আজকাল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্র এনে ভর্তি করে দিলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে টাকা দেয়া হয়, এটি কাম্য নয়
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ বাসায় গিয়ে টানাটানি করে ছাত্র এনে ভর্তি নয়, স্কুল পরিদর্শন করে স্কুলের পরিবেশ ও শিক্ষা প্রদানের কৌশল দেখে ভাল লাগলে নিজের সন্তানকে স্কুলে ভর্তির অনুরোধ করে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পথচলা তা হচ্ছে হ্যাভেন টাচ্ স্কুল। ২০১১ সালে স্কুলটি শহরের শ্মশানঘাট এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। নানা চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে স্কুলটি আজ তার নিজস্ব একটি অবস্থান তৈরী করে নিয়েছে।
হ্যাভেন টাচ্ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক নীহার রঞ্জন সরকার বলেন, ২০১১ সালে শহরের শ্মশানঘাট এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় স্কুলের কার্যক্রম শুরু করি। প্লে ক্লাস দিয়ে শুরু হলেও পরে তা ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। ৪৭ জন ছাত্র দিয়ে শুরু হওয়া এ প্রতিষ্ঠানে আজ ৩ শতাধিক ছাত্র নিয়মিত অধ্যয়ন করছে। শুরুতে এখানে ৯ জন শিক্ষক ছিলেন আর বর্তমানে ১৪ জন শিক্ষক দায়িত্ব পালন করছেন। শুরু থেকেই তিনি বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। স্কুল শুরু হওয়ার পর তিনি নানা চড়াই উৎড়াই পার হয়ে আজ এ অবস্থানে এসে পৌঁছেছেন।
তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আজ পণ্যের মতো হয়ে গেছে। বিষয়টি মানসিকভাবে পীড়া দেয়। আজকাল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্র এনে ভর্তি করে দিলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে টাকা দেয়া হয়। এটি ঠিক নয় এবং কাম্যও নয়। আমি স্কুল প্রতিষ্ঠার পর পরিচিতজন সকলকে আমার স্কুল পরিদর্শন করতে বলেছি। স্কুলের পরিবেশ দেখতে বলেছি। পরে তাদের সন্তানদের পরীক্ষামূলক আমার স্কুলে ভর্তি করার অনুরোধ করি। একবছর পর আমাকে আর কারো কাছে গিয়ে তার সন্তানকে আমার স্কুলে ভর্তির জন্য অনুরোধ করতে হয়নি। বরং যারা এখানে লেখাপড়া করেছে তারাই আমার স্কুলের বিজ্ঞাপনের কাজ করেছে। ছাত্র এনে ভর্তি করিয়েছে। যদি আমার প্রতিষ্ঠানে প্রদত্ত শিক্ষার মান খারাপ হতো তাহলে আমি স্কুলে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী পেতাম না। অথচ আজকাল দেখা যায় স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে টানাটানি চলে। মানসম্পন্ন পাঠদান করানো হলে এমনিতেই শিক্ষার্থী এসে ভর্তি হবে, ঘর থেকে গিয়ে টেনে আনতে হবে না। আমি আমার প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষককে স্কুলে ছাত্র এনে ভর্তি করানোর জন্য বলি না। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করতে আমি আমার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অনুরোধ জানাই।
নীহার রঞ্জন সরকার আরও বলেন, আমি প্রায় ৩ বছর ‘প্রজ্ঞা’ নামে একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করেছি। আর তা থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে স্কুল পরিচালনা করছি। ফলে আমাকে স্কুল চালাতে গিয়ে তেমন একটা বেগ পেতে হয়নি। তিনি মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বই পড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন।
হ্যাভেন টাচ্ স্কুলে প্রতি বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। আর ক্লাস শুরু হয় জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে।
বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ধারাবহিক সাফল্য অর্জন করে আসছে। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ৫ম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি) অংশ নিয়ে শতভাগ পাশ করেছে। ২০১৩ সালে ৫ জন, ২০১৪ সালে ১১ জন, ২০১৫ সালে ১৭ জন, ২০১৬ সালে ২৬ জন, ২০১৭ সালে ২৪ জন, ২০১৮ সালে ৩০ জন পিইসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সকলেই উত্তীর্ণ হয়।
নীহার রঞ্জন সরকার স্বপ্ন দেখেন ভবিষ্যতে একটি মানসম্মত হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করা এবং ওই প্রতিষ্ঠানটি হবে নিজস্ব জায়গায়। কারণ নিজস্ব জায়গায় প্রতিষ্ঠান করতে না পারলে ভাড়া বাসায় মানসম্মত প্রতিষ্ঠান গড়া কঠিন হয়ে দাড়ায়।