এটা লক্ষণীয় যে কিছু কিছু খয়ের খা’র মন্তব্যে আপনি দারুন পুলকিত হন। আপনার এহেন দুর্বলতায় এ সুযোগটার ওরা আরো সদ্ব্যবহার করে আপনাকে তুঙ্গে উঠানোর চেষ্টা করে

ডা. মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহাব

আমি জানি আপনি অনেক পড়াশুনা করেছেন, সুশিক্ষিত স্বদ্জন, আপনার অনেক মানবিক গুণাবলী আছে, নিঃসন্দেহে জ্ঞানীর কাতারে আপনার স্থান নজরে পড়ে, চিন্তা চেতনায় অবলীলাক্রমেই আপনি যুগোপযোগী। এক কথায় আপনি দশজনের একজন এবং আপনার চলন বলন কথন এ ব্যাপারে আপনি নিজেও যে বিশিষ্টজন হিসেবে আত্মবিশ্বাসী এবং ওয়াকিবহাল তা বাকীরাও অতিসহজে অনুমান এবং অনুধাবন করতে পারে।
আপনার বুলি, আপনার স্ট্যাটাস ও যুক্তিতর্ক সবার নজর কাড়ে। এক কথায় আপনি স্মার্ট চৌকশ ব্যক্তিত্বের অধিকারী, স্পষ্টভাষীতো অবশ্যই। হ্যাঁ, অন্য শতজনের মত আমিও আপনাকে সম্মান করি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে শ্রদ্ধাও করি। এ পর্যায়ে উন্নীত হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে, জীবনের মহামূল্যবান সম্পদ মেধা এবং সময়কে কাজে লাগাতে হয়েছে। জীব, জগৎ, পরিবেশ, পারিপার্শ্বিকতাকে নিরলস এবং নিখুঁতভাবে পর্যালোচনা করতে হয়েছ।
আপনি অক্ষরে অক্ষরে উপলব্দি করতে পেরেছেন আপনি সৃষ্টির সেরা জীবন্ত প্রতীক। মস্তক উন্নত করে চলার সৎসাহস আপনার আছে। আপনার লিখনি, ক্ষুরধার বক্তব্য গুণীজন কর্ত্তৃক সমাদৃত।
তবে আসল কথা হলো- এটা লক্ষণীয় যে কিছু কিছু খয়ের খা’র মন্তব্যে আপনি দারুন পুলকিত হন। আপনার এহেন দুর্বলতায় এ সুযোগটার ওরা আরো সদ্ব্যবহার করে আপনাকে তুঙ্গে উঠানোর চেষ্টা করে। সকলেরই একটা নিজস্ব আদর্শ, চিন্তা-চেতনা আছে, যে কোন মতবাদের প্রতি অন্ধবিশ্বাস আছে, আপনাকে তাদের সাথে মিল দেখে প্রশংসার ঝুলি খুলে ক্রমশ অতি উৎসাহী ঐ ব্যক্তিরা ধীরে ধীরে কিন্তু আপনাকে কট্টরপন্থী করে তুলেছে। যে মানবিক আদর্শে আপনি বিভোর ছিলেন, অন্যায়ের প্রতি আপনার জোরালো প্রতিবাদী ভূমিকা ছিল, কেন জানি মনে হচ্ছে তা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে, যা এখন আর আগের মতটা নেই।
কেন বলছি জানেন? আপনি অন্ধ আদর্শের অনুসারীদের প্ররোচণায় কিছুটা পদস্খলিত অর্থাৎ পথচ্যুত হয়েছেন।
খুন, রাহাজানি, ধর্ষণ এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার আপনি এখন নির্বাক। বরং অধুনা সত্য সমালোচনায় মাঝে মাঝে আপনি এখন ক্ষুব্ধ হন যদি তা আপনার সমর্থিত মতাদর্শের পরিপন্থী হয়। যদিও সঠিক নয় বলে আপনি নিশ্চিত জানেন, তদপিও।
আপনার মত একজন সুক্ষ্ম বিবেচককে জাগ্রত করার দৃষ্টতা আমার নেই। তবে একটা উদাহরন শুনুন…
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ডা. মাহাথির মুহাম্মদ এইতো পুনরায় দেশটার হাল ধরেছেন কিছুদিন হল। প্রায় চল্লিশ বছর শাসন করে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতঃ পনের বছর ক্ষমতার বাইরে ছিলেন। নিজের গড়া প্রাণপ্রিয় দলের লুটপাট, অন্যায় অবিচার সহ্য করতে না পেরে তিরানব্বই বছর বয়সে তার এক সময়ের কট্টর বিরোধীদলে যোগদান করে নির্বাচনে জয়লাভ করে আবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। সাবাস ডা. মাহাথির! সাবাস দেশের জনগণ! এটাই বিবেক, এটাই দেশপ্রম!
তাই বলছিলাম, আপনিত একজন অনন্য সাধারণ। আপনার বিবেক, বুদ্ধি, বিবেচনা, দেশপ্রেম, মানবিক গুণাবলী সাধারণ মানুষের মত নয়। ভালমন্দ, ন্যায় অন্যায় বুঝার ক্ষমতা আরো শতজনের তুলনায় অতিশয় প্রখর। আমি জানি ত্রিশ লক্ষ শহীদানের আত্মাহুতিতে অর্জিত দেশটার প্রতি ভালবাসা আপনার নিখুঁত, নির্ভেজাল। তাও জানি আপনার চিন্তা-চেতনা আধুনিক তথা প্রগতিশীল। আপনার মত ব্যক্তি অন্ধ চেতনায় গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসাবেন কেন? তাহলে আর জাতির ভরসার স্থল হিসেবে রইলটা কি?
আমাদের দেশটা ছোট হলেও এটা সোনার দেশ, অমিত সম্ভাবনার একটা দেশ, বড় স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীন করা একটা দেশ।
তাই আবারো বলছিলাম- তোষামোদকারী, চাটুকার, অন্ধবিশ্বাসীদের পরিহার করুন। স্বকীয়তা বজায় রাখুন। আপনার জ্ঞান, গরিমা, মর্যাদা, ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে সদা সত্য কথাটি বলুন। পরবর্তী প্রজন্মের খাতিরে সঠিক ভূমিকাটি পালন করুন। আবারো অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার, স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে ১৯৭১ পূর্ব পূর্বসূরিদের অনুসরণ করুন।
আপনার ক্ষুরধার লিখনী যথার্থ উদ্দেশ্যেই শানিত হোক।
হ্যাঁ, আপনাকেই বলছি ॥