স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুরুর দিকে ধীর গতি দেখা দিলেও বর্তমানে এগিয়ে চলছে হবিগঞ্জ-লাখাই হয়ে সরাইল-নাছিরনগর সড়কের নির্মাণ কাজ। ইতিমধ্যে চারটি সেতু ও ২৫ কিলোমিটার সড়কের প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সংস্কারকৃত সড়কে থাকছে ৩ বছরের ওয়ারেন্টি। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদী সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
সরেজমিনে দেখা যায়, লাখাই উপজেলার শেষপ্রান্ত মোড়াকরির বলভদ্র নদীর সেতু থেকে বামৈ বাজার পর্যন্ত রাস্তার নির্মাণ কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও লাখাই থানা এলাকা থেকে কয়েক কিলোমিটার রাস্তার বিটুমিনের একটি এক স্তরের পীচ সম্পন্ন হয়েছে। এর উপর আরো একটি স্তর দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া বাকী রাস্তার অধিকাংশ যান চলাচলের সুবিধার্থে খানা-খন্দ ভেঙ্গে লেভেল করে দেয়া হচ্ছে। বুল্লা বাজার থেকে হবিগঞ্জের দিকে শুরু হয়েছে সংস্কার কাজ।
এদিকে, তিনটি ব্রীজের নির্মাণ কাজ পুরোদমে চলছে। ব্রীজগুলোর নীচ দিকের কাজ পুরোপুরি শেষ। বাকী যে কাজ রয়েছে তা শীঘ্রই সম্পন্ন হবে জানিয়েছেন কর্মরতরা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই শেষ করার লক্ষ্যে তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
বুল্লা বাজার এলাকায় সিএনজি অটোরিক্সা যাত্রী আশিকুর রহমান জানান, কিছুদিন রাস্তার কাজ বন্ধ থাকার কারণে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। বর্তমানে কাজ চলমান থাকায় তাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। কাজের গুণগত মান সঠিক থাকার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানান তিনি।
গাড়ি চালক সুজন মিয়া জানান, তিনি আজমিরীগঞ্জ থেকে মাছ নিয়ে এই রোড দিয়ে প্রতিদিন ভৈরব যান। লাখাই থেকে বুল্লা বাজার পর্যন্ত রাস্তায় খানা-খন্দ থাকায় কিছুদিন পূর্বে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো। অর্ধেক রাস্তা সম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি বাকী অর্ধেকের বেশি অংশ পুরাতন পীচ ভেঙ্গে লেভেল করে দেয়ায় দুর্ভোগ কমে এসেছে। এছাড়াও লাখাই থানা সংলগ্ন স্থান থেকে মোড়াকরি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ায় চলাচলে স্বস্তি এসেছে।
বামৈ বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, কিছুদিন পূর্বে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শাহপুর ব্রীজ ভেঙ্গে যান চলাচল বন্ধ থাকলে পুরো সিলেট বিভাগের মানুষ এ রাস্তাটি দিয়ে চলাচল করেছে। রাস্তাটি পুরোপুরি নির্মাণ হলে এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক উন্নতি ঘটবে বলে মনে করছেন তারা।
হবিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জহিরুল ইসলাম জানান, ৪টি সেতু ২৫ কিলোমিটার রাস্তাটি নির্মাণে ১৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়ে আসেন হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির। এর মাঝে ৪টি সেতুতে ব্যয় হচ্ছে ৩৪ কোটি টাকা। বাকী টাকা ব্যয় হচ্ছে রাস্তা সংস্কারে। তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এতে কাজ করছে। ইতোমধ্যে ২৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকী কাজ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই শেষ হবে। সড়কটিতে ৩ বছরের ওয়ারেন্টি রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির বলেন, বড় প্রকল্প হওয়ায় শুরুতে তহবিল স্বল্পতাসহ বিভিন্ন করণে সংস্কার কাজে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটে। এতে সাধারণ মানুষকে অনেকটা কষ্ট করতে হয়েছে। কাজ এগিয়ে নিতে আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। শীঘ্রই সংস্কার কাজ সম্পন্ন করে জনদুর্ভোগ লাঘবের নির্দেশ দেয়া হয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কার কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদী তিনি।
প্রসঙ্গত, লাখাই উপজেলার শেষ সীমান্ত এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাছিরনগর উপজেলার শেষ সীমান্তে অবস্থিত বলভদ্র নদী। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ছিল বলভদ্র ব্রীজ নির্মাণ করার। সকলের দাবির মুখে অনেক প্রতিকূলতাকে জয় করে সেখানে ব্রীজ নির্মাণে বরাদ্দ নিয়ে আসেন এমপি আবু জাহির। এতে করে ঢাকার সাথে সিলেটের সড়ক যোগাযোগে দূরত্ব কমে যায় ৩৫ কিলোমিটার। ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন এই ব্রীজ। কিন্তু সড়কের অবস্থা ভাল না হওয়ায় সেই ব্রীজের সুফল থেকে বঞ্চিত ছিলেন এই এলাকার মানুষ। শুধু ছোট গাড়ি চলাচল করত এই সড়কে। অবশেষে এই আঞ্চলিক সড়কের সুফল বরাদ্দ নিয়ে আসেন এমপি আবু জাহির। সড়কটির সংস্কার কাজ পুরোপুরিভাবে সম্পন্ন হলে ঢাকা-সিলেট সড়ক যোগাযোগে সময় বাঁচবে প্রায় ১ ঘন্টা।
আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে সড়কটির সংস্কার কাজ সম্পন্ন হলে ঢাকা-সিলেট সড়ক যোগাযোগে সময় বাঁচবে প্রায় ১ ঘন্টা
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com