স্টাফ রিপোর্টার ॥ লাখাই’র কৃষ্ণপুর গ্রামে পল্লী চিকিৎসকের অপচিকিৎসায় তৌহিদ মিয়া (৫২) নামের এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। রবিবার এ ঘটনা ঘটে। তৌহিদ মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাছিরনগর উপজেলার পুলিকুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা। খবর পেয়ে লাখাই থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে এবং পল্লী চিকিৎসক শংকর লাল রায়কে আটক করে।
পুলিশ ও স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানায়, নাছিরনগর উপজেলার পুলিকুন্ডা গ্রামের তৌহিদ মিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে পার্শবর্তী লাখাইর কৃষ্ণপুর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক শংকর লাল রায়ের কাছে চিকিৎসা নিতে যান। কিন্তু শংকর সঠিক রোগ নির্ণয় না করেই তার শরীরে এক সাথে ৫টি ইনজেকশন পুশ করেন। সাথে কিছু ঔষধও সেবন করতে বলেন। এ চিকিৎসা দেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তৌহিদ মিয়া মারা যান। এ সময় ঘটনাস্থলে তৌহিদ মিয়ার স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং পল্লী চিকিৎসক শংকর লাল রায় ইনজেকশন দিয়ে তাকে মেরে ফেলেছেন বলে চিৎকার করতে থাকেন। এ খবর পেয়ে সন্ধ্যায় লাখাই থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
লাখাই থানার ওসি তদন্ত অজয় চন্দ্র দেব জানান, পল্লী চিকিৎসক শংকর লাল রায় ওই রোগীকে একসাথে ৪/৫টি ইনজেকশন দিয়ে দেন। সাথে আরও ঔষধও সেবন করিয়ে দেন। এতে তার মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
গতকাল এ ব্যাপারে লাখাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সাইদুল ইসলাম জানান, পল্লী চিকিৎসকের অপচিকিৎসায় রোগী মারা গেছে অভিযোগ পেয়ে আমরা লাশ উদ্ধার করে থানা নিয়ে এসেছি এবং পল্লী চিকিৎসককে আটক করেছি। তবে এ ব্যাপারে এখনও কোন মামলা দায়ের করা হয়নি। মৃতের স্বজনরা ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে যেতে চান।
এলাকাবাসী জানান, কৃষ্ণপুর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক শংকর লাল রায়ের তেমন কোন লেখাপড়া নেই। তার বাবা এক সময় গ্রামে কবিরাজী ও হাতুরে ডাক্তার হিসেবে লোকজনের চিকিৎসা করতেন। তার বাবার মৃত্যুর পর শংকর লাল রায় নিজেই ডাক্তার হিসেবে ফার্মেসী খুলে চিকিৎসা সেবা শুরু করেন। প্রতিদিন তার ফার্মেসীতে রোগীদের উপচেপড়া ভিড় জমে। এসব রোগীদের অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের। বীরদর্পে দীর্ঘদিন ধরে পল্লী চিকিৎসক শংকর রায় চিকিৎসা চালিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। মাধবপুর পৌর এলাকায় তার ২টি বাসা ও ৪টি দোকান রয়েছে। এছাড়া নিজ এলাকায় কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে। অপচিকিৎসা চালিয়ে শংকর লাল রায় সম্পত্তির পাহাড় গড়লেও সাধারণ রোগীরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে শংকর লাল রায়ের অপচিকিৎসায় আরো বেশ কয়েকজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। গতকাল সর্বশেষ তার অপচিকিৎসায় পুলিকুন্ডা গ্রামের তৌহিদ মিয়ার অকাল মৃত্যু হলো। তৌহিদ মিয়ার স্বজনরা পল্লী চিকিৎসক শংকর লাল রায়ের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ ও তার বিচার দাবি করেন।