উচ্ছেদের জন্য সাধুর মাজার থেকে হরিপুর পর্যন্ত খোয়াই নদীর জায়গা মাপজোক করা হয়েছে। উচ্ছেদের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা প্রকল্পের জায়গাও রয়েছে

এসএম সুরুজ আলী ॥ আগামী রবিবার থেকে আবারও হবিগঞ্জ শহরের পুরাতন খোয়াই নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে। গতকাল দৈনিক হবিগঞ্জের মুখকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান। তিনি বলেন, সাম্প্রতিককালে শহরের কয়েকটি স্থানে পুরাতন খোয়াই নদীর জায়গা মাপজোক করা হয়েছে। মাপজোক করার পর উচ্ছেদের জায়গা নিশ্চিত করা হয়েছে। রবিবার থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) মাসুদ রানা জানান, গতকাল শহরের সাধুর সমাধি থেকে হরিপুর পর্যন্ত খোয়াই নদীর জায়গা মাপজোক করা হয়েছে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা প্রকল্পের জায়গাও রয়েছে। তিনি বলেন, আজ বৃহস্পতিবার ওই এলাকায় মাপজোক করা হবে। এর আগে ১২ নভেম্বর পুরাতন খোয়াই নদীর দক্ষিণ শ্যামলী সিনেমা হল রোড, সাধুর সমাধি পর্যন্ত দখলকৃত জায়গা আনুষ্ঠানিকভাবে লাল দাগের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়। তিনি বলেন, অবৈধ দখলকৃত সব জায়গা পর্যায়ক্রমে উদ্ধার করা হবে। কয়েকদিন ধরে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ থাকার কারণে বিভিন্নজন দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকা অফিসে ফোন করে উচ্ছেদ অভিযানের খবর জানতে চান। এ ব্যাপারে গতকাল রাতে জেলা প্রশাসক ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
প্রসঙ্গত, হবিগঞ্জ শহরকে নান্দনিক শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠা ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহিরসহ শহরের বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে গত রমজানের ঈদের রাতে সার্কিট হাউজে জেলা প্রশাসনের নৈশভোজের অনুষ্ঠানে পুরাতন খোয়াই নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ গত ১৫ সেপ্টেম্বর তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি উচ্ছেদের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক বলেছিলেন শহরকে নান্দনিক করার জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার উপরে ‘খোয়াই রিভার সিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্প বাস্তবায়নের স্ক্যাচম্যাপ তৈরি করে। প্রকল্পের মাধ্যমে নদী পুনখনন, তীর রক্ষা ও বনায়নের মাধ্যমে নান্দনিক রূপ দেয়া হবে। উচ্ছেদ অভিযানে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। ১৬ সেপ্টেম্বর ডায়াবেটিস হাসপাতালের পেছন থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়। পরবর্তীতে মাহমুদাবাদ, অনন্তপুর, হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল এলাকা, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে মুক্তিযোদ্ধাদের দখলকৃত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদ অভিযানে অনেকের বহুতল বিল্ডিং ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। আবার অনেকেই নিজেদের স্থাপনা স্বেচ্ছায় ভেঙ্গে ফেলেছেন। তবে উচ্ছেদের শুরু থেকে একটি মহল উচ্ছেদ অভিযান থেকে নিজেদের অবৈধ স্থাপনা, বাসা বাড়ি রক্ষার জন্য বিভিন্ন মহলে দৌঁড়ঝাপ করেছেন। তাদের বাসার সামনে সরকারি দলের নেতা পরিচয়সহ বিভিন্ন পরিচয়ে ব্যানার লাগিয়েছেন।
সূত্র জানায়, হবিগঞ্জ জেলা শহরকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে ১৯৭৬ সাল থেকে দুই দফায় মাছুলিয়া থেকে কামড়াপুর পর্যন্ত খোয়াই নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়। ১৯৭৬-৭৭ সালে মাছুলিয়া থেকে রামপুর পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এবং ১৯৭৮-৭৯ সালে রামপুর থেকে কামড়াপুর গরুর বাজার পর্যন্ত আরও দুই কিলোমিটার গতিপথ পরিবর্তন করা হয়। এরপর থেকে নদীর পুরনো অংশটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। আর এ ফাঁকে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক নেতা, সরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, আইনজীবীসহ নানা পেশার মানুষ নদীর পুরনো অংশটি দখলে নিতে থাকেন। এক সময় নদী অস্তিত্ব হারিয়ে কোথাও খাল, আবার কোথাও ড্রেনে পরিণত হয়। জেলা প্রশাসন পুরাতন খোয়াই নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদের উদ্যোগ গ্রহণ করে।