মুক্ত হবিগঞ্জ শহরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম দলটি আব্দুস শহীদের নেতৃত্বে শহরে প্রবেশ করে

এসএম সুরুজ আলী ॥ আজ ৬ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনেই হবিগঞ্জবাসী স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিলেন। এ দিনে দীর্ঘ ৯ মাসের অবরুদ্ধ পরিবেশের অবসান হয়েছিল। শীতের সকালের সূর্যের রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়েছিল পাকিস্তানী হানাদার মুক্ত আলো বাতাসে। আনন্দে উদ্বেল হবিগঞ্জবাসী মুহূর্তের মধ্যে স্বজন হারানোর বেদনায় থমকে পড়েছিলেন।
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর সূর্যাস্তের পর হবিগঞ্জ শহরে নেমে আসে ভূতুরে নিস্তব্ধতা। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়ের খবর শোনার জন্য শহরবাসী রেডিওতে কান পেতেছিলেন। এর ক’দিন আগেই বিদ্যুত কেন্দ্র, শায়েস্তনগর ও উমেদনগরে বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রচন্ড গুলি বর্ষণের মাধ্যমে তাদের আগমন বার্তা ঘোষণা করেছিল। খোয়াই নদীর ওপার থেকে মুক্তিযোদ্ধারা গুলি ছুড়তে থাকেন। শায়েস্তানগর এলাকায় বর্তমানের টেলিফোন এক্সচেঞ্জের স্থানে পাকিস্তানী মিলিশিয়াদের একটি ক্যাম্প ছিল। তবে তারা আগের দিনই শহর ছেড়ে চলে যায়। পাকিস্তানীদের এক দালালের শায়েস্তানগরস্থ বাসভবনে একা হামলা চালাতে গিয়ে রাজাকারের গুলিতে নিহত হন মুক্তিযোদ্ধা সাবেক সেনা সদস্য নূরুল ইসলাম মাসুদ। তিনি শহীদ হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা শহরে আর কোন প্রতিরোধের সম্মুখিন হননি। রাজাকার, আলবদর আল সামস্ বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র হামলার মুখে রাতেই শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। ৬ ডিসেম্বর শীতের সকালে রক্তিম সূর্য তার তীক্ষèতা দিয়ে বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধাদের আরো সতেজ করে তুলে। শহরবাসী বাংলার দামাল মুক্তিযোদ্ধাদের অভিবাদন জানায়। তারা জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে মুক্ত হবিগঞ্জ শহরের রাস্তায় নেমে এসে বিজয়ের উল্লাস প্রকাশ করে। এ ছিল এক বিস্ময়কর অনুভূতি। মুক্ত হবিগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের যে দলটি প্রথমে প্রবেশ করে তার নেতৃত্বে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ল্যান্স নায়েক আব্দুস শহীদ।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুস শহীদ জানান, দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করার পর ৬ ডিসেম্বর হবিগঞ্জকে মুক্ত করেছিলাম। কিন্তু অদ্যাবধি পর্যন্ত এ দিনটি সরকারিভাবে পালন করা হচ্ছে না। তিনি হবিগঞ্জ মুক্ত দিবসটি সরকারিভাবে পালন করার দাবি জানান।
মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরাও গর্বিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এই কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য। তারা চান এই দিবসটি যাতে নতুন প্রজন্ম ভাল করে জানতে পারে তার ব্যবস্থা করা। প্রশাসনকেও এগিয়ে আসার দাবি জানান তারা।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দিবসটি উপলক্ষে আজ সকাল ১০টায় বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করা হয়েছে।