অভিভাবকরা বিশে^র যে কোন স্থান থেকে শ্রেণি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন

মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ ২০০১ সালে মাত্র ২০ জন ছাত্র নিয়ে যাত্রা শুরু করে আজ হবিগঞ্জের একটি সফল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মদিনা কেজি এন্ড হাই স্কুল। হাটি হাটি পা পা করে কেটেছে ১৯টি বছর। জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হবে ২০তম বছরে পথচলা। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্বপ্ন দেখেন তার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানটি একদিন তার সুনাম দিয়ে হবিগঞ্জবাসীর মনে জায়গা করে নেবে। ফলে হবিগঞ্জবাসী তাকে আজীবন মনে রাখবে।
মদিনা কেজি এন্ড হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এখলাছুর রহমান বলেন, ২০০১ সালে হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর অ্যাডভোকেট মোস্তফা আলীর বাসভবনে মদিনাতুল উলুম নামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করি। ওই সময়ে মাত্র ২০ জন ছাত্র নিয়ে মাদ্রাসার যাত্রা শুরু হয়। ৬ মাস পরে মাদ্রাসার ক্যাম্পাস পরিবর্তন করে শহরের পুরান মুন্সেফি নিয়ে আসি। ২ বছর পর মনে হল শুধু মাদ্রাসা শিক্ষা নয় তার সাথে যুগোপযোগি আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় করা প্রয়োজন। পরে প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দেই ‘মদিনা একাডেমী’। ধারাবাহিকভাবে আমার প্রতিষ্ঠানটি সাফল্য অর্জন করতে থাকে। পরে প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে রাখি ‘মদিনা কেজি এন্ড হাই স্কুল’। শুধু তাই নয় হবিগঞ্জে আমিই প্রথম ক্যাডেট স্কুল প্রতিষ্ঠা করি। যার নাম দেই ‘মদিনা প্রি-ক্যাডেট স্কুল এন্ড কলেজ’। ২০১৮ সালে শহরের প্রধান ডাকঘর এলাকায় প্রতিষ্ঠানটি তার যাত্রা শুরু করে। ৮০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটিতে আজ ১২০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। হাটি হাটি পা পা করে কেটেছে ১৯টি বছর। আজ হবিগঞ্জের একটি সফল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মদিনা কেজি এন্ড হাই স্কুল। প্রতিষ্ঠানটি দিন দিন সুনাম অর্জন করায় তাতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। সিদ্ধান্ত নেই এর শাখা বৃদ্ধি করার। বর্তমানে শহরের শ্যামলী আবাসিক এলাকায় মদিনা কেজি এন্ড হাই স্কুলের ১ম ক্যাম্পাস এবং শহরের তিন কোনা পুকুড় পাড় এলাকায় ২য় ক্যাম্পাস রয়েছে। যাতে প্রায় ৫শ’ শিক্ষার্থী নিয়মিত অধ্যয়ন করছে। মদিনা প্রি-ক্যাডেট স্কুল এন্ড কলেজে ১৮ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন যারা প্রত্যেকেই অনার্স মাস্টার্স পাশ। আর মদিনা কেজি এন্ড হাই স্কুলের ২টি শাখায় কর্মরত রয়েছেন ৪৫ জন শিক্ষক। অথচ এ প্রতিষ্ঠান যখন পথচলা শুরু করে তখন তার শিক্ষক ছিলেন মাত্র ৫ জন।
স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এখলাছুর রহমান বলেন, আমার ভবিষ্যত স্বপ্ন একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা। আর আমার গড়া প্রতিষ্ঠানটি হবে গুণগত ও মান সম্পন্ন। যাতে আমি বেঁচে না থাকলেও হবিগঞ্জবাসী আমাকে মনে রাখেন। পাশাপাশি আমি চেষ্টা করছি আমার স্কুলে স্থায়ী ক্যাম্পাস করার। যদি আল্লাহ সে সুযোগ দেন তাহলে আমি আমার স্বপ্ন পূরণে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাব। এজন্য তিনি অভিভাবকসহ হবিগঞ্জবাসী সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আজকাল প্রতিটি পাড়া মহল্লায় কিন্ডার গার্টেন স্কুল গড়ে উঠছে। এগুলোর অধিকাংশই ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত। অথচ আমি পুরোপুরি ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্যে স্কুল প্রতিষ্ঠা করিনি। আমার উদ্দেশ্য প্রতিটি শিক্ষার্থীকে মানবিক গুণসম্পন্ন মেধাবী হিসেবে গড়ে তোলা। এমনভাবে প্রতিটি শিশুকে জ্ঞান দেয়া যাতে সে রাষ্ট্র তথা সমাজের জন্য বোঝা না হয়ে আশির্বাদ হয়। আর একটি বিষয় হচ্ছে আমরা একটি শিশুকে গড়ে তুলি বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক সময়ের সাথে যোগ্য করে। ওই শিশুটি আমাদের স্কুলে লেখাপড়া করলেও দেখা যায় কোন একটি প্রাইমারী স্কুলে ওই শিশুটির নাম তালিকাভূক্ত। কারণ সরকারি প্রাইমারী স্কুল থেকে অন্য স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ভর্তির ক্ষেত্রে ১০ ভাগ কোটা পাওয়া যায়। সেই আশায় তারা সরকারি স্কুলে নাম তালিকাভূক্ত করে রাখে।
তিনি আরও বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেছেন এমন বেশ কয়েকজন শিক্ষক নতুন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমার বিশ^াস চাকুরি থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তারা সাক্সেস হবেন।
