দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাঝে সাদাছড়ি প্রদান

চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ কারিতাস সিলেট আঞ্চলিক অফিসের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে সমাজ কল্যাণ, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য উন্নয়নে অভিগম্যতার সক্ষমতা’ (এসডিডিবি) প্রকল্পের আর্থিক সহায়তায় গত ১৫ অক্টোবর সকাল ৯টায় শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার সুদিয়াখলা গ্রামের সাধু ফ্রান্সিস জেভিয়ার ক্যাথলিক মিশনে অর্ধ দিবসব্যাপী বিশ্ব সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস পালন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী অফিসার সুমি আক্তার। উক্ত অনুষ্ঠানে ১৫০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিল। শুরুতে ছিল বর্ণাঢ্য র‌্যালি। র‌্যালিটি মিশন প্রাঙ্গণ হতে শুরু হয়ে সুদিয়াখলা গ্রাম প্রদক্ষিণ করে। এরপর আসন গ্রহণ, সার্বজনীন প্রার্থনা এবং অতিথিদের (দৃষ্টি প্রতিবন্ধী) ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন বিইডিসি (ইধংরং ঊফঁপধঃরড়হ ভড়ৎ ফরংধফাধহঃধমব পযরষফৎবহ) স্কুলের শিক্ষক তাপস এক্কা। সাবর্জনীন প্রার্থনা পরিচালনা করেন ব্রাদার (সেমিনারিয়ান) মাইকেল হাঁসদা। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরেন কারিতাস সিলেট অঞ্চলের এসডিডিবি প্রকল্পের জুনিয়র কর্মসূচি কর্মকর্তা লুটমন এডমন্ড পডুনা। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস এবং সাদাছড়ি যেভাবে এসেছে তিনি সেই বিষয় তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রয়েছে। এদের সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে না পারা। ‘মানুষ মানুষের জন্য’ এই মানবিকতাকে সামনে রেখে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের রাস্তা পারাপারের সময় আমাদের নিজ উদ্যোগে তাদেরকে সহযোগিতা করা উচিত। দেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চলাচলের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বিধান করা খুবই জরুরী। তাই বাংলাদেশ ট্রাফিক আইনটি সংশোধনে নিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সাদাছড়ি উত্তোলন করলে ট্রাফিককে লাল সিগনাল দিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রাস্তা পারাপার না হবে, ততক্ষণ যানবাহন বন্ধ রাখতে হবে।
প্রধান অতিথি ছিলেন শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুমি আক্তার তার বক্তব্যে বলেন, সাদাছড়ি দিবস আসলে কেন পালন করা হয়, যারা চোখে দেখতে পায় না তারা সাদাছড়ি ব্যবহার করে পথ চলতে পারে, নিজের মনের মত ব্যবহার করতে পারে, সাদাছড়িটি হচ্ছে তাদের একমাত্র সঙ্গী। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরকে অনেকে বোঝা মনে করে। কিন্তু এটা তো তাদের দোষ নয়। অনেক সময় দেখা যায় গর্ভাবস্থায় মায়েরা ডাক্তারের কাছে যাই না এবং চিকিৎসা গ্রহণ করে না এর মাধ্যমে শিশুরা প্রতিবন্ধী হতে পারে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুরা কিন্তু অনেক পরিবারকে স্বচ্ছল করে তোলে। কারিতাসের সমতা সেন্টারে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ও বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুরা আবাসিক সেন্টারে থেকে অনেক সেবাযতœ পাচ্ছে। তাছাড়া ইশারা ভাষা এবং ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়ালেখা করার সুযোগ পাচ্ছে। এই ধরনের শিশুদের অবহেলা না করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। সরকারের পাশাপাশি কারিতাস পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বিশেষ ভাবে অবদান রাখছে। আমরা আশাবাদী একদিন এই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী আর পিছিয়ে থাকবে না। উন্নয়নের মূল¯্রােতধারায় তারাও একদিন এগিয়ে যাবে।
পরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ৯ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর সাদাছড়ি প্রদান করা হয়।