স্টাফ রিপোর্টার ॥ বানিয়াচং উপজেলার মন্দরী ইউনিয়নের উত্তর সাঙ্গর গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে দুই পুলিশ কনস্টেবলসহ শতাধিক লোক আহত হয়েছে। এর মাঝে গুরুতর আহত অবস্থায় ৩০ জনকে সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ১৯ জনকে সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও ৬ জনকে ঢাকা রেফার করা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৪ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এ সময় অভিযান চালিয়ে ছাত্রলীগ কর্মী তোফাজ্জল হক তালুকদারের বাড়ি থেকে একটি দেশীয় তৈরি পিস্তল ও ৩ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়াও শতাধিক দেশীয় অস্ত্র ও সংঘর্ষে ব্যবহৃত ঢাল উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, উত্তর সাঙ্গর গ্রামের বাসিন্দা, ইউপি মেম্বার কাজী জানে আলম এবং জেলা ছাত্রলীগের সদস্য তোফাজ্জল হক তালুকদারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছিল। এ বিরোধের জের ধরে ইতিপূর্বে তাদের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তোফাজ্জল তালুকদারের ছোট ভাইয়ের সাথে ইউপি মেম্বার কাজী জানে আলমের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তোফাজ্জল তালুকদারের ছোট ভাই ইউপি মেম্বার জানে আলমের উপর হামলা চালিয়ে আহত করে। পরবর্তীতে এ খবর জানে আলম মেম্বারের পক্ষের লোকজনদের মধ্যে ছড়িয়ে তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রতিপক্ষ তোফাজ্জল তালুকদারের লোকজনদের ডাকাডাকি করেন। এক পর্যায়ে তোফাজ্জল তালুকদারের পক্ষের লোকজনও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জানে আলম পক্ষের লোকজনদের ডাকাডাকি করে। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে স্থানীয় মুরুব্বীয়ান পরিস্থিতি শান্ত করতে উভয়পক্ষের বাড়িতে গিয়ে আলোচনায় বসার চেষ্টা করেন। এর মধ্যে উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে বানিয়াচং সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মো. সেলিম ও সুজাতপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ ধ্রুবেশ চক্রবর্তীসহ পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৪ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এ সময় সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে কনস্টেবল বাদল ও মঈন আহত হন। আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। এ ঘটনার পর পরই পুলিশ বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে। একই সময়ে পুলিশ ছাত্রলীগ কর্মী তোফাজ্জল হক তালুকদারের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার বিছানার নিচ থেকে একটি দেশীয় তৈরি পিস্তল ও ৩ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে।
অপরদিকে সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় টেটাবিদ্ধ কাজী আব্দাল মিয়া, কাজী আব্দুল্লাহ, কাজী বেনু মিয়া, কাজী কবির আনছারী, স্বপন মিয়া, আবুল খায়ের, সালমান মিয়া, তোফায়েল মিয়া, ইউপি মেম্বার কাজী জানে আলম, বাছির মিয়া, কাজী মাছুম, কাজী নোমান, কাজী মনির, শামীম মিয়া, কাজী জুয়েল, ফারুক মিয়া, ফখরুল মিয়া, উজ্জ্বল মিয়া, নোমান মিয়া, এনামুল হক, সালেক মিয়া, সোহেল মিয়া ও রাহাত মিয়াকে সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মাঝে যারা আশঙ্কাজনক তাদেরকে ঢাকা ও সিলেট প্রেরণ করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মো. সেলিম জানান, সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে আমাদের দুই পুলিশ কনস্টেবল আহত হয়েছে। আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি পরবর্তীতে যাতে আর সংঘর্ষে জড়িত হতে না পারে সেজন্য বিভিন্ন বাড়িতে অভিযান চালিয়ে শতাধিক টেটা, ফিকলসহ দেশীয় অস্ত্র ও ঢাল উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া ছাত্রলীগ নেতা তোফাজ্জল হক তালুকদারের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার বিছানার নিচ থেকে একটি পিস্তল ও ৩ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় উত্তর সাঙ্গর গ্রামের মতি মিয়া তালুকদারের ছেলে তোফাজ্জল হক তালুকদারের বিরুদ্ধে বানিয়াচঙ্গ থানায় অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন বর্তমানে এলাকার পরিবেশ শান্ত আছে। তবে গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া পুলিশ আহতের ঘটনায় পুলিশ এসল্ট মামলার প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহী দৈনিক হবিগঞ্জের মুখকে জানান, তোফাজ্জল হক তালুকদার জেলা ছাত্রলীগের কোন পদ-পদবীতে নেই।
অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ছাত্রলীগ কর্মী তোফাজ্জলের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা ॥ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশসহ শতাধিক লোক আহত হয় ॥ গুরুতর আহত ৬ জনকে ঢাকা ও ১৯ জনকে সিলেট রেফার করা হয়েছে। ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com