ছালেক মিয়ার দাবি তাকে সেচ প্রকল্প চালাতে দেয়া হচ্ছে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিয়মিত বিল পরিশোধ না করায় সেচ প্রকল্পের বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। ফলে পতিত পড়ে আছে গুঙ্গিয়াজুড়ি হাওরের ৩ হাজার বিঘা জমি। আর এতে মাথায় হাত পড়েছে সাধারণ কৃষকদের। কর্ম হারিয়ে বেকার হয়ে আছেন ওই এলাকার হাজারো শ্রমিক।
জানা যায়, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী গুঙ্গিয়াজুড়ি হাওরে একটি বিশাল সেচ প্রকল্প রয়েছে। যা দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে গোবিন্দপুর গ্রামের জয়নাল আবেদীন ছালেক পরিচালনা করে আসছেন। প্রতি বছর তিনি জমিতে পানি সরবরাহ বাবদ কৃষকদের কাছ থেকে চার্জ আদায় করলেও বিদ্যুৎ বিল নিয়মিত পরিশোধ করেননি। ফলে ওই সেচ প্রকল্পের ১৩ লাখ টাকাসহ প্রায় ২১ লাখ টাকা বিদ্যুত বিল বকেয়া পড়ে। একের পর এক নোটিশ দেয়ার পরও তিনি বিদ্যুত বিল পরিশোধ না করায় সম্প্রতি পিডিবি’র কর্মকর্তারা বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। ফলে গুঙ্গিয়াজুড়ি হাওরের প্রায় ৩ হাজার বিঘা জমি অনাবাদি থাকার আশঙ্কা দেখা দেয়। পানির অভাবে এখনো চাষাবাদ করতে পারেননি ওই হাওরে থাকা জমির মালিকরা। শুধু তাই নয় এর ফলে রামপুর, গোবিন্দপুর, আওরা মজলিসপুর, লামাপইলসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের হাজারো কৃষক তাদের কর্ম হারিয়েছেন। বছর জুড়ে কি খাবেন, কিভাবে ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগাবেন এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে তারা। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও ভয়ে জয়নাল আবেদীনের ছালেকের বিরুদ্ধে মুখ খোলতে সাহস পাচ্ছেন না ভূক্তভোগিরা।
এদিকে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন হবিগঞ্জের উপ-পরিচালক ও হবিগঞ্জ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কৃষক জানান, জয়নাল আবেদীনের পক্ষের লোকজন তাকে বাঁচাতে বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়ঝাপ করছেন। ভূক্তভোগী কৃষকরা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান।
ভূক্তভোগীরা জানান, ছালেক মিয়া ও তার লোকজন প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলায় সাহস পায় না। আবার কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলতে চাইলেও মামলা মোকদ্দমার ভয়ে প্রতিবাদ করা থেকে সরে আসে।
অপরদিকে ছালেক মিয়ার দাবি, সেচ প্রকল্প এলাকায় যে ৫শ’ একর কৃষি জমি রয়েছে তন্মধ্যে এককভাবে তিনি অন্তত ৪০ একর বা ১২০ বিঘা কৃষি জমির মালিক। ফলে সেচ প্রকল্প বন্ধ থাকায় তিনিই বেশি ক্ষতির সম্মুখিন। তিনি অভিযোগ করেন, তাকে সেচ প্রকল্প চালাতে দেয়া হচ্ছে না। আর আপন ভাই শাহিন মিয়া আমেরিকা প্রবাসী। বহু নগদ টাকার মালিক হলেও তার কৃষি জমি নেই বললেই চলে। কৃষকরা জমি চাষাবাদ করতে না পারলে, তাকে কৃষি জমিতে সেচ প্রকল্প চালাতে না দিলে শাহিন মিয়ার কোনো ক্ষতি নেই। বরং কৃষকদের স্বর্বশান্ত করে তার কাছে সাহায্যের জন্য ধর্ণা দেয়ার কৌশল হিসাবে সে সেচ প্রকল্পে বাধা সৃষ্টি করছে। যারা মিডিয়াতে সাক্ষাতকার দিয়েছেন তাদের অনেকেরই এক বিঘা জমিও সেচ প্রকল্প এলাকায় নেই। আব্দুল খালেক ও শাহিন মিয়া যৌথভাবে গত ২০ বছর যাবত একটি সেচ প্রকল্প পরিচালনা করছেন। এ বছরই শাহিন মিয়া বিদ্যুত বিল বকেয়া রেখে ডিজেল চালিত মেশিন দিয়ে সেচ প্রকল্প করছেন। উদ্দেশ্যে হচ্ছে আমাদের ভাই আব্দুল খালেককে বিদ্যুতের বিল দিয়ে ফাঁসানো। উক্ত সেচ প্রকল্পে প্রায় ১শ’ একর জমি রয়েছে। একশ একরের মধ্যে শাহিন মিয়ার কোনো ব্যক্তিগত জমি নেই। ১শ’ একরের মধ্যে তার ১০ বিঘা, তার ভাই ইউপি চেয়ারম্যান আনু মিয়ার আড়াই বিঘা, মা হাজী সৈয়দা বেগম এর দেড় বিঘা, বোন আলেয়া বেগমের শ্বশুর প্রদত্ত ৩ বিঘা জমিতে চাষ করতে দেয়া হয়নি। তিনি শুধু ভাষা ভাষা সংবাদ নয়, তদন্ত করে সেচ প্রকল্প বন্ধের জন্য দায়ীদের আইনের কাঠগড়ায় দাড় করাতে সাংবাদিকদের প্রতি আহবান জানান।