হবিগঞ্জের কিন্ডারগার্টেনগুলোর সাফল্যগাঁথা ১৩

মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ কয়েকজন সমমনা এক হয়ে সমাজে ভাল কিছু করার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করেন ‘হবিগঞ্জ মডেল একাডেমী’। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠানটি শহরের পুরানমুন্সেফি আবাসিক এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় যাত্রা শুরু করে। আর প্রতিষ্ঠার প্রথম বছরেই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ভাল ফলাফল অর্জন করে চমক সৃষ্টি করে।
এ ব্যাপারে একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কে. এম হাবিবুর রহমান বলেন, ২০১৮ সালে কয়েকজন সমমনা এক হয়ে সমাজের জন্য কিছু করার দায়বদ্ধতা নিয়ে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করি। প্লে থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রী ভর্তি করি। প্রথম বছর প্লে শ্রেণিতে ১৫ জন, ১ম শ্রেণিতে ১৩ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১৮ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৮ জন, ৪র্থ শ্রেণিতে ১০ জন এবং ৫ম শ্রেণিতে ৬ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়। আর এই স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়েই ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ভাড়া বাসায় আমাদের পথচলা শুরু হয়। আর এ স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাতে নিয়োগ করা হয় ১০ জন শিক্ষক। মাস শেষে বাড়ি ভাড়া ও শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। তবুও স্কুলের শিক্ষার্থীদের ভাল ফলাফলের প্রত্যাশা নিয়ে আমরা আশায় বুক বেঁধে রাখি। শিক্ষার্থীরাও আমাদের প্রত্যাশার প্রতিদান দেয়। আর স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাফল্যে শিক্ষকদের অবদানও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। তারা প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সুশিক্ষা দানে ছিলেন আন্তরিক। তাইতো তারা পেয়েছে কাক্সিক্ষত সাফল্য। শিক্ষার্থীদের সাফল্য আগামীতে তাদের আরো বেশি করে অনুপ্রেরণা দিবে বলে মনে করেন কে. এম হাবিবুর রহমান।
একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কে. এম হাবিবুর রহমান আরও বলেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন মোঃ জিবলু আহমেদ। তিনি অন্যান্য শিক্ষকদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত করে বর্তমান প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে যা যা প্রয়োজন তাই করে যাচ্ছেন। ক্লাসের বাইরেও শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ক্লাস নিচ্ছেন। ফলে কোন শিক্ষার্থী পেছনে না পড়ে সবাই একসাথে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য এর সুফলও তারা পাচ্ছেন। এ প্রতিষ্ঠানের ৪৬ জন শিক্ষার্থী হবিগঞ্জ কিন্ডারগার্টেন ফোরাম আয়োজিত বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৪২ জন ট্যালেন্টপুল ও ২ জন সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি লাভ করেছে। বিবেকানন্দ মেধাবৃত্তি পরীক্ষায় ৮ জন অংশ নিয়ে ২ জন ট্যালেন্টপুল বৃত্তি পেয়েছে। বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় এ প্রতিষ্ঠানের ৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৫ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। বিশেষ করে তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান চৌধুরী ১ম স্থান অর্জন করে প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি করেছে। ৬ জন প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। তিনি আশাবাদী তারা সকলেই পাশ করবে।
স্কুলটিতে ২ ব্যাচে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্লে থেকে ২য় শ্রেণি পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে ১১টা ১৫ মিনিট এবং সকাল ১১টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণির ক্লাস পরিচালিত হয়। আর সকাল সাড়ে ৬টা থেকে আরবী বিভাগের ১ম ব্যাচের ক্লাস শুরু হয়। শেষ হয় সকাল ৮টায়। বেলা আড়াইটা থেকে ২য় ব্যাচের ক্লাস শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে। আরবী বিভাগ সকল স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত। যে কোন প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা এখানে এসে আরবী শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। ফলে এ বিভাগটি স্বল্প সময়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
কে. এম হাবিবুর রহমান বলেন, স্কুল প্রতিষ্ঠার পর প্রথম অবস্থায় আমরা হিমশিম খেয়েছি। কারণ আমাদের পাশাপাশি আরো কয়েকটি স্কুল রয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের দক্ষতার কারণে শিক্ষার্থীরা প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জন করায় আমরা স্বপ্ন দেখছি। স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রথম বছরেই এ প্রতিষ্ঠান থেকে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী কোরআন শরীফে ছবক নিয়েছে। আর আরবী বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ৩ জন শিক্ষক সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। যতদিন এ প্রতিষ্ঠান থাকবে আরবী বিভাগও চালু থাকবে এবং এ বিভাগটিকে আরো যুগোপযোগী করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। তাঁর মতে ভাল ফলাফল পেতে হলে প্রয়োজন দক্ষ শিক্ষক। কারণ দক্ষ শিক্ষকই পারেন মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে।
প্রতিষ্ঠানটিতে সরকারি পাঠ্যবই পড়ানোর পাশাপাশি প্রতিটি শিক্ষার্থীকে যুগোপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে সাধারণ জ্ঞান, চিত্রাংকন, সঙ্গীত ও কম্পিউটার শিক্ষা প্রদান করা হয়ে থাকে। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে বিশেষ সুযোগ সুবিধা। এখানে দরিদ্র পরিবারের শিশুদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ ফ্রি কোচিং সহায়তা দেয়া হয়। ক্লাসের পড়া ক্লাসেই শিখিয়ে দেয়া হয়। ফলে বাসায় গৃহশিক্ষকের প্রয়োজন হয় না। শিশুর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে রয়েছে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগ সুবিধা।
কে. এম হাবিবুর রহমান স্বপ্ন দেখেন এ প্রতিষ্ঠানটিকে হাই স্কুলে উন্নীত করা। উপযুক্ত ক্যাম্পাস পেলে তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে হাই স্কুলে উন্নীত করবেন।