবর্জনায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি সহজে কাটে না। তিনি আরো জানান, বার বার পৌর কর্তৃপক্ষকে মৌখিক এবং লিখিতভাবে জানানো হলেও শুটকি হাটা সংস্কারের ব্যাপারে পৌরসভা কোন ভূমিকা রাখছে না। তিনি বলেন, তারা নিয়মিত পৌরসভার কর দিয়ে যাচ্ছেন, অথচ পৌর কর্তৃপক্ষের কোন সেবা তারা পাচ্ছেন না। এমনকি তিনি নিজ খরচে তার গোডাউনের সামনের রাস্তা পরিস্কার করিয়েছেন। শুটকি হাটার সকলের দাবি পৌর কর্তৃপক্ষ যেন দ্রুত শুটকি হাটার শেড উঁচু করে তাদের ব্যবসা আরো প্রসারিত করার ব্যবস্থা করে দেন। ইয়াছিন মিয়া ছাড়াও শুটকি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল আহাদ, ব্যবসায়ী মনসুর মিয়া, কবির মিয়া, জসিম উদ্দিন, বোরহান উদ্দিনসহ সবার একটাই দাবি পৌর কর্তৃপক্ষ যেন তাদের দিকে নজর দেন।
কাঁচামাল হাটার ব্যবসায়ী রইছ আলী জানান, পান হাটার ড্রেনটি ময়লা আবর্জনায় ভরে যাওয়ার কারণে একটু বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এই জলাবদ্ধতার জমে থাকা পানি দিয়ে হাঁটাহাটি করার ফলে অনেকের পায়ের তলা পচে যাচ্ছে। আমরা এখানের জলাবদ্ধতা দুরীকরণের জন্য নবনির্বাচিত মেয়রের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।
শহরের দক্ষিণ শ্যামলী এলাকার বাসিন্দা শিব্বির ফরহাদ জানান, এলাকার ড্রেনেজ সমস্যা দীর্ঘদিনের। একটু বৃষ্টি হলেই এলাকাবাসীকে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। আমরা আশা করি নবনির্বাচিত মেয়র দায়িত্ব নেয়ার পরই আমাদের এলাকার ড্রেন সংস্কারের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসন করবেন। এদিকে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র হিসেবে শপথ নেয়ার একদিন পরই জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য রাস্তায় নেমেছেন হবিগঞ্জ পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র মিজানুর রহমান মিজান। বৃষ্টি উপেক্ষা করে হবিগঞ্জ পৌরসভারকে জলাবদ্ধতা মুক্ত করে পরিস্কার, পরিচ্ছন্ন ও দৃষ্টি নান্দনিক পৌরসভার হিসেবে গড়ে তুলতে রাস্তায় নামেছেন তিনি। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে তিনি জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদের সহযোগিতা চেয়েছেন। মেয়র মিজানের আহবানে সাড়া দিয়ে শুক্রবার বৃষ্টির মধ্যে মাথায় ছাতা ধরে রাস্তায় নামেন জেলা প্রশাসক। শহরের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসক ও মেয়র হবিগঞ্জ পৌরসভার জলাবদ্ধতার কয়েকটি স্থান চিহ্নিত করেন। কিভাবে সেখানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, সে বিষয়গুলো তিনি নিশ্চিত হন। এ সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি পরিকল্পনা গ্রহন করেন। ওই স্থানগুলোতে শ্রীঘ্রই কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র মিজানুর রহমান মিজান।
এ ব্যাপারে নবনির্বাচিত মেয়র মিজানুর রহমান জানান, হবিগঞ্জ পৌরবাসী অনেক প্রত্যাশা নিয়ে আমাকে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। পৌরবাসীর সেই প্রত্যাশা পূরণ করাই আমার সর্বপ্রথম টার্গেট। আমি বাসায় বসে থাকবো, আর আমার পৌরবাসী দুর্ভোগে থাকবেন সেটা হতে পারে না। শুক্রবার জুম্মার নামাজ আদায় করে জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদকে সাথে নিয়ে সার্কিট হাউজ, জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামন ও পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কিভাবে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় তা নিশ্চিত হই। জেলা প্রশাসকের বাসভবন নিচু জায়গা। আর সেখানে পানি ভিতরে ঢুকার স্টেপ রয়েছে। যে কারণে বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। অপরদিকে সার্কিট হাউজের সামনে কিভাবে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় তা নিশ্চিত হয়েছি। সার্কিট হাউজের সড়কটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। ওই স্থানে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনা করা হবে। আশা করি শ্রীঘ্রই এর সমাধান হবে। জেলা প্রশাসকের বাসভবনে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য টেন্ডার হয়েছে। শ্রীঘ্রই ঠিকাদার সেখানে কাজ শুরু করবেন বলে তিনি আশাবাদী। পৌর মেয়র বলেন, থানার সামনের মুক্তিযোদ্ধা চত্ত্বর থেকে লাখাই সড়কের শুরু পর্যন্ত রাস্তাটিকে নান্দনিক হিসেবে গড়ে তুলতে ওই রাস্তার দু’পাশের দোকানগুলোর লিজ বাতিল করে দোকানগুলো উচ্ছেদ করা হবে। ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জেলা প্রশাসন। সেখানে রাস্তা বড় করে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করার জন্য ফুলের গাছ লাগানো হবে। যা পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
এছাড়াও পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করতে হকার মার্কেটসহ যে সব দোকান রয়েছে সেগুলো উচ্ছেদ করে সেখানে পুকুর করা হবে। ওই পুকুর পাড়ে লোকজন বসে অবসর সময় কাটাতে পারবেন। তিনি বলেন, এখানকার ব্যবসায়ীদের কিভাবে পুনর্বাসন করা যায়, এ জন্য পৌর কর্তৃপক্ষকে আরেকটি স্থান নিশ্চিতের জন্য পরিকল্পনা করছেন। মেয়র মিজানুর রহমান মিজান জানান, শহরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করা শুধু পৌরসভার কাজ হলেও তা রক্ষার জন্য সকলকে সহযোগিতা করতে হবে। পৌরসভার সব এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে আমার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই মোতাবেক আমি কাজ করে যাবো। এ জন্য তিনি সাংবাদিকসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। শহরের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনকালে মেয়রের সাথে ছিলেন হবিগঞ্জ টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি রাসেল চৌধুরী। এছাড়াও মেয়র শহরের বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে গিয়ে জলাবদ্ধতার চিত্র দেখে আসেন। বাসা-বাড়ির জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানে মেয়র আন্তরিকভাবে কাজ করবেন বলে জানান।