বেপরোয়া বাস কেড়ে নিয়েছে পবিত্র কোরআনের হাফেজকে

মোঃ আলাল মিয়া, নবীগঞ্জ থেকে ॥ বাবা মোবাশ্বির হোসেন সৌদিআরব প্রবাসী। মা ঝর্ণা বেগম গৃহিনী। সকালে মা ঝর্ণা বেগম ব্যক্তিগত কাজে নবীগঞ্জ শহরে আসেন, বিকেলে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে সিএনজি যোগে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী আইনগাঁও সিএনজি স্ট্যান্ডে পৌঁছান। সেখান থেকে মা ঝর্ণা বেগম পুত্র মোজাক্কির হোসেনকে মোবাইল ফোনে জানান আইনগাঁও থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। মায়ের কথামতো একটি সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে আইনগাঁও যান পুত্র পবিত্র কোরআনের হাফেজ মুজাক্কির হোসেন। সেখান থেকে পুনরায় অপর একটি সিএনজি অটোরিকশাযোগে নিজ বাড়ি গজনাইপুরে ফিরছিলেন মা-ছেলে। কিন্তু বিধি বাম, ঘাতক বাস কেড়ে নিয়েছে মুজাক্কিরকে। মা সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরলেও তাঁর প্রিয় সন্তান হাফেজ মোজাক্কির হোসেন ফিরেছেন লাশ হয়ে। এ ঘটনায় হতভম্ব পুরো দিনারপুর পরগণাবাসী।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে মাকে নিয়ে সিএনজি অটোরিকশাযোগে বাড়ি ফেরার পথে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জ উপজেলার জনতার বাজার নামক স্থানে দ্রুতগতির বেপরোয়া অজ্ঞাত বাসের চাপায় দুমড়ে-মুচড়ে যায় তাদের বহনকারী সিএনজি অটোরিকশাটি। এতে গুরুতর আহত হন হাফেজ মোজাক্কির হোসেন (২৩)। দ্রুত তাকে নেয়া হয় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাও চলছিল দ্রুতগতিতে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে প্রয়োজন দেখা দেয় রক্তের। রক্তের জন্য আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন অবিরত। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না মুজাক্কিরের। অবশেষে গতরাত ৮টার দিকে হাসপাতালের বেডে চিরনিদ্রায় চলে যান হাফেজ মোজাক্কির। এদিকে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে দিনারপুরে নেমে আসে শোকের ছায়া। তার এই অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউই। রাত সাড়ে ৯টায় মোজাক্কিরের মরদেহ নিয়ে লাশবাহী এম্বুলেন্স বাড়িতে পৌঁছালে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। কান্নায় বার বার মুর্চা যাচ্ছিলেন মা ঝর্ণা বেগমসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন। আজ শনিবার সকাল ১১টায় দক্ষিণ গজনাইপুর জামে মসজিদ মাঠ প্রাঙ্গণে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
মাত্র ২৩ বছরের টগবগে যুবক হাফেজ মুজাক্কির এভাবে অকালে সবাইকে ছেড়ে চলে যাবেন কেউই ভাবতে পারেনি। কিন্তু মৃত্যু চরম সত্য এ কথা আবারো প্রমাণিত হল মোজাক্কিরের চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের গজনাইপুর গ্রামের সৌদিআরব প্রবাসী মোবাশ্বির হোসেনের পুত্র মোজাক্কির হোসেন প্রায় দুই বছর পূর্বে গজনাইপুর জামেয়া ইসলামিয়া ফুরকানিয়া মাদ্রাসা থেকে কোরআনের হাফেজ হিসেবে সনদপত্র গ্রহণ করেন। কোরআনের হাফেজ হলেও তিনি পেশা হিসেবে বেছে নেন ব্যবসাকে। জনতার বাজারে খুলেন একটি লাইব্রেরী দোকান। ব্যবসাও চলছিল ভালোই। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার ও তার পরিবারের।