কাউন্সিলের জন্য আজ ভোটার তালিকা চুড়ান্ত করবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি

এসএম সুরুজ আলী ॥ আগামী ১১ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিলকে সামনে রেখে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বিভিন্ন পদে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী প্রার্থীরা। তবে ভোটার তালিকা প্রকাশ না করায় প্রার্থীদের প্রচারণায় সমস্যা হচ্ছে। কোন কোন প্রার্থী দৈনিক হবিগঞ্জের মুখের সাথে আলাপকালে তাদের সমস্যার কথা জানিয়েছেন। কয়েকজন প্রার্থী এ ব্যাপারে কাউন্সিলের জন্য গঠিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রতি ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। তবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি বলছে, আজ ৬ ডিসেম্বর চুড়ান্ত কাউন্সিলরদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। তারা নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য সকল ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘ ৬ বছর পরে ১১ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্মেলনে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ২৯জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। প্রার্থীরা লিফলেট তৈরি করে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে স্বশরীরে এবং গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন ভোটার তালিকা না পাওয়ায় কার কাছে ভোট চাইবেন তা নিয়ে পড়েছেন বিড়ম্বনায়। তবে কাউন্সিলে ভোট হবে নাকি কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় মনোনীত কমিটি হবে এই বিষয়ে এখনো কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা নেই কারো। গতকাল সিলেটের সম্মেলন শেষে কাউন্সিল না করে কমিটি ঘোষণা করার খবরে হবিগঞ্জে ভোট গ্রহণ নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে কারা আসছেন তা নিয়ে আলোচনা চলছে পুরো জেলা জুড়ে। অন্যান্য বছরের ন্যায় জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে তেমন একটা সরব ভূমিকায় না থাকলেও পদ প্রত্যাশীরা কেন্দ্র থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে প্রাণে বিশ^াস করেন হবিগঞ্জের কাউন্সিল গোপন ভোটের মাধ্যমেই হবে। এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক প্রার্থী মাধবপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন চৌধুরী অসিম জানান, কাউন্সিলরদের তালিকা না থাকায় ভোট চাওয়াতে কিছু সমস্যা হচ্ছে। তারপরও আমরা যেহেতু বিগত কাউন্সিল করেছি, কারা ভোটার হতে পারেন সেই টার্গেট মাথায় রেখে প্রচারণা করে যাচ্ছি। ভোট কার কাছে চাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- দলের ইউনিয়ন, উপজেলা সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকসহ দলীয় চেয়ারম্যানদের কাছে ভোট চাচ্ছি। এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের কাছেও ভোট চাইছি। সর্বোপরি দলের সকল নেতাকর্মীদের কাছে ভোট ও সহযোগিতা কামনা করছি। জেলা আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী অনুপ কুমার দেব মনা জানান, নিয়ম অনুযায়ী আগে ভোটার তালিকা চুড়ান্ত করা হবে। তারপর তফসিল ঘোষণা ও ভোট গ্রহণ করার কথা। কিন্তু ভোটার তালিকা এখনও প্রকাশ করা হয়নি। এমতাবস্থায় কার বাড়িতে গিয়ে ভোট চাইবো। যাদের বাড়িতে গিয়ে ভোট চাচ্ছি তারা যদি ভোটার না হন, তাহলে আমরা কি করবো। তারপরও আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের সকল সিদ্ধান্তের উর্ধ্বে হলো জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত। তিনি যে সিদ্ধান্ত দেন আমাদের সেই সিদ্ধান্তই মেনে নিতে হবে। জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থী মশিউর রহমান শামীম জানান, তালিকা থাকলে প্রচারণা যেভাবে সহজ তালিকা না থাকলে সেই সুবিধা হবে না। এটি সত্যি। তারপরও আমাদের ধারণা আছে কারা কাউন্সিলর হতে পারেন। সেই অনুযায়ী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন- আমি নির্বাচনের জন্য সকলের ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছি।
এ ব্যাপারে সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম মোল্লা মাসুম জানান, ভোটার তালিকা নিশ্চিত না হওয়ার কারণে অনেক বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছি। কার কাছে ভোট চাইবো তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। আজ ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হলে অল্প দিনের মধ্যে সকলের কাছে গিয়ে ভোট চাওয়া সম্ভব হবে না। এখনও উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকদের নাম্বার নিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই তাদের কাছে ভোট চাচ্ছি। তারা ছাড়াও কারা ভোটার হতে পারেন তা অনুমান করে তাদের কাছে ভোট চেয়ে যাচ্ছি। এরপরও নির্বাচনে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী জানান, ভোটার তালিকা আজ প্রকাশ করা হবে। আগে ভোটার তালিকা প্রকাশ না করা হলেও প্রার্থীরা বিভিন্ন উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেছেন। তিনি বলেন- সম্মেলনের প্যান্ডেল তৈরির কাজ চলছে। ব্যালট পেপার ছাপিয়ে রাখা হবে। নির্বাচনের যে সিস্টেম আছে সেই সিস্টেমগুলো আমরা তৈরি করে রাখবো।
উল্লেখ্য, কাউন্সিলে সভাপতি পদে ৫ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ৪ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ১৪ জন ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৬ প্রার্থী মনোনয়নপত্র বা জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। সভাপতি প্রার্থীরা হলেন- বর্তমান সভাপতি এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির, সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডাঃ মুশফিক হুসেন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম মোল্লা মাসুম, সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট ফজলে আলী। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা হলেন- বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চৌধুরী আবুবকর ছিদ্দিকী ও হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মোতাচ্ছিরুল ইসলাম। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান তালুকদার, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মর্তুজ আলী, আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান, অ্যাডভোকেট সালেহ উদ্দিন আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক আলমগীর খান সাদেক, প্রচার সম্পাদক অনুপ কুমার দেব মনা, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু, প্রাক্তন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদের পুত্র নিজামুল হক মোস্তফা রানা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সৈয়দ কামরুল হাসান, অ্যাডভোকেট সুমঙ্গল দাশ সুমন, অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান, অ্যাডভোকেট আবুল আজাদ ও মাহবুবুল আলম মালু। সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থীরা হলেন- বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান শামীম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নুর উদ্দিন বুলবুল, জেলা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদ, বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আহাদ মিয়া, অ্যাডভোকেট আব্দুল মুনতাকিম চৌধুরী খোকন ও হবিগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এক) অ্যাডভোকেট ফয়জুল বসীর চৌধুরী সুজন।