স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের জিএস ব্রাদার্স সিএনজি ফিলিং স্টেশনের অংশীদার গাজিউর রহমানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেছেন ইংল্যান্ড প্রবাসী অন্য দুই অংশীদার আবুল কালাম ও সামছুল ইসলাম। তারা উভয়েই মৌলভীবাজারের বাসিন্দা। সম্প্রতি দেশে আসা এই দুই প্রবাসী অংশীদার গতকাল বুধবার বিকেলে হবিগঞ্জ শহরের আশরাফ জাহান কমপ্লেক্সের সোনারতরী হোটেলে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন। এ সময় তারা গাজিউর রহমানের বিরুদ্ধে তাদেরকে ঠকানোর বিস্তারিত ঘটনা খুলে বলেন এবং সাংবাদিকদের মাধ্যমে হবিগঞ্জবাসীর কাছে এর বিচার চান।
ইংল্যান্ড প্রবাসী আবুল কালাম ও সামছুল ইসলাম বলেন, গাজীউর রহমান লন্ডনে তাদের সাথে একসাথে লেখাপড়া করেছেন। লন্ডনে আমাদের বড় ব্যবসা থাকায় গাজীউর রহমান আমাদেরকে অনুরোধ করে দেশে বিনিয়োগ করার জন্য। আমরা কোন টাকা কামানোর জন্য নয় বরং দেশে যোগাযোগ রক্ষার স্বার্থে এখানে বিনিয়োগ করি। কিন্তু গাজীউর রহমান আমাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে আমাদের নাম বাদ দিয়ে ফিলিং স্টেশনের জমি নিজেদের নামে ক্রয় করে এবং যৌথ ব্যবসার টাকা দিয়ে নিজেদের ব্যবহারের জন্য বিলাসবহুল গাড়ী ক্রয় করে। গাড়ীর চালক এবং বাসার কাজের লোকের বেতনও প্রদান করা হয় এই কোম্পানী থেকে। চুক্তি অনুসারে প্রতি বছর অংশীদারদের মধ্যে লাভ-ক্ষতির হিসাব বন্টন করার কথা থাকলেও ১০ বছর যাবৎ গাজীউর রহমান গং আমাদেরকে কোন লাভের টাকা বুঝিয়ে দেয়নি। এ নিয়ে আমাদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি হয়। পরে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও লন্ডনে বসবাসরত নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করেও আমাদের এই বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি। পরবর্তীতে আমরা বাধ্য হয়ে দেশে এসে হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহিরের শরণাপন্ন হই। তিনি যথেষ্ট আন্তরিকতার সাথে উভয়পক্ষের সাথে আলোচনা করে তাঁর ঢাকাস্থ এমপি হোস্টেল বাসভবনে ২০১৮ সালের ১২ মার্চ সালিশ বৈঠক আহবান করেন। আমাদের হিসাব অনুযায়ী গাজীউর রহমান গংদের কাছে ব্যবসায়িক লভ্যাংশের ৪ কোটি টাকা পাওনা হয়। কিন্তু গাজীউর রহমানের দেয়া হিসাব মতে এবং তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আমাদের লভ্যাংশ পাওনা হয় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। সালিশ বৈঠকের সভাপতি এমপি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির আমাদের অনেক বুঝিয়ে আমাদের লভ্যাংশের পাওনা হিসাবে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা মেনে নেয়ার অনুরোধ করলে আমরা অনেক ভেবে-চিন্তে আমাদের ব্যবসায়িক ক্ষতি স্বীকার করেও সালিশ বৈঠকের সভাপতির সিদ্ধান্ত মেনে নেই। এ ব্যাপারে একটি আপোষনামাও সম্পাদিত হয়। এই রায় অনুসারে গাজীউর রহমান বিভিন্ন তারিখে ভিন্ন ভিন্ন চেকে এমপি আবু জাহিরের নিকট ৫০ লাখ টাকা জমা করে এবং পরিবারের বিভিন্ন জনের নামে ৭০ লাখ টাকার চেক প্রদান করে। গাজীউর রহমানের দেয়া চেকের সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হলে আমরা এমপি আবু জাহিরকে বার বার তাগিদ দিলে তিনি গাজীউর রহমানকে টাকা পরিশোধ করার জন্য বার বার বলেন। কিন্তু গাজীউর রহমান টালবাহনা শুরু করলে এবং চেকগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে আসলে সেগুলো নগদায়নের জন্য ব্যাংকে উপস্থাপন করা হয় এবং ডিজঅনার হয়। পরে আমাদের অনুরোধে বাধ্য হয়ে এমপি আবু জাহির মামলার ব্যবস্থা করেন।
