গুণগত শিক্ষা অর্জনে শিক্ষার্থীদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশে আমরা বিদ্যালয় পর্যায়ে কিছু সমস্যা চিহ্নিত করি:

১। ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর হাজিরা খাতার সংখ্যার সাথে শ্রেণির উপস্থিতির সাথে বড় ধরনের গড়মিল। চেষ্টা করেও শিক্ষার্থী উপস্থিতি বাড়ানো যাচ্ছিল না।
২। উপস্থিত শিক্ষার্থীদের টিফিন পিরিয়ডে বিদ্যালয় ত্যাগের প্রবণতা।
৩। টিফিনের পরের পিরিয়ড সঠিক সময়ে শুরু করা এবং শিক্ষার্থী উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
৪। শেষ ঘন্টা পর্যন্ত শিক্ষার্থী উপস্থিতি ধরে রাখা।
৫। ছুটির পরে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলাসহ সহ পাঠক্রমিক কার্যাবলীর সাথে সম্পৃক্ত করা।
৬। শিক্ষার্থীদের অস্বাস্থ্যকর খাবার যেমন ঝালমুড়ি, ফুসকা, সিংগারা, সমুচা, আচার গ্রহণ থেকে বিরত রাখা।
৭। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে কো-এডুকেশন থাকায় টিফিন পিরিয়ডে একটা বড়ো সময় পেয়ে শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের বাইরে গিয়ে ইভটিজিং, যৌন হয়রানি এবং ছেলে মেয়ে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার সমস্যা থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ রাখা। এ জাতীয় সমস্যা উত্তরণ ঘটিয়ে বিদ্যালয়ে একটা শিক্ষা বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য আমরা নি¤েœাক্ত কার্যক্রম হাতে নিয়েছি ঃ
১। জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মিড ডে মিল বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ।
২। অভিভাবকদের নিয়ে মা সমাবেশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পুষ্টিকর খাবার এবং স্বাস্থ্য সচেতনতার উপর জোর দেয়া।
৩। শিক্ষার্থিদের ফাস্টফুড জাতীয় এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি খাবার থেকে বিরত রাখা।
৪। বিদ্যালয় শুরু হওয়ার পর থেকে ছুটি হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের বাইরে যেতে না দেয়া।
৫। সকল শিক্ষার্থীকে হাউস এবং প্রতিভা ও আগ্রহ অনুযায়ী ক্লাব ভিত্তিক তৎপরতার সাথে সম্পৃক্ত করা। সপ্তাহের যে কোন একদিন ক্লাবভিত্তিক কার্যক্রম হাউস ভিত্তিক প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা।
৬। বিদ্যালয়কে শুধু বই পড়ার যায়গা না বানিয়ে হাসি আনন্দ, নাচ গান, আবৃত্তি খাবার দাবার ইত্যাদির মাধ্যমে আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি করা। শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক এই ত্রিমাত্রিক সম্পর্কের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মানুষ গড়ার কাজটি সফল হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন রকম বিনোদনমূলক কর্মসূচির ব্যবস্থা করা। শিক্ষকদের দায়িত্ব দিয়ে তাদেরকে জবাবদিহীতার আওতায় নিয়ে আসা। মিড ডে মিল চালুর পর শিক্ষার্থীদের চাহিদার পরিবর্তন বদলাতে খাদ্যের গুণাবলি ও উপকারিতা বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে দেয়া। কোন প্রকার শাক সবজি ও মাছ মাংস দেহের কোন কোন উপকার করে তা বুঝিয়ে দেয়া। প্রতিদিনরে মেন্যুতে শাকসবজি খেতে অভ্যস্থ করা। তাদেরকে ক্লাস শুরুর আগে রান্না কাজেও সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে শেখার সুযোগ করে দেয়া। যাতে তারা রান্না কাজটিও শিখতে পারে। এর পর স্টুডেন্ট কেবিনেটের নেতৃত্বে খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা করা। খাবার শেষে নিজেরাই যেনো তাদের থালা-বাসন পরিস্কার করে তা শেখানো। এতেও তারা নিজেদের কাজ নিজেরা করতে শেখে।
প্রতিষ্ঠানে ৩ ভাবে মিড ডে মিল চালু করা যায় – ১. স্কুলে রান্না করা ২. বাড়ি থেকে মায়ের হাতের রান্না খাবার ৩. দাতা সংগ্রহ করে মিড ডে মিল ফান্ড গড়ে তোলার মাধ্যমে ফ্রী খাবারের ব্যবস্থা করা। মাত্র ১২টাকায় গরম ভাত বা গরম খিচুড়ি খাওয়ানো যায়।

লেখক: মোহাম্মদ রুহুল্লাহ
জেলা শিক্ষা অফিসার, হবিগঞ্জ।