এসএম সুরুজ আলী ॥ কুদ্দুছ আলীর বয়স প্রায় ৬০ বছর। নিজের তেমন জমিজমা না থাকলেও অন্যের জমি হাল চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন কুদ্দুছ আলী। একটা সময়ে তার চোখের সমস্যা হওয়ায় তিনি পৃথিবীর সব কিছু ভালভাবে দেখতে পারেন না। অর্থের অভাবে চোখের চিকিৎসাও করাতে পারেননি কুদ্দুছ আলী। এ অবস্থায় কুদুছ আলী ও স্ত্রী জাহানারা খাতুনের পরিবার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগার করা যেন মাথায় এক বিশাল বোঝা। চোখের অন্ধকার চিহ্ন অবস্থার কারণে নিজে পৃথিবীর সব কিছু দেখা থেকে বঞ্চিত। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া না করালে তারা অন্ধকারের মধ্যে জীবন যাপন করবে এমন চিন্তা কুদ্দুছ আলী ও তার স্ত্রী জাহানারা খাতুন সব সময় করতেন। তাই নিজেদের সব সুখ বিসর্জন দিয়ে কুদ্দুছ আলী ও জাহানারা খাতুন তার সন্তানদের স্কুলে লেখাপড়া করান। ছেলে সুমন আহমেদকে এসএসসি পাস করান। সুমন আহমেদের এসএসসি লেখাপড়ার খরচ জোগার করতে কুদ্দুছ আলীকে মানুষের জমিতে কাজ
করতে হয়েছে। আত্মীয় স্বজনসহ এলাকার লোকজনের সহযোগিতা নিয়ে সুমন আহমেদের প্রাইভেটের বেতন দিতে হয়েছে কুদ্দুছ আলীর। এর মধ্যে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকার মাধ্যমে পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে নিয়োগের সংবাদ জানতে পারেন সুমন আহমেদ। এ বিষয়টি তার বাবা কুদ্দুছ আলীকে অবগত করেন। কুদ্দুছ আলী চিন্তার মধ্যে পড়ে যান পুলিশের চাকুরী মানে সরকারী চাকুরী। এতো টাকার ব্যবস্থা কিভাবে করবেন। এ অবস্থায় অনেকের সাথে যোগাযোগ করেন টাকার জন্য। কিন্তু তার ছেলে সুমন স্থানীয় পত্রিকায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যার (বিপিএম-পিপিএম) বিজ্ঞপ্তি দেখে আশ^স্ত হয়ে তার বাবাকে জানান, কনস্টেবল নিয়োগে কোন টাকা লাগবে না। বাবা তুমি শুধু দোয়া করবে ইনশাআল্লাহ আমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবো। এরপর সুমন ১শ’ টাকা খরচ করে সাধারণ কোটায় কনস্টেবল পদে চাকুরীর জন্য আবেদন করেন। শারীরিকভাবে বাছাই পর্বে তিনি উত্তীর্ণ হন। লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতকার্য হন। মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১ম স্থান অর্জন করেন সুমন। এ খবর সুমনের বাবার কাছে পৌছলে তিনি খুশিতে আত্মহারা হয়ে যান। ছেলের জন্য মহান আল্লাহতালার কাছে দোয়া করেন তার যেন চাকুরীটা হয়ে যায়। সবশেষ রবিবার যখন চুড়ান্তভাবে মনোনীত হয়ে হবিগঞ্জ পুলিশ লাইনে সুমন তার বাবা কুদ্দুছ আলীকে নিয়ে আসেন তখন কুদ্দুছ আলীর বিশ^াস হয়। এ উপলক্ষে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা (বিপিএম-পিপিএম) প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার সুমনের বাবা কুদ্দুছ আলীকে সাংবাদিকদের সমানে হাজির করেন। এ সময় কুদ্দুছ কান্নাজনিত কন্ঠে তার জীবনের করুণ অবস্থা তুলে ধরেন। তার করুণ অবস্থার কথা শোনে পুলিশ সুপারসহ উপস্থিত সাংবাদিকদের মধ্যে এক হৃদয়গ্রাহী পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশ সুপারসহ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যারা ছিলেন তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন এবং তাদের মঙ্গল কামনায় আল্লাহ তায়লার কাছে দোয়া করেন। নিয়োগপ্রাপ্ত সুমন আহমেদ জানান, আমার বাবা, মা আমাকে অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করিয়েছেন। বাবা-মায়ের দোয়ায় আমি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল অর্জন করেছি। পুলিশের নিয়োগেও ভাল ফলাফল অর্জন করায় মেধার ভিত্তিতে আমি চুড়ান্তভাবে মনোনীত হয়েছি। এজন্য নিয়োগ পরীক্ষার সাথে জড়িত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।