আজ হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও বিকেজিসিতে তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা ॥ অভিভাবকদের মাঝে উদ্বেগ উৎকন্ঠা
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ আজ হবিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা। প্রতিটি অভিভাবকের আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটি। ফলে প্রতি বছর এ দুটি স্কুলে নিজের সন্তানকে ভর্তি করাতে পিতা-মাতা রীতিমতো যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। অন্যান্য শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলেও তৃতীয় শ্রেণিতে মূল যুদ্ধ হয়ে থাকে। তৃতীয় শ্রেণীর ভর্তির জন্য শিশুদের এক কঠিন যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়। কি হবে সন্তানদের ফলাফল এ নিয়ে অভিভাবকদের মাঝেও উদ্বেগ উৎকন্ঠা বেড়ে চলে।
এ ব্যাপারে মিশু আক্তার নামে একজন অভিভাবক জানান, ভর্তি পরীক্ষা এলেই শিক্ষার্থীদের মাঝে পিতা-মাতার চাহিদা অনুযায়ী প্রত্যাশিত ফলাফল এনে দেয়ার আতঙ্ক দেখা দেয়। সারা বছর কোমলমতি শিক্ষার্থীরা খেলা, নিজের আনন্দ সব কিছু থেকে দূরে থেকে শুধু পড়ার আর পড়ায় ব্যস্ত থাকতে হয়। সকালে এক শিক্ষক তো বিকেলে অন্য শিক্ষক, সন্ধ্যায় কোচিং তো রাতে অন্য কোচিং এ ভাবেই কাটে বর্তমান শিক্ষার্থীদের শৈশবের আনন্দময় সময়। যা আমাদের কাম্য নয়। প্রতিটি শিশুকে তার নিজের মতো করে বাড়তে দেয়া উচিত। যেখানে থাকবে হাসি আনন্দ ও খেলাধুলা। থাকবে আনন্দময় পাঠ গ্রহণের সুযোগ।
জেসমিন আক্তার নামে একজন অভিভাবক বলেন, শিশুদের মেধা যাচাইয়ের যে প্রচলিত পদ্ধতি তা শিশুদের জন্য এক কঠিন যুদ্ধ। এ যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে গিয়ে একটি শিশুকে যে পরিমাণ মানসিক চাপ নিতে হয় তার ভবিষ্যত ফলাফল ভাল নয় বলেই তিনি মনে করেন। তিনি মনে করেন লটারী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ সৃষ্টি করা হলে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ অনেক কমে আসবে।
নিলুফা ইয়াসমিন নামে একজন অভিভাবক বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী একাধিক শিক্ষার্থী একই নম্বর প্রাপ্ত হলে কি প্রক্রিয়ায় বা কোন পদ্ধতি অনুসরণ করে ছাত্র নির্বাচিত করা হয় সে বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা তার জানা নেই। ফলে অভিভাবকদের মাঝে বিষয়টি নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাজ করে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অভিভাবকদের সুস্পষ্ট ধারণা দিলে ভাল হতো বলে তিনি মনে করেন।
এছাড়াও তিনি বলেন, ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোন সিলেবাস নির্দিষ্ট নয়। তাই অন্ধকারে পথ চলতে হয়। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অনেক কঠিন কিছু শেখার মানসিক চাপ নিতে হয়। তাই ভর্তি পরীক্ষার সুনির্দিষ্ট সিলেবাস প্রণয়নের দাবি জানান তিনি।
মৌমিতা রায় নামে একজন অভিভাবক বলেন, তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য একজন শিক্ষার্থীকে সারা বছর কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। অভিভাবকরাও অজানা আশঙ্কায় সারাক্ষণ তাদের পড়ায় ব্যস্ত রাখেন। ফলে তারা খেলাধুলা বা অন্য কোন বিনোদনের সুযোগ পায় না। ৫০ নম্বরের পরীক্ষার জন্য তাদের প্রতিযোগিতা করতে হয়। ৪৯ বা ৪৮ পেলেও ভর্তির সুযোগ পাওয়া নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। তাই পরীক্ষায় ৫০ নম্বর প্রাপ্তির লক্ষ্য নিয়ে পড়াশুনা করতে হয়। ফলে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে মানসিক চাপের মধ্যে থাকতে হয়। তাই ভাল লেখাপড়া করেও ভর্তির সুযোগ পাবে কি না সে আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকরা। তাই শিশুদেরকে মানসিক চাপ মুক্ত রাখতে তিনি লটারীর মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্নের দাবি জানান।
এছাড়াও কয়েকজন অভিভাবক বলেন, তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া অনেক শিক্ষার্থীর বয়স বেশি থাকে। কত বয়সের শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবে তা নির্দিষ্ট না থাকায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকে। আর বেশি বয়স্ক শিক্ষার্থীদের সাথে অনেক শিক্ষার্থীকে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হয়। যার কারণে সঠিক বয়সের শিক্ষার্থীরা ঝড়ে পড়ে। তাই ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের বয়স নির্ধারণেরও দাবি জানান তারা।
ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে একটি মহলে বাণিজ্যিক চিন্তাধারা বৃদ্ধি পেয়েছে। দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। তাই ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানান এক অভিভাবক।