মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ হবিগঞ্জে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই সংকট দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় বই দিতে গিয়ে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা পড়েছেন বিপাকে। এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ শহরের বাণিজ্যিক এলাকাস্থ মাতৃছায়া কেজি এন্ড হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক বন্ধু মঙ্গল রায় বলেন, সরকার বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই পৌঁছে দেয়া নিশ্চিত করতে ডিসেম্বর মাসেই চাহিদা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্তদের হাতে বই তুলে দিচ্ছে। ফলে বছরের প্রথম দিন সারা দেশে একযোগে বই উৎসব পালন করা সম্ভব হচ্ছে। এটি সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তবে এ বছর চাহিদা অনুযায়ী বই না পাওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বিপাকে পড়েছে। তিনি জানান, পাঠ্যবই বিতরণের পূর্বে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে চাহিদাপত্র গ্রহণ করা হয়। পরে পাশর্^বর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরিপ সাপেক্ষে বই বরাদ্দ দেয়া হয়। এ বছর চাহিদাপত্রের ৫০ থেকে ক্ষেত্র বিশেষে ৬০ ভাগ বই দেয়া হয়েছে। ফলে নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো বিপাকে পড়েছে। অনেকেই নতুন বই দিতে পারছেন না। এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান- সরকার হতে পর্যাপ্ত বই পাওয়া যায়নি। সে কারণে চাহিদা অনুযায়ী বই দেয়া যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লুকড়া মডার্ণ একাডেমীর মোঃ শাহেদ আলী জানান, তিনি চাহিদাপত্রের ৬৫ ভাগ বই পেয়েছেন। ফলে তিনি প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দিতে পারেননি। পরে আবার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে চাহিদাপত্র প্রেরণ করেন। এ প্রেক্ষিতে পাশর্^বর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি সরজমিন পরিদর্শন করে বিদ্যালয়ের হাজিরা রেজিস্ট্রার, ফলাফল রেজিস্ট্রারসহ আনুষাঙ্গিক কাগজপত্র পরীক্ষা করে পুনরায় তাকে আরো ১০ ভাগ বই দেয়া হয়।
হবিগঞ্জ শহরের বগলাবাজারস্থ আশার আলো কিন্ডারগার্টেন এন্ড হাই স্কুলের পরিচালক শাহ মোহাম্মদ জানে আলম জানান, যথাসময়েই বই পাওয়া যায়। এ বছর তিনি ডিসেম্বরের ২৩ তারিখেই সরকারি পাঠ্য বই পেয়েছেন। তবে তিনি চাহিদার ৬০ ভাগ বই পেয়েছেন। ফলে শিক্ষার্থীদের বই দিতে গিয়ে তাকে ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। পরে তিনি বিভিন্ন স্কুল থেকে ধার কর্জ করে বই এনে শিক্ষার্থীদের দিয়েছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্টরা জানান বর্তমানে বই নেই। পরে আরো দেয়া হবে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের এটিইও মাহমুদ উল্লাহর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বইয়ের কোন সংকট নেই। প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা অনুযায়ী বই সরবরাহ করা হয়েছে। আর যে সকল প্রতিষ্ঠানে সমস্যা হয়েছে তা হলো তারা যে চাহিদাপত্র দিয়েছেন সে অনুযায়ী বই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা চাহিদাপত্র দেয়ার পর বই নেয়ার সময় অতিরিক্ত চাইলে তা দেয়া সম্ভব হয়নি। তদন্ত করে দেখা যায় একই প্রতিষ্ঠান একাধিক শাখা দেখিয়ে চাহিদাপত্র দিয়েছে। বাস্তবে তার অস্থিত্ব নেই। বছরের শেষ দিকে তারা যে চাহিদাপত্র জমা দিয়েছেন বই নেয়ার সময় তার চেয়ে বেশি বই চাইছেন। আর সে ক্ষেত্রেই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা যারা কর্মকর্তা রয়েছি আমরা ইচ্ছে করলেই যখন তখন চাহিদা অনুযায়ী বই দিতে পারি না। সরকার থেকে যে বরাদ্দ আসে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রাপ্ত চাহিদা অনুযায়ী সেই সংখ্যক বই বিতরণ করা হয়। তিনি আশ^স্থ করেন বলেন, কারো অতিরিক্ত বই লাগলে আমাদের জানাবেন। আমাদের কাছে বই না থাকলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করে অন্যস্থান হতে বই এনে দেব।