স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজমিরীগঞ্জে আইনী বেড়াজালে ৬০ বছর ধরে বসবাস করা পৈত্রিক ভিটা থেকে এক ব্যবসায়ীর পরিবারকে উচ্ছেদের চেষ্টা করছে কুচক্রী মহল। এ অবস্থায় ওই ব্যবসায়ী ও তার পরিবার পরিজন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তিনি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে নিজের পৈত্রিক ভিটা রক্ষার দাবি জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, আজমিরীগঞ্জ পৌরসভার সরাফনগর এলাকার মৃত শ্রীশনাগের ছেলে নিখিল চন্দ্র নাগ ও মনোরঞ্জন নাগ ওরফে রাজু নাগের পরিবারের লোকজন আজমিরীগঞ্জ মৌজার খতিয়ান নং-৭৭৬, আরএস খতিয়ান নং-১/১, এসএ দাগ নং ১২৬৮, আরএস দাগ নং-৩০৬৯, .০৭৭৫ একক ভূমিতে বসতবাড়ি নির্মাণ করে ৬০ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। উল্লেখিত ভূমিটি নিখিল চন্দ্র নাগ ও মনোরঞ্জন নাগ ওরফে রাজু নাগের পিতা পাকিস্তান আমলে ক্রয় করেন। কিন্তু সে সময় ভূমির রেজিস্ট্রারী না হওয়ায় কারণে তিনি জায়গার আনরেজিস্ট্রার কাগজ করে বসবাস করে আসছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮১ সালে একটি কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রে ওই জায়গাটি ভিপি তালিকাভূক্ত হয়। নিজেদের পৈত্রিক সম্পত্তি ভিপি লিস্টে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় দিশেহারা পড়েন রাজু নাগ। পরবর্তীতে তারা কোন উপায় না পেয়ে ওই ভূমিটি নিখিল চন্দ্র নাগ ও মনোরঞ্জন নাগ ওরফে রাজু নাগ সরকারের কাছ থেকে লীজ নেন। সরকারের কাছ থেকে লীজ নেয়ার পর থেকে তারা নিয়মিত খাজনা দিয়ে আসছেন। কিন্তু ওই কুচক্রী মহলটি থেমে না থেকে আবার ষড়যন্ত্রের জাল পেতে ১৯৬২ সালের গঞ্জের হাট মৌজার খতিয়ান নং-৭২২ উল্লেখ করে দলিল মূলে শ্রীমঙ্গলের রূপশপুর গ্রামের হরেন্দ্র দাশের পুত্র অসিত দাস ও লাখাইর বুল্লা এলাকার হরেন্দ্র দাসের ছেলে অজিত দাস মালিকানা দাবি করেন। যা নিখিল চন্দ্র নাগ ও মনোরঞ্জন চন্দ্র নাগের বসবাসকৃত জায়গার খতিয়ান, মৌজাসহ তফসিলের সাথে কোন মিল নেই। এছাড়াও কথিত ওই দলিলে কোন দাগ নাম্বার ও টিপসহ না থাকায় দলিলটি নিয়ে রয়েছে রহস্য। ওই দলিল মূলে অসিত দাস ও অজিত দাস অর্পিত টাইব্যুনাল আদালতে জায়গাটি উদ্ধারের জন্য মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-২৬৯৭/২০১২ ইং। এ প্রেক্ষিতে টাইব্যুনালের বিচারক তার পক্ষে জায়গা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য রায় প্রদান করেন। ওই রায়ে সরকার পক্ষ ওই দলিলটিকে কোন ধরণের চ্যালেঞ্জ করেননি বলেও উল্লেখ করেন। এর পাশাপাশি দলিলটি কোন ধরণের পরিক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়। সরকার পক্ষ ওই দলিলটি চ্যালেঞ্জ করেনি এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এদিকে ট্রাইব্যুনালের রায় পেয়ে অসিত দাস ও অজিত দাস ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মচারীদের যোগসাজসে নিখিল চন্দ্র নাগ ও মনোরঞ্জন নাগের দখল থাকা অবস্থায় লীজ বাতিলের চিঠি না দিয়েই সুকৌশলে জায়গা খারিজ করে নেয়। এ অবস্থায় অজিত ও অসিত দাস মরিয়া হয়ে উঠেছে জায়গাটি বিক্রি করার জন্য। এদিকে নিখিল চন্দ্র নাগ ও মনোরঞ্জন চন্দ্র নাগ নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি রক্ষার জন্য হবিগঞ্জ যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতে জেলা প্রশাসক ও অজিত দাস, অসিত দাসসহ ৫ জনকে বিবাদী করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলাটি এখন আদালতে চলমান রয়েছে। আদালতে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় অজিত ও অসিত দাস জায়গাটি থেকে নিখিল চন্দ্র নাগ ও মনোরঞ্জন চন্দ্র নাগকে উচ্ছেদের পায়তারা করছে।
এ ব্যাপারে মনোরঞ্জন নাগ জানান, পৈত্রিক ক্রয় সূত্রে তারা জায়গাটি ৬০ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু অসিত দাস ও অজিত দাস আমাদের এলাকার বাসিন্দা নয় এবং তাদের পূর্বের কোন উত্তরসূরী ওই জায়গার দখলদার ছিলেন না। কিন্তু একটি সাজানো দলিল তৈরী করে আমাদের জায়গা দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আমি আমার জায়গা সুষ্ঠু তদন্ত করার দাবি জানাই। সুষ্ঠু তদন্ত করলে জায়গার প্রকৃত মালিক বের হয়ে আসবে। এ ব্যাপারে মামলার আইনজীবি রবীন্দ্র ভৌমিক জানান, অজিত দাস, অসিত দাসের পূর্ব পুরুষসহ তার কখনও বিরোধপূর্ণ জায়গার দখলে ছিলেন না। আর তারা যে কাগজের বলে মালিক দাবি করছেন তাও সঠিক নয়। ওই জায়গায় নিয়ে বর্তমানে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। আদালতের চুড়ান্ত রায় ছাড়াও ওই জায়গায় কেউ যদি উচ্ছেদের পরিকল্পনা করে এবং উচ্ছেদ করতে যান সেটি বেআইনি হবে। তিনি ওই জায়গার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দখলদার মনোরঞ্জন নাগ গংদের দখলে দেয়ার জন্য আহ্বান জানান।
অপর একটি সূত্র জানায়, অজিত দাস, অসিত দাস জাল দলিল চক্রের সদস্য। তারা বিভিন্ন স্থানের এই ধরণের ভূমিতে জাল দলিল সৃষ্টি করে দখলের নেয়ার চেষ্টা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com