ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ২শ’ টাকা কেজি
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ হবিগঞ্জের প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকা। এরপরও অনেক দোকানেই পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় টিসিবি’র মাধ্যমে খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রির দাবি উঠেছে।
হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরীবাজারের মুদিমাল ব্যবসায়ী মামুন আহমেদ জানান, গতকাল সকালে বিভিন্ন দোকানে মানভেদে ১৮০/১৮৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। আবার কোন কোন দোকানে পাইকারি প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকা। অথচ ১ সপ্তাহ পূর্বেও পেঁয়াজের দাম কমে ১৫০/১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তিনি জানান এখন বাজারে আগের মতো ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ আনেন না, তাই দাম একটু বেশি।
পেঁয়াজের পাইকারী বিক্রেতা হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজার নারকেল হাটার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ আতাউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আগে প্রতিদিন বর্ডার দিয়ে ১শ’ থেকে ২শ’ গাড়ি পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসত। কখনো কখনো ২শ’ গাড়িও আসত। ফলে পেঁয়াজের দাম থাকত কম। যখনই বেশি মাল বাংলাদেশে ঢুকত সাথে সাথে দাম কমে যেত। গত ৩দিন পূর্বে চট্টগ্রামে প্রতি কেজি পেঁয়াজের ক্রয় মূল্য ছিল ১৪৫ টাকা। গতকাল মঙ্গলবার তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৭০/১৭৫ টাকা। যা খুচরা বাজারে আরো অনেক বেশি। তবে তিনি আশ^স্থ করেন আজ বুধবার থেকে পেঁয়াজের দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি তিনি এও জানান, দাম অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় হবিগঞ্জের মানুষ পেঁয়াজ খাওয়া অনেক কমিয়ে দিয়েছে। এটিকে তিনি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন।
ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি (ব্যকস) হবিগঞ্জের সভাপতি মোঃ শামছুল হুদা জানান, গত ১ সপ্তাহ পূর্বেও পেঁয়াজ ১৫০/১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ গত ২ দিনে হঠাৎই পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। বাজারে এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকা কেজি। কোথাও আবার এর চেয়েও বেশি। বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছে পেঁয়াজ নেই তাই দাম বেশি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে। এখন মোবাইল কোর্টের ভয়ে অনেক ব্যবসায়ী দোকানে পেঁয়াজ আনছেন না। ফলে বাজারে পেঁয়াজের আমদানি কমে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে ক্রাইসিস। এ প্রেক্ষাপটে দাম অটোমেটিকেলি বেড়ে যায়। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়টি ভেবে দেখার দাবি জানান।
ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি (ব্যকস) হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা যুবলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মোঃ আলমগীর বলেন, পেঁয়াজের দাম কমাতে হলে অবশ্যই আমদানি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি মানুষের দুর্ভোগ কমাতে হবিগঞ্জ পৌর এলাকার অন্তত ৫টি পয়েন্টে টিসিবি’র মাধ্যমে খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রির দাবি জানান তিনি। শুধু তাই নয় নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসার আগ পর্যন্ত তিনি তা অব্যাহত রাখারও দাবি করেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন বলেন, পেঁয়াজ বাংলাদেশে একটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য। অথচ বেশ কিছুদিন ধরে এটি নিয়ে বাংলাদেশে তুলকালাম চলছে। দিনের পর দিন এ নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম বেড়েই চলেছে। তিনি পেঁয়াজের মূল্য কমাতে সরকারের যা যা করা উচিত তা করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান। এমনকি পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের সাথে মন্ত্রণালয়ের অথবা সরকারের কোন উচ্চ পদস্থ কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি। পাশাপাশি তিনি দেশের অন্যান্য স্থানের মতো ভর্তুকি দিয়ে হবিগঞ্জেও টিসিবি’র মাধ্যমে খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রির জোর দাবি জানান। যাতে সাধারণ জনগণ বিশেষ করে সাধারণ ভোক্তা শ্রেণি উপকৃত হয়, সরকারের নেয়া উদ্যোগের সুফল ভোগ করতে পারে।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বর্তমানে পেঁয়াজ নিয়ে সারা দেশেই আলোচনা হচ্ছে। ভোক্তাদের কথা মাথায় রেখে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করছে অথবা যারা ক্রয় মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি মুনাফা করে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান, অভিযানকালে দেখা যায় একজন বিক্রেতা ১৭০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। কিন্তু তিনি কোন ক্রয় রশিদ দেখাতে পারছেন না। এতেতো অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ে। তখন আমাদেরকে ব্যবস্থা নিতে হয়। কেউ ক্রয় রশিদ দেখিয়েছেন আর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এরকম কোন ঘটনা আমার জানা নেই। ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে টিসিবির মাধ্যমে খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে হবিগঞ্জেও এমন কোন পরিকল্পনা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপাতত হবিগঞ্জে টিসিবি’র মাধ্যমে খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রির কোন সম্ভাবনা নেই। সরকার থেকে এমন কোন নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত দেন তাহলে হবিগঞ্জেও টিসিবি’র মাধ্যমে খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে। অতি শীঘ্রই এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করা হবে।
প্রসঙ্গত, ভারত হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেছে। এরপর থেকে দাম না কমে প্রায় প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। যদিও সপ্তাহখানেক পূর্বে দাম কিছুটা কমেছিল। কিন্তু গত তিন দিন ধরে দাম আবার ক্রমাগত বাড়তে শুরু করেছে। সর্বশেষ গতকাল হবিগঞ্জ শহরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ২শ’ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেছে।