পেঁয়াজের দাম কমার কোন লক্ষণই নেই

এসএম সুরুজ আলী ॥ পেঁয়াজের দাম কমার কোন লক্ষণই দেখছেন না ক্রেতারা। হবিগঞ্জে পেঁয়াজের দাম ক্রেতাদের নাগালে বাইরে থাকলেও অন্যান্য সমসলার দাম বাড়েনি। নিত্য প্রয়োজনীয় নিজের মধ্যে শাক-সবজির দাম কিছুটা কমেছে। পেঁয়াজের দাম আকাশছোয়া হওয়ার কারণে বাজার খরচ সামাল দিতে গিয়ে ক্রেতাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। গতকাল হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজার কাঁচামাল হাটার বিভিন্ন খুচরা পাইকারী পেঁয়াজের দোকানে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পেঁয়াজ এলসি পাইকারী বাজার থেকে ৮৬ টাকায় ক্রয় করে বিক্রি করছেন ৯২ টাকায়। আর বারমা প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮৩/৮৫ টাকা দামে পাইকারী ক্রয় করে খুচরা বাজারে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। চৌধুরী বাজার ছাড়া শহরের প্রধান সড়কের পাশের বিভিন্ন দোকানগুলোতে বিক্রেতারা ৯৬ থেকে ১শ’ টাকা কেজি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। গ্রামের বাজারে ১শ’ টাকার চেয়ে বেশি দামেও পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত চৌধুরী বাজারে পরিদর্শন করায় ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত মূল্য টাঙ্গিয়ে পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল বিক্রি করছেন। গতকালের মূল্য তালিকা অনুযায়ী চৌধুরী বাজার কাঁচামাল হাটায় প্রতি কেজি পোলাওর চাল ৮২ টাকা, আস্তা মরিচ ১৭০ টাকা, গুড়া মরিচ ২৩৫ টাকা, আস্তা হলুদ ১১০ টাকা, আস্তা ধনিয়া ১০৫ টাকা, ছানা ৭২ টাকা, রসুন এলসি ১২৫ টাকা, রসুন দেশি ১২৫ টাকা, চিনি ৫৬ টাকা, সয়াবিন লোজ ৭০ টাকা, মশুরী দেশি ১১২ টাকা, মশুরী মোটা ৬০ টাকা, সাদা মটর ৩৫ টাকা, সাগোদানা ৯৫ টাকা, বেশন ৬৫ টাকা, জিরা আস্তা ৩৩০ টাকা, মুগডাল ১০৫ টাকা, আটা লোজ ২৫ টাকা টাকা দামে বিক্রি করা হয়েছে। চৌধুরী বাজার কাঁচামাল হাটার কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫৫/৬০ টাকা দামে বিক্রি করা হয়েছে। পেঁয়াজের আমদানি না থাকার কারণে খুচরা ব্যবসায়ীদের পাইকারী বাজার থেকে অনেকটা বেশি দামে পেঁয়াজ ক্রয় করতে হচ্ছে। যে কারণে খুচরা ব্যবসায়ীদেরও বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার মনটরিং করা হচ্ছে। প্রশাসনের নিধারিত তালিকা অনুযায়ী ক্রেতাদের কাছে মালামাল বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। তালিকার বাহিরে ক্রেতাদের কাছ কোন বাড়তি দাম নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পেঁয়াজের বাজারের দাম বাড়া নিয়ে প্রকাশে কোন খুচরা ব্যবসায়ীরা কথা বলতে চান না। পাইকারী ব্যবসায়ীরা জানান, পেঁয়াজের আমদানি কম হচ্ছে। হওয়ার কারণে আমাদের বাড়তি দামে পেঁয়াজ ক্রয় করতে হয়। সে অনুযায়ী খুরচা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে
পেঁয়াজ কিনতে আসা বানিয়াচং উপজেলার আতুকুড়া গ্রামের আলাউদ্দিন মিয়া জানান, পেঁয়াজ গৃহিনীদের রান্নার নিত্যদিনের সঙ্গি। পেঁয়াজের দাম বাড়ায় আগের চেয়ে এখন পেঁয়াজ কম ক্রয় করছি। তারপরও তো আগের চেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে। বাজার খরচ সামাল দিতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। পেঁয়াজ বিক্রেতা শাহ আলম জানান, গত শুক্রবারের পর থেকে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি আমাদের খুচরা ৯৬/১০০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। ১ সপ্তাহ আগে কমে গিয়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬০ টাকায় বিক্রি হলেও দেশি পেঁয়াজ এখন ১০০ টাকা বিক্রি করতে হয়।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে এ আশা প্রকাশ করে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সদস্য আবু রায়হান আল বিরুনি বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশে পেঁয়াজের দাম কমে আসবে। কিন্তু গত এক মাসের বেশি সময় পূর্ণ হলেও দাম কমেনি পেঁয়াজের দাম। বর্তমানে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের কেজি ৮৩/৮৫ টাকার ঘরে। আর খুচরা বাজারে ৯০ ও ৯২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ওইদিন আবু রায়হান বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমে আসবে। আমরা যথেষ্ট নিশ্চিত যে, আজকের বৈঠকের পর দাম কমে আসবে। এ সময় প্রায় একই আশাবাদ ব্যক্ত করেন, বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দীনও। তিনি বলেন, যে পরিমাণ পেঁয়াজ মজুত ও আমদানির পর্যায়ে রয়েছে, তাতে সহসাই দাম কমে আসবে।
বাণিজ্য সচিব বলেন, দেশে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। ফলে দাম নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। শিগগিরই পেঁয়াজের দাম কমে স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসবে। কিন্তু বাজারে কোনো প্রভাব নেই।
এদিকে, পেঁয়াজের দাম কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও কোনটাই যেন ফলপ্রসূ হচ্ছে না। বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে এলসি খোলা হলেও তা থেকে কোন ফল আসছে না।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম। দুই দিনেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয় ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। মাঝে মিয়ানমার ও মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানির ফলে কিছুটা দাম কমলেও আমদানি করা পেঁয়াজ ভালো পাননি ব্যবসায়ীরা। ফলে, অন্যান্য দেশে এলসি খোলা হলেও পেঁয়াজ আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না তারা।
এদিকে, বাজারে শীতের নতুন সবজি আসায় দাম আগের চেয়ে কিছু কমেছে। চৌধুরী বাজার কাঁচামাল হাটা ঘুরে দেখা গেছে, শীতের সবজিতে বাহারি রঙে সেজেছে দোকানগুলো। শীতকালীন সবজির তালিকায় বাজারে উঠেছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, শিম, বরবটি, লাউ, খিরা, পালংশাক। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি টমেটো ৫৫/৬০ টাকা বিক্রি হয়েছে। ১ সপ্তাহ পূর্বে টমেটোর দাম ছিল ৭৫/৮০ টাকা। প্রতি শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি। ১ সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি শিমের মূল্য ছিল ৮৫/১০০ টাকা কেজি। আর গাজর বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। শীতের সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। এক সপ্তাহ পূর্বে প্রতি কেজি ফুলকপি ও বাঁধাকপির মূল্য ছিল ৭০/৮০ টাকা। বেগুন ৪০/৪৫ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। আগে প্রতি কেজি ৬০ টাকা ছিল। পেঁপে প্রতি কেজি ১২/১৫ টাকা, আলু ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সব সবজির দাম কমেছে।