নির্বাহী প্রকৌশলী সজিব আহমেদ বললেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা। আমি নিয়ম অনুযায়ী কাজ করে আসছি এবং সকল কাজ অনলাইনে দরপত্রের মাধ্যমে হয়ে থাকে
স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে তারেক হাবিব নামে এক ব্যক্তি বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন ও হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে জানা যায়, হবিগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সজিব আহমেদ হবিগঞ্জ জেলায় যোগদানের পর থেকে বিল, ভাউচার ও কোটেশনের মাধ্যমে সরকারিভাবে টেন্ডার আহবান না করে ব্যক্তিগতভাবে নিজস্ব ঠিকাদার দিয়ে অসাধুভাবে কাজের নামে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ২০১৭-১৮ইং অর্থ বছরে নির্বাহী প্রকৌশলী বাস ভবনের কাজ পূর্ণাঙ্গভাবে সমাপ্ত হয়। উক্ত বাসার নির্মাণ মুল্য হিসেবে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়। কিন্তু সম্প্রতি বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী নিজের বাণিজ্যের জন্য ওই বাসাকে রাজপ্রসাদে পরিণত করার লক্ষ্যে টেন্ডার কল না করে লাখ-লাখ টাকা কোটেশনের মাধ্যমে লুটপাটের পায়তারা করছেন এবং সরকারের ব্যয় সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনায় কোন অবস্থাতেই কাজের পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া কোন কাজ হাতে নেয়া যাবে না এ মর্মে সু-স্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও নিজের মনগড়া পরিকল্পনায় সরকারের লাখ-লাখ টাকার অপচয় করে কাজের উপর অতিরিক্ত কাজ করে কোটি-কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ওই বাসভবনে অহেতুক অতিমুল্যবান ফিটিংস, যন্ত্রাংশ স্থাপন-প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে এমনকি তিনি সম্পূর্ণ ছাদের উপরে টাইলস স্থাপনসহ একটি রাজপ্রসাদে পরিণত করেছেন। নির্বাহী প্রকৌশলীর বাসভবন এমনভাবে নির্মাণ করায় পুরো জেলায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জনগণের ট্যাক্সের টাকা এমনভাবে নির্বাহী প্রকৌশলীর বাসভবনে ব্যয় করছেন যা দেখে রাজপ্রাসাদকেও হার মানায়। শুধু তাই নয়, তিনি নিজস্ব বিলাসিতা নিয়ে এতটাই ব্যস্ত যে, হবিগঞ্জ জেলার প্রবেশদ্বার থেকে প্রতিটি রাস্তারই বেহাল দশা হলেও উন্নয়ন করার কোন পদক্ষেপ নেই। হবিগঞ্জ টু নবীগঞ্জ, নবীগঞ্জ টু আউশকান্দি, মিরপুর টু শ্রীমঙ্গল রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ এবং হবিগঞ্জ শহর রোড এলাকায় রাস্তা ভাঙ্গা থাকায় জনচলাচলে বাড়ছে দুর্ভোগ। বিভিন্ন উপজেলা থেকে রোগীবাহী এ্যাম্বুলেন্সসহ যান চলাচলে ঘটছে ব্যাঘাত।
তার বিরুদ্ধে তদন্ত করলে অনেক দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যাবে। শুধু তাই নয়, নির্বাহী প্রকৌশলী সজিব আহমদে যেখানে যান তিনি একটি বাহিনী গড়ে তুলেন। যাতে করে কেউ দুর্নীতির প্রতিবাদ না করতে পারে। জেলার রাস্তাগুলো দায়সারাভাবে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে তাও আবার যে জায়গা ভাল সে স্থানেই আবার বিল ভাউচার করে টাকা আত্মসাত করা হচ্ছে। সিডিউল অনুযায়ী সিলকোট এর পুরুত্ব ১২ মিঃ মিঃ থাকলেও কাজ হচ্ছে ৩/৪ মিঃমিঃ, তারও আবার কোথাও ২০ মিটার ৩ মিটার ৫০/৬০ মিটার দূর দূর বিভিন্ন জায়গায় কার্পেটিং সিডিউল মোতাবেক ৫০ মিঃ মিঃ ধরা থাকলেও দায়সারাভাবে মন চাইলে ১৫/২০ মিঃ মিঃ করা হচ্ছে, নতুবা কার্পেটিং না করেই ৩/৪ মিঃ মিঃ সিলকোট করা হচ্ছে। এভাবেই বর্তমান সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন এবং রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। বর্তমানে হবিগঞ্জ সড়ক বিভাগে কোন অভিজ্ঞ/প্রকৃত ঠিকাদার কাজ না পাওয়ায় হতাশ হচ্ছেন। এই প্রকৌশলীর ব্যবহারে প্রকৃত ঠিকাদারগণ সন্তুষ্ট নন। কারণ হিসেবে জেলার বাইরের তার নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেয়া হচ্ছে, এতে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয় ঠিকাদাররা। আর এই সুবাদে লাভবান হচ্ছেন নির্বাহী প্রকৌশলী সজিব আহমেদ। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ঠিকারদার ও হবিগঞ্জ জেলাবাসী।
প্রসঙ্গত, গত ৬ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী একই ঠিকাদারকে বারবার টেন্ডার না দিতে বললেও ওই নির্বাহী প্রকৌশলী প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে কর্ণপাত না করে তার ব্যক্তিগত কয়েক ঠিকাদারকে বার বার টেন্ডার প্রদান করেন। যার ফলে তিনি ওই ঠিকাদারদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন।
অভিযোগের বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সজিব আহমেদ বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা। আমি নিয়ম অনুযায়ী কাজ করে আসছি এবং সকল কাজ অনলাইনে দরপত্রের মাধ্যমে হয়ে থাকে। আমার ইচ্ছামাফিক কোন কাজ হয় না।