ফখরুল আলম
সাম্প্রতিক সময়ে লাখাই উপজেলার ভবানীপুর প্রামের পশ্চিমে অবস্থিত স্থানীয় শ্মশানঘাট সংলগ্ন স্থানটি পর্যটনের নতুন জায়গা হিসেবে খ্যাতি লাভ করতে চলেছে। স্থানটি লাখাই উপজেলার ৬নং বুল্লা ইউনিয়নের লুকড়া-মাদনার মধ্যবর্তী অন্যতম গ্রাম ভবানীপুরে অবস্থিত। স্থানটি এমনই নয়নাভিরাম যে, এখানে বিