সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ১৫তম শাহাদাত বার্ষিকী আজ

কিবরিয়া হত্যার সাথে যে বা যারা জড়িত তাদের বিচার মানুষ দেখতে পাবে ইনশাআল্লাহ ॥ এমপি আবু জাহির
এসএম সুরুজ আলী ॥ সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ১৫তম শাহাদাত বার্ষিকী আজ। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় কিবরিয়াসহ ৫ জন নিহত ও কমপক্ষে ৭০ জন আহত হয়েছিলেন।
দফায় দফায় তদন্তের বেড়াজালে আটকে থাকা এ হত্যাকান্ডের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে প্রায় ৪ বছর পূর্বে। কিন্তু সাক্ষী না আসা, আসামীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় ঠিকমতো আদালতে হাজির না হতে পারাসহ বিভিন্ন জটিলতায় বিচারকার্য এখন দীর্ঘসূত্রিতায় পড়েছে। অপরদিকে একই ঘটনায় দায়ের করা বিস্ফোরক মামলাটির চার্জশিট প্রায় ১ বছর পূর্বে দেয়া হলেও এখনও এটির চার্জ গঠন করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় অবিলম্বে এ হত্যাকান্ডের বিচার সম্পন্ন হবে বলে প্রত্যাশা করেন নিহতদের পরিবার ও আহতরা। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন এ সরকারের আমলেই কিবরিয়া হত্যাকান্ডের বিচার সম্পন্ন হবে। তবে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে ক্ষোভের অন্তঃ নেই শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়ার। এখনও এ ঘটনার তদন্ত নিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কিবরিয়া হত্যা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ অঙ্গ-সংগঠন ও কিবরিয়া ফাউন্ডেশন।
২০০৫ সালের এ দিনে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া। সভা শেষে ফেরার সময় দুর্বৃত্তদের গ্রেনেড হামলায় তিনি ও তার ভাতিজা শাহ মঞ্জুর হুদা, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলী প্রাণ হারান।
এতে আহত হন জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি এমপি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহিরসহ ৭০ জন। উক্ত ঘটনায় হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু দফায় দফায় তদন্তের বেড়াজালে আটকে থাকা লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডের বিচার শুরু হয়েছে প্রায় ৪ বছর পূর্বে। এখনও পর্যন্ত ১৭১ জন সাক্ষীর মাঝে মাত্র ৪৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভব হয়েছে। আর বিস্ফোরক মামলার চার্জশিট প্রায় এক বছর পূর্বে দেয়া হলেও নানা জটিলতায় এখনও আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় বিচারকার্যে দীর্ঘসূত্রিতার সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে হামলায় আহত হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির বলেন, উদীচীর সভায় বোমা হামলার ঘটনায় ১৯ বছর পর এসে বিচার হয়েছে। এখানে ১৫ বছর না ১৯ বছর সেটি কোন বিষয় নয়। অপরাধ যারা করে তারা কোনদিন রেহাই পায় না। কিবরিয়া হত্যার সাথে যে বা যারা জড়িত ছিল তাদের বিচারও অবিলম্বে মানুষ দেখতে পাবে ইনশাআল্লাহ।
সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া মামলার চার্জশিট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ঠিকমতো তদন্ত হয়নি। চার্জশিটও সঠিক নয়। যারা লাইট বন্ধ করেছে, যে বা যারা গ্রেনেড ছুড়ে মেরেছে তাদের নাম আমরা জানি। কিন্তু তাদের পেছনে কে? কারা আসল মদদদাতা এবং গ্রেনেডের উৎস কি সেটি তারা জানাতে চায়নি।
মামলা দু’টির বাদি হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল মজিদ খান চার্জশিট সম্পর্কে ড. রেজা কিবরিয়ার মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, তিনি দীর্ঘদিন পরে এটি সম্পর্কে কেন মন্তব্য করতে গেলেন তা আমি জানি না। চার্জশিট মনোপুত না হওয়ায় আমরা ৩ বার নারাজি দিয়েছি। পরবর্তীতে যখন চার্জশিট এলো তখন সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়েছে। বিচারকার্যও শুরু হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন পর তিনি কেন এ নিয়ে মন্তব্য করলেন আমি জানি না। হতে পারে রাজনৈতিক প্লাটফর্ম পরিবর্তনের কারণে। তিনি সরকারের সাথে ভিন্ন মত পোষণ করে অন্য একটি রাজনৈতিক দলের অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন। এটির কারণেও হতে পারে। তবে আমি বিশ^াস করি কিবরিয়া হত্যার বিচার বাংলার মাটিতে একদিন হবেই।
মামলার আইনজীবী সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট কিশোর কুমার কর জানান, হত্যা মামলার মোট সাক্ষী রয়েছেন ১৭১ জন। এর মাঝে মাত্র ৪৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। কারণ প্রথমত সাক্ষীরা সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। তাদের ঠিকমতো আনা সম্ভব হয় না। দ্বিতীয়ত এ মামলার আসামীরাও সারা দেশে বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তাদের দেখা যায় একই দিন একাধিক আদালতে মামলার তারিখ থাকে। আবার তাদের আনার জন্য নিরাপত্তারও বিষয় জড়িত রয়েছে। ফলে অনেক সময় সাক্ষী এলেও ঠিকমতো আসামীদের হাজির করতে না পারায় সাক্ষ্যগ্রহণ করা সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, আইনে বলা আছে অবশ্যই আসামীদের উপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণ করতে হবে। অনেক সময় বিচারকও থাকেন না। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী নির্ধারিত তারিখ রয়েছে। তিনি জানান, এছাড়া একই ঘটনায় দায়ের করা বিস্ফোরক মামলার চার্জশিটটি প্রায় ১ বছর পূর্বে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আসামীদের অনুপস্থিতির কারণে এটিরও চার্জ গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না।
বৈদ্যের বাজার ট্রাজেডি ঃ ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি বিকেলে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে ঈদ পরবর্তী এক জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন হবিগঞ্জ-৩ আসনের তৎকালীন এমপি সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া। বক্তব্য শেষে তিনি যখন মঞ্চ থেকে নেমে সহকর্মীদের নিয়ে বৈদ্যের বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেইটে আসেন তখনই গ্রেনেড হামলা করা হয়। এতে শাহ এএমএস কিবরিয়া, তার ভাতিজা শাহ মনজুরুল হুদা, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলী প্রাণ হারান।
কিবরিয়া হত্যা মামলা ও তদন্ত কার্যক্রম ঃ এ ঘটনার পরদিন ২৮ জানুয়ারি হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান এমপি বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দু’টি মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে সিআইডি’র তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সি আতিকুর রহমান মামলাটি তদন্ত করে ১০ জনের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২০ মার্চ চার্জশিট দাখিল করেন। ওই চার্জশিটে তৎকালীন জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম, জেলা বিএনপির কর্মী ও ব্যাংক কর্মকর্তা আয়াত আলী, কাজল মিয়া, জেলা ছাত্রদলের সহ-দপ্তর সম্পাদক সেলিম আহমেদ, জিয়া স্মৃতি গবেষণা পরিষদ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী, বিএনপি কর্মী তাজুল ইসলাম, বিএনপি কর্মী জয়নাল আবেদীন জালাল, ইউনিয়ন বিএনপি নেতা জমির আলী, ওয়ার্ড বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদীন মোমিন ও ছাত্রদল কর্মী মহিবুর রহমানকে অভিযুক্ত করা হয়। চার্জশিট দেয়ার পর মামলার বাদী অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান ২০০৬ সালের ৩ মে সিলেট দ্রুত বিচার আদালতে নারাজি আবেদন করেন। এ নিয়ে বেশ আইনী লড়াই হয়। পরে সিআইডি’র সহকারী পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলামকে অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ২০ জুন আরও ১৪ জনকে আসামী অন্তর্ভূক্ত করে ২য় সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন তিনি। সম্পূরক চার্জশীটে ১৪ আসামী হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান, লস্কর ই তৈয়বা সদস্য আব্দুল মজিদ কাশ্মীরি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু’র ভাই মাওলানা তাজ উদ্দিন, মহিউদ্দিন অভি, শাহেদুল আলম দিলু, সৈয়দ নাঈম আহমেদ আরিফ, ফজলুল আলম মিজান, মিজানুর রহমান মিঠু, মোহাম্মদ আব্দুল হাই, মোহাম্মদ আলী, মুফতি সফিকুর রহমান, বদরুল এনায়েত মোঃ বদরুল, বদরুল আলম মিজান।
২০১১ সালের ২৮ জুন কিবরিয়ার স্ত্রী মরহুম আসমা কিবরিয়া চার্জশীটের উপর হবিগঞ্জ জুডিসিয়াল আদালতে নারাজি আবেদন করেন। আবেদনে আসমা কিবরিয়া দাবি করেন, চার্জশিট যথাযথভাবে তৈরি হয়নি। হবিগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক এমদাদুল হককে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মূল তথ্য উদঘাটন হবে। তার দৃঢ় বিশ্বাস, চার্জশীটে যাদের নাম এসেছে তার বাইরে আরও অনেকেই জড়িত রয়েছেন। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি হত্যাকান্ডের অধিকতর তদন্তের অভিযোগপত্রের নারাজি আবেদন গ্রহণ করেন সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের তথ্যকালীন বিচারক দিলীপ কুমার বণিক। তিনি সিনিয়র পুলিশ অফিসারের মাধ্যমে মামলার অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।
৩য় সম্পূরক চার্জশীট ঃ ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রোকেয়া আক্তারের আদালতে কিবরিয়া হত্যা মামলার ৩য় সম্পূরক চার্জশীট দাখিল করেন সিআইডি সিলেট অঞ্চলের সিনিয়র এএসপি মেহেরুন নেছা পারুল। চার্জশীটে নতুন ১১ জনকে আসামী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। নতুন আসামীরা হলেন সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির বর্তমান সমবায় বিষয়ক সম্পাদক হবিগঞ্জ পৌরসভার পদত্যাগী মেয়র জি কে গউছ, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, মুফতি আব্দুল হাই, মুফতি তাজ উদ্দিন, মুফতি সফিকুর রহমান, মোহাম্মদ আলী, বদরুল, মহিবুর রহমান, কাজল আহমেদ, হাফেজ ইয়াহিয়া। একই সাথে পূর্বের চার্জশীটভূক্ত ইউসুফ বিন শরীফ, আবু বক্কর আব্দুল করিম ও মরহুম আহছান উল্লাহকে চার্জশিট থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন। ৩ ডিসেম্বর মামলার শুনানিকালে চার্জশীটে ক্রটির কথা উল্লেখ করে সংশোধিত চার্জশীট জমা দেয়ার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এ প্রেক্ষিতে ২১ ডিসেম্বর সংশোধিত চার্জশীট গ্রহণ করে আদালত। একই সাথে পলাতক আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির আদেশ দেয়া হয়।
মেয়র আরিফ ও তৎকালীন মেয়র গউছের আত্মসমর্পণ ঃ ৩য় দফা সম্পূরক চার্জশিট আদালতে গৃহিত হওয়ার পর ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন হবিগঞ্জ পৌরসভার তৎকালীন মেয়র জি কে গউছ। এর দু’দিন পর ৩০ ডিসেম্বর একই আদালতে আত্মসমর্পণ করেন সিলেট সিটি কর্পোরেশন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ মামলায় দুই বছর কারাগারে বন্দী থাকার পর হাইকোর্টের আদেশে ২০১৭ ৪ জানুয়ারি আরিফুল হক চৌধুরী ও জি কে গউছ সিলেট কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান। ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীসহ ১০ পলাতক আসামীর বিরুদ্ধে ক্রোক পরোয়ানা জারি করেন হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রশিদ আহমেদ মিলন। পলাতক অপর আসামীরা হলেন মাওলানা তাজ উদ্দিন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, মোহাম্মদ আলী, বদরুল, মহিবুর রহমান, কাজল মিয়া, মাওলানা ইয়াহিয়া ও আব্দুল জলিল। দীর্ঘদিন মামলাটি হবিগঞ্জ আদালতে পরিচালনা করার পর ২০১৫ সালের ২ জুন মামলাটি সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রেরণের আদেশ দেন হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিশাত সুলতানার আদালত। পরে ওই বছরের ১১ জুন মামলাটি হবিগঞ্জ আদালত থেকে সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করা হয়। সেদিন হবিগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আতাব উল্লাহ্ স্বাক্ষরিত মামলার মূল নথি এবং পিপি স্বাক্ষরিত কেস ডায়রি (সিডি) কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে সিলেটে প্রেরণ করা হয়। সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার ১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হলে ১৩৫ দিনের মধ্যে মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ করার সময়সীমা শেষ হওয়ায় ওই বছরের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত মামলাটি স্থগিত রাখা হয়। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা থেকে ১৩৫ দিনের মধ্যে মামলার কার্যক্রম শেষ করা বাধ্যতামূলক নয় বলে অভিমত দিলে ওই বছরেরই ১০ মার্চ থেকে ফের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। হত্যা মামলার মোট সাক্ষী রয়েছেন ১৭১ জন। এর মাঝে মাত্র ৪৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে।
এদিকে, বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলাটি বর্তমানে হবিগঞ্জ দায়রা জজ ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে বিচারিক কার্যক্রমের প্রক্রিয়াধিন থাকার পর সিলেটের প্রেরণ করা হয়। কিন্তু যথাযথভাবে প্রেরণ না করায় মামলাটি পুনরায় হবিগঞ্জ জেলা জজ আদালতে ফেরত আসে। মামলার এমন ধীরগতি এবং আইনি জটিলতার কারণে বিচার কার্য্যক্রম নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে নিহতদের পরিবারের মধ্যে। একজন কিংবা দুইজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ পেছানোর মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে বিচার কার্যক্রম।
বিচার নিয়ে নিহতের স্বজনদের শংকা ঃ ৪ বছর পূর্বে বিচার কার্যক্রম শুরু হলেও কবে রায় হবে এ নিয়ে নিহতদের স্বজনদের মধ্যে শংকা দেখা দিয়েছে। কিবরিয়ার সাথে নিহত দরিদ্র পরিবারের লোকজন অনেকটা মানববেতর জীবন যাপন করছেন। নিহত সিদ্দিক আলীর ছেলে আব্দুল কদ্দুছ মিয়া জানান, ৪ বছর পূর্বে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে শুনে আমরা অনেক খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু রায় কবে হবে এ নিয়ে আমরা অনেক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছি। আমি আমার পিতার হত্যার বিচার চাই।
এ সরকারের আমলে বিচার কার্যক্রম সম্পন্নের দাবি জানান তিনি। নিহত আবুল হোসেন ও আব্দুর রহিমের স্বজনরাও এই সরকারের আমলে তাদের হত্যার বিচার সম্পন্নের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
গ্রেনেড হামলায় আহতও প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য ঃ গ্রেনেড হামলায় আহত হবিগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দল্লাহ সরদার বলেন, সেদিন বিকট শব্দের পর আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। কিছুই মনে ছিল না। দীর্ঘ চিকিৎসায় সুস্থ হলেও কোনভাবে চলাফেরা করছি। গ্রেনেড হামলায় আহত হবিগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল আহাদ ফারুক বলেন, সেদিন আমি অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছি। তবে শরীরে যে ব্যথা হয়েছিল তা ছিল কঠিন। আল্লাহর রহমতে এখন সুস্থ আছি এবং ঘাতকদের বিচারের আশায় আছি। গ্রেনেড হামলার প্রত্যক্ষদর্শী হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী বলেন, ওই সভায় আমিও উপস্থিত ছিলাম। অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছি। এ ঘটনা এখনও আমি ভুলতে পারিনি। তিনি বলেন, জননেত্রীর আমলে অনেক হত্যা মামলার বিচার কার্য সম্পন্ন হয়েছে। কিবরিয়া হত্যা মামলার বিচার এ সরকারের আমলে সম্পন্ন হবে। এ ব্যাপারে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান তৎকালীন হবিগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল জানান, সেদিনের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার প্রত্যক্ষদর্শী আমি। গ্রেনেডের বিকট শব্দে এখনও আমি অনেক সময় আতংকিত হয়ে উঠি। বিকট শব্দের কারণে এখনও আমার বাম কানে কম শুনি। তিনি বলেন, গ্রেনেড হামলার তৎকালীন বিএনপি-জামাত সরকার আমাকে সন্দেহভাজন হিসেবে ২৭ দিন রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করেছে। আমাকে দিয়ে তারা জজ মিয়ার নাটক সাজাতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি তাদের কথামতো বক্তব্য দেইনি। আল্লাহর রহমতে আমি এখন সুস্থ আছি। তিনি বলেন, ১৫ বছর হলো এখন এই আন্তর্জাতিক ব্যক্তিসহ ৫ হত্যা মামলার বিচার শেষ হলো না। তবে আমরা আশাবাদী এই সরকারের আমলে বিচার সম্পন্ন হবে।
মৃত্যুবার্ষিকীর বিভিন্ন কর্মসূচি ঃ সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা ও হবিগঞ্জে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকাল সাড়ে ৮ হবিগঞ্জের বৈদ্যের বাজারে স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পন, বাদ আছর টাউন মসজিদে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া রামকৃষ্ণ মিশনে বিশেষ প্রার্থনা করাসহ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। পৃথকভাবে এ কর্মসূচিগুলো পালন করবে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন এবং শহীদ কিবরিয়া ফাউন্ডেশন। এছাড়া ঢাকায় মরহুমের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পন করবে কিবরিয়া পরিবার।