মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ শিক্ষা প্রদানের কলাকৌশল ও ধারাবাহিক সাফল্যে প্রতিষ্ঠার ৪ বছরের মধ্যেই অভিভাবকদের দৃষ্টি কেড়েছে হবিগঞ্জ শহরের পুরানমুন্সেফি আবাসিক এলাকায় প্রতিষ্ঠিত এম. আলী কেজি স্কুল। ২০১৫ সালে মাত্র ৭৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে স্কুলটির যাত্রা শুরু হলেও ধারাবাহিক সাফল্যের কারণে স্কুলটিতে দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। তাই নিজের গড়া প্রতিষ্ঠান নিয়ে বড় মাপের স্বপ্ন দেখছেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মোঃ মোছাদ্দর আলী খান।
আলাপকালে এম. আলী কেজি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মোঃ মোছাদ্দর আলী খান বলেন, ২০১৫ সালে শহরের পুরানমুন্সেফি আবাসিক এলাকায় ‘এম. আলী কেজি স্কুল’ নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করি। শুরুতেই নার্সারী থেকে ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রী ভর্তি করি। প্রথম বছর ৭৫ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়। প্রথম বছরে ভর্তিকৃত ছাত্রছাত্রীদের সাফল্য দেখে অনুপ্রাণিত হই। ২০১৬ সালে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস বর্ধিত করি। আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাফল্য এবং পড়ালেখার মান দেখে অভিভাবকরাও অনুপ্রাণিত হন। ফলে পরের বছর থেকেই স্কুলে ছাত্রছাত্রী ভর্তির হার বাড়তে থাকে। বর্তমানে স্কুলটিতে প্রায় ৩শ’ শিক্ষার্থী নিয়মিত পড়ালেখা করছে। আর ১৬ জন সুযোগ্য শিক্ষক তাদেরকে পাঠদান করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমি চাই এমন প্রতিষ্ঠান যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন মেধাবী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এমনভাবে প্রতিটি শিশুকে জ্ঞান দেয়া হবে যাতে সে রাষ্ট্র তথা আমাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। তিনি শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে চান। স্কুলের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ভাল মানুষ হিসেবে গড়তে চান। এজন্য তিনি অভিভাবকসহ হবিগঞ্জবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।
এম. আলী কেজি স্কুলের শ্রেণি সংখ্যা ঃ এম. আলী কেজি স্কুলে প্লে থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করানো হয়ে থাকে। সেখানে সরকার নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তক ছাড়াও বিদ্যালয় নির্ধারিত সহায়ক পাঠ্য বই পাঠদান করানো হয়।
এম. আলী কেজি স্কুলের সাফল্য ঃ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ঈর্ষনীয় সাফল্য অর্জন করে হবিগঞ্জবাসীর মন জয় করেছে। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাফল্য শতভাগ। ২০১৬ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় এ প্রতিষ্ঠানের ৫ জন, ১৭ সালে ১৪ জন অংশ নিয়ে সকলেই উত্তীর্ণ হয়। ২০১৮ সালে ২১ জন অংশ নিয়ে ১৩ জন এ প্লাস ও একজন বৃত্তিলাভসহ পাশের হার শতভাগ। ২০১৬ সালে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩য় ও ৬ষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় এ স্কুলের ৩৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ১৩ জন উত্তীর্ণ হয়। ২০১৭ সালে ৪৫ জন অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয় ১৯ জন, ২০১৮ সালে ৬৫ জন অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয় ৪১ জন; তন্মধ্যে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে একজন ১ম স্থান লাভ করে। ২০১৯ সালের ভর্তি পরীক্ষায় এ স্কুলের ৭০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৩য় শ্রেণিতে মেধা তালিকায় দিবা ও প্রভাতী শাখায় ২ জন প্রথম, একজন ২য় এবং একজন ৩য় স্থান লাভ করে। এ সাফল্যের ধারা বহমান রয়েছে কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন বৃত্তি পরীক্ষায়ও। এ স্কুলের শিক্ষার্থীরা ২০১৮ ও ২০১৯ সালে সর্বাধিক বৃত্তি লাভ করেছে।
বিদ্যালয়টি শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সকাল সাড়ে ৮টার পূর্বে ছাত্র-শিক্ষককে বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে হয়। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৮টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত অ্যাসেম্বলী। নার্সারী, ১ম, ২য় এবং ৫ম শ্রেণির ক্লাস শুরু হয় সকাল ৯টায়। নার্সারী এবং প্রথম শ্রেণির ক্লাস শেষ হয় বেলা ১১টায়। ২য় এবং ৫ম শ্রেণির ক্লাস শেষ হয় ১২টায়। ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির ক্লাস শুরু হয় ১১টা ১০ মিনিটে এবং শেষ হয় ২টা ১০ মিনিটে।
স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মোঃ মোছাদ্দর আলী খান আরও জানান, নতুন বছরে ক্লাসের সময় শিক্ষার্থীর সংখ্যার উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হতে পারে।
অভিজ্ঞ শিক্ষক মন্ডলী দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটিতে ক্লাসের পড়া ক্লাসেই শেখানো হয়। নিয়মিত ক্লাস টেস্ট ও মাসিক মডেল টেস্টের মাধ্যমে লেখাপড়ার মান নির্ণয় করা হয়। বিভিন্ন দিবস উদ্যাপন, প্রতিযোগিতা আয়োজন এবং সকল শ্রেণির পরীক্ষার জন্য বিষয় ভিত্তিক হ্যান্ডনোট প্রদান এবং নিয়মিত অভিভাবক সমাবেশ করা হয়। আর প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা রক্ষায় রয়েছে সার্বক্ষনিক সিসি ক্যামেরা দ্বারা মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা।
মোঃ মোছাদ্দর আলী খান স্বপ্ন দেখেন যুগোপযোগী আধুনিক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে হবিগঞ্জের একটি সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। আর তা সম্ভব হলে তিনি স্কুলটিতে হাই স্কুল পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রম বর্ধিত করবেন এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
স্কুলটিতে নিয়মিত ক্লাস টেস্ট ও মাসিক মডেল টেস্টের মাধ্যমে লেখাপড়ার মান নির্ণয় করা হয়
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com