তারা আরও বলেন, আমাদের পাওনা ১ কোটি ২০ লাখ টাকা আত্মসাত করার হীন উদ্দেশ্যে সালিশ বিচারের সভাপতি এমপি আবু জাহির ও তার পরিবারের লোকজন এবং আমাদের বিরুদ্ধে ঢাকার যুগ্ম-জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিথ্যা দেওয়ানী মামলা দায়ের করে গাজিউর রহমান। এমপি আবু জাহিরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের সাথে আতাত করে বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে। এছাড়াও গাজীউর রহমান গং কৌশলে আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ব্যবসার সমুদয় টাকা আত্মসাত করার হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। আমাদের এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের টাকা আত্মসাতের কারণে আমরা বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। ৫দিন পূর্বে আমরা দেশে এসে এখনও বাড়িতে যেতে পারিনি। লন্ডনে ব্যবসা রেখে এই কয়দিন দেশে থাকায় আমাদের ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই দুর্বলতার বিষয়টি সে জানে বলেই আমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। তার হুমকিতে আমরা দেশে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছি।
দুই প্রবাসী অংশীদার আরও বলেন, এ ব্যাপারে আমরা দেশে এসে বিভিন্ন সংস্থায় আবেদন করেছি। তবে এর আগে আমরা কোন দপ্তরে আবেদন দেইনি। শুধুমাত্র বৃটিশ হাইকমিশনে একটি আবেদন করেছিলাম। এখন আমরা আইনী লড়াই করব। আর কোন কম্প্রোমাইজ মানি না। আমরা আর সালিশের নির্ধারিত টাকা মানি না। আমাদের যথাযথ প্রাপ্য আদায়ের জন্য লড়াই করব। আর সে সালিশে ৩ মাসের সময় নিয়ে দুই বছর সময় কাটিয়ে দিয়েছে। এই সময়ে আমাদের আরও প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা পাওনা হয়েছে। আমাদের লাভের টাকা ব্যাংকে না রেখে সে কোন কারনে খরচ করেছে। কোম্পানীর বেতনের টাকা প্রতিমাসেই সে অতিরিক্ত ১ লাখ টাকা গ্রহণ করাসহ নিজের ভোগ বিলাসে ব্যবহার করেছে। শুধু তাই নয় সে সরকারের সাথেও প্রতারণা করেছে। অধিক মুনাফার জন্য সিএনজি ফিলিং স্টেশনের মিটার টেম্পারিং করে ৫৮ লাখ টাকা সরকারকে জরিমানা প্রদান করেছে। সরকারের কাছে সে এই প্রতারণার কথা স্বীকারও করেছে। আর কোন ধরনের স্বার্থ ছাড়াই শুধুমাত্র আমাদের চাপে এমপি আবু জাহির সালিশ করে আজ প্রতারণা ও মামলার শিকার হওয়ায় আজ বিষয়টি সকলকে অবহিত করতে হবিগঞ্জে এসেছি। যদিও গাজীউর রহমান আমাদেরকে হুমকি দিয়ে বলেছিল আমরা হবিগঞ্জে আসতেই পারব না।
তারা আরও বলেন, আমাদের আর্থিক অবস্থার খবর নিলেই জানতে পারবেন আমাদের কেমন অবস্থা। আর গাজীউর রহমানের পারিবারিক বেকগ্রাউন্ড খোঁজ নিলেই তার সম্পর্কে ধারণা পাবেন। তারা প্রতারণার শিকার হওয়ার পর হবিগঞ্জের সাংবাদিকরা পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।