মদিনা কেজি এন্ড হাই স্কুল এবং মদিনা প্রি-ক্যাডেট স্কুল এন্ড কলেজের শ্রেণি সংখ্যা ঃ মদিনা কেজি এন্ড হাই স্কুলের প্লে থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করানো হয়ে থাকে। এছাড়া মদিনা প্রি-ক্যাডেট স্কুল এন্ড কলেজে প্লে থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করানো হয়। সেখানে সরকার নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তক ছাড়াও বিদ্যালয় নির্ধারিত সহায়ক পাঠ্য বই পাঠদান করানো হয়।
ভর্তি ফি : মদিনা কেজি এন্ড হাই- স্কুলে প্রতি বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। আর ক্লাস শুরু হয় জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে। প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ করতে হয়। অন্যথায় বিলম্ব ফি দিতে হয়। ফি প্লে থেকে ১ম শ্রেণি ৪ হাজার ১শ’ (ভর্তি ফি, জানুয়ারি মাসের বেতন, সেশন ফি ও অন্যান্য খাত) আর মাসিক বেতন ৭শ’ টাকা। ২য় থেকে ৫ম শ্রেণি ভর্তি ফি ৪ হাজার ৫শ’ টাকা (ভর্তি ফি, জানুয়ারি মাসের বেতন, সেশন ফি ও অন্যান্য খাত) আর মাসিক বেতন ৮শ’ টাকা। মদিনা প্রি-ক্যাডেট স্কুল এন্ড কলেজ- প্লে ৫ হাজার (ভর্তি ফি, জানুয়ারি মাসের বেতন, সেশন ফি ও অন্যান্য খাত) আর মাসিক বেতন ৮৫০ টাকা, নার্সারি ৫ হাজার ৫শ’ মাসিক বেতন ৮৫০ টাকা, কেজি ৫ হাজার ৫শ’ মাসিক বেতন ৯শ’, ১ম শ্রেণি ৫ হাজার ৫শ’ মাসিক বেতন ৯শ’, ২য় শ্রেণি ৫ হাজার ৭৫০ মাসিক বেতন ৯৫০, ৩য় শ্রেণি ৬ হাজার মাসিক বেতন ১ হাজার ১শ’, ৪র্থ শ্রেণি ৬ হাজার ১শ’ মাসিক বেতন ১ হাজার ১৫০, ৫ম শ্রেণি ৬ হাজার ২শ’ মাসিক বেতন ১ হাজার ২৫০, ৬ষ্ঠ শ্রেণি ৬ হাজার ৩শ’ মাসিক বেতন ১ হাজার ৪শ’, ৭ম শ্রেণি ৬ হাজার ৩শ’ মাসিক বেতন ১ হাজার ৪৫০, ৮ম শ্রেণি ৬ হাজার ৪শ’ মাসিক বেতন ১ হাজার ৫শ’, ৯ম শ্রেণি ৭ হাজার মাসিক বেতন ১ হাজার ৬শ’ টাকা। তবে পুরাতন ছাত্রদের ভর্তি ফি নেই। শুধু সেশন ফি ও বেতন দিতে হবে।
সাফল্য : বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ঈর্ষনীয় সাফল্য অর্জন করে আসছে। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় বিদ্যালয়ের সাফল্য শতভাগ। এছাড়াও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় এ স্কুলের শিক্ষার্থীরা মেধা তালিকায় স্থান লাভসহ শীর্ষস্থান দখল করে আছে। এ সাফল্যের ধারা বহমান রয়েছে কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন বৃত্তি পরীক্ষায়ও। তাছাড়া এ স্কুলের ১০ জন শিক্ষার্থী সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, ২ জন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে।
বিদ্যালয়টি শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সকাল সাড়ে ৮টার পূর্বে ছাত্র-শিক্ষককে বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে হয়। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৮টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত অ্যাসেম্বলী। প্লে থেকে ১ম শ্রেণির ক্লাস শুরু সকাল ৯টায়। প্রথম ক্লাসের স্থায়ীত্ব ৫০ মিনিট। পরবর্তীতে ক্লাসের স্থায়ীত্ব ৪০ মিনিট। ক্লাস শেষ হয় সকাল ১১টা ১০ মিনিটে। সকাল ১১টা ১১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ২য় থেকে ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অ্যাসেম্বলী। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে ক্লাস শুরুর হয়ে একটানা চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। তবে ১টা ৪০ মিনিট থেকে ২টা পর্যন্ত বিরতি। আর ২য় শ্রেণির ক্লাস চলে বিকেল ৩টা ২০ মিনিট পর্যন্ত।
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের নিয়মানুবর্তিতা ও শ্রেণি কক্ষের পাঠদানের ধারাবাহিকতা এবং শৃঙ্খলা রক্ষার সার্থে অ্যাসেম্বলীতে কিংবা ক্লাসে বিলম্বে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়া হয় না। ক্লাস শুরু হওয়ার সাথে সাথে বিদ্যালয়ের গেইট বন্ধ করে দেয়া হয়। ছাত্র-শিক্ষকদের জন্য ক্যাম্পাসে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। চিত্ত বিনোদনের জন্য ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন ও বনভোজনের ব্যবস্থা রয়েছে। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসহ জাতীয় দিবস ও উৎসব উদযাপন করা হয়। স্কুলের সকল কার্যক্রম সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। স্কুল ক্যাম্পাস সম্পূর্ণ রাজনীতিমুক্ত। তাছাড়া ক্যাডেট স্কুলে সকল শ্রেণি কার্যক্রম প্রজেক্টরের মাধ্যমে নেয়া হয়। প্রত্যেক অভিভাবক বিশে^র যে কোন স্থান থেকে শ্রেণি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার সুব্যবস্থা রয়েছে।