জেলা আওয়ামী লীগের অনুমোদন পেলে চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি

এসএম সুরুজ আলী ॥ আগামী ১১ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি পদে প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতা মোঃ লুৎফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান মিজান। তাঁরা দু’জন সম্মেলনের পর অনুষ্ঠিতব্য কাউন্সিলে নিজেদের প্রার্থীতা ঘোষণা করবেন। ইতোমধ্যে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ২৯ জন নেতা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কাছে জীবন বৃত্তান্ত বা মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। তারা প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। এদিকে ওই দুই নেতা প্রার্থী ঘোষণা দেয়ায় আরো দু’জন প্রার্থী কাউন্সিলে সংযুক্ত হবে। তবে তারা দু’জন জেলা আওয়ামী লীগের গঠিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কাছে নিজেদের জীবন বৃত্তান্ত বা মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। গতকাল দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকায় নিজেকে প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সভাপতি হিসেবে ঘোষণা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেন মোঃ লুৎফুর রহমান। এতে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সকল কাউন্সিলর, বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নের কাউন্সিলরদের কাছে দোয়া, আশির্বাদ ও সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। এ ছাড়া তিনি জানান, ছাত্র জীবনে আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপি-জামাতের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন। নির্যাতনের চিহ্ন এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সাথে দেখা করে তাঁর দোয়া নিয়ে এসেছেন। তবে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি সেই সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন বলে জানান।
হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান মিজান জানান, জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আমি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী। সম্মেলনে আমার প্রার্থীতা ঘোষণা করবো। তবে যদি সিনিয়র কাউকে সাধারণ সম্পাদক করা হয় তাহলে আমি তা মেনে নেবো। এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের জন্য গঠিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ভোটার তালিকা চুড়ান্ত করেছে। আজ রোববার জেলা আওয়ামী লীগের সভায় ভোটার তালিকা উপস্থাপন করা হবে। জেলা আওয়ামী লীগ তালিকা চুড়ান্ত করলে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি তা ঘোষণা করবে।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী জানান, সম্মেলনে কাউন্সিলরদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আজ জেলা আওয়ামী লীগের সভায় উপস্থাপন করা হবে। সভা থেকে সেই তালিকা অনুমোদিত হলে আমরা তা চুড়ান্তভাবে ঘোষণা করবো। অপরদিকে গতকাল বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে নিমতলা প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের সম্মেলনস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার কটিয়াদী বাজারের হাজী ডেকোরেটার্সের শ্রমিকরা দ্রুত প্যান্ডেলের কাজ করছেন। প্যান্ডেল মঞ্চ নির্মাণ শ্রমিক আব্দুল খালেক জানান, ১০ ডিসেম্বরের মধ্যেই প্যান্ডেল মঞ্চ নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
দীর্ঘ ৬ বছর পর জেলা আওয়ামী লীগের এই সম্মেলনে নেতা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবার নানা গুজন চলছে। সম্মেলন শেষে কাউন্সিলরদের ভোটে নেতা নির্বাচিত হবেন না কি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক কমিটি ঘোষণা করা হবে। এ নিয়ে হবিগঞ্জের হাট-বাজার ও চায়ের স্টলগুলোতে আলোচনা চলছে। তবে জেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা ই তারা মেনে নেবেন।
উল্লেখ্য, কাউন্সিলে সভাপতি পদে ৫ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ৪ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ১৪ জন ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৬ প্রার্থী মনোনয়নপত্র বা জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। সভাপতি প্রার্থীরা হলেন- বর্তমান সভাপতি এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির, সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডাঃ মুশফিক হুসেন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম মোল্লা মাসুম, সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট ফজলে আলী। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা হলেন- বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চৌধুরী আবুবকর ছিদ্দিকী ও হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মোতাচ্ছিরুল ইসলাম। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান তালুকদার, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মর্তুজ আলী, আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান, অ্যাডভোকেট সালেহ উদ্দিন আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক আলমগীর খান সাদেক, প্রচার সম্পাদক অনুপ কুমার দেব মনা, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু, প্রাক্তন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদের পুত্র নিজামুল হক মোস্তফা রানা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সৈয়দ কামরুল হাসান, অ্যাডভোকেট সুমঙ্গল দাশ সুমন, অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান, অ্যাডভোকেট আবুল আজাদ ও মাহবুবুল আলম মালু। সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থীরা হলেন- বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান শামীম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নুর উদ্দিন বুলবুল, জেলা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদ, বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আহাদ মিয়া, অ্যাডভোকেট আব্দুল মুনতাকিম চৌধুরী খোকন ও হবিগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এক) অ্যাডভোকেট ফয়জুল বসীর চৌধুরী সুজন।