মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবদান অনস্বীকার্য। যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। এই এগিয়ে যাওয়ার পেছনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবদান কোনভাবেই খাট করে দেখার নেই। বাংলার অনেক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড এখনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হাত ধরে টিকে রয়েছে। যদি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বাদ দিয়ে চিন্তা করা হয় তাহলে বাংলার অনেক সংস্কৃতি অচিরেই হারিয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ কালীবাড়ি কমিটির সহ-সভাপতি, রামকৃষ্ণ মিশন পরিচালনা কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক ও মহাপ্রভূ আখড়া কমিটির সভাপতি, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক অজিত কুমার পাল বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার ক্ষেত্রে সাম্প্রতিককালে বেশ প্রভাব তৈরী হয়েছে। কারণ প্রত্যেক দেশেই জাতীগত সংখ্যালঘুরা শিক্ষার উপর জোর দিয়ে থাকে এ কারণে যে, তারা জানে শিক্ষার কোন বিকল্প তাদের নেই। কারণ যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতেই তারা তাদের প্রয়োজনীয়তার কথা সমাজ ও রাষ্ট্রে উপস্থাপনা করতে চায়। সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। সংস্কৃতি অঙ্গনে আমাদের দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা এমনিতেই তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের জন্য সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত হয়ে যায়।
মূলধারার জনগোষ্ঠির সাথে শিক্ষা ও সংস্কৃতি ইস্যুতে সংখ্যালঘুদের অধিকার বিষয়ে অবস্থার পার্থক্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের শিক্ষা এবং সংস্কৃতিতে সুযোগ সৃষ্টি করে রাখলে রাষ্ট্রই তাতে উপকৃত হয়। বহু জায়গাতে দেখা যায়, যারা ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং আদিবাসী সম্প্রদায় থাকে তারাই দেশের মূল সংস্কৃতির ঐতিহ্য ধরে রাখে। যেমন আমরা বাংলাদেশী। আমাদের পহেলা বৈশাখ, নবান্ন, চৈত্র সংক্রান্তি, পিঠাপুলি উৎসব, ঘোড় দৌড়, মাছের মেলা, শ্রী কৃষ্ণের জন্মাষ্টমী, শারদীয় দুর্গোৎসব এ ধরণের বহু সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে আমাদের জাতিগত স্বত্ত্বা নিবিড়ভাবে জড়িত এবং এর মূল আমাদের অতীত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। আমাদের সকল জাতিগোষ্ঠীর সকল ধর্মের সকল নাগরিকের দায়িত্ব হচ্ছে আমরা যেন আমাদের যে কারোরই সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডকে কোন ধর্মীয় পরিমন্ডলে আবদ্ধ না করি। এতে সংস্কৃতি বাধাগ্রস্থ হয়। যা জাতির জন্য কখনো মঙ্গল বয়ে আনে না।
তিনি আরও বলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে শিক্ষার যে বিষয়টি জড়িত সেটি অতীতে রাষ্ট্র খুব গুরুত্বসহকারে বিবেচনা না করলেও বর্তমান সরকার বিষয়টিতে অতি গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। আমাদেরকে এই অবক্ষয়ের যুগে অন্যান্য শিক্ষার সাথে ধর্মীয় শিক্ষাকেও যতেষ্ট গুরুত্ব দেয়া উচিত। আমরা আশা করব যে কথাটি বার বার বলা হয় রাষ্ট্রে সবার সমান অধিকার সে বিষয়টি মুখে না বলে কর্মক্ষেত্রে যেন তার প্রভাব পড়ে। তাতে আস্থার সংকট অনেক কমে আসবে।
হবিগঞ্জ শহরের হেভেন টাচ্ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক নিহার রঞ্জন সরকার বলেন, হবিগঞ্জে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রভাব বেশ সমৃদ্ধ। হবিগঞ্জে এমন অনেক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড রয়েছে যেগুলো মূলত টিকে-ই রয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হাত ধরে। যার মধ্যে মনিপুরী সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঐতিহ্যবাহী মহা রাসলীলা অন্যতম। এটি শুধু হবিগঞ্জ নয় গোটা বৃহত্তর সিলেটের একটি অন্যতম উৎসব। প্রতি বছর পূর্ণিমা তিথিতে স্বাড়ম্বরে বর্ণময় শিল্পকলা সমৃদ্ধ এ উৎসব পালিত হয়ে থাকে যা আমাদের সংস্কৃতিকে বেশ সমৃদ্ধ করেছে। তাই কোনভাবেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংস্কৃতির প্রভাব খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। এটি করা হলে তা বরং আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াবে।
তিনি বলেন, যদিও দেশের কিছু এলাকায় কোন কোন ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে কিছু বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। তবে তা তেমন প্রভাব রাখে না। তবুও সংস্কৃতির বৃহত্তর স্বার্থে এ বৈষম্য থাকা ঠিক নয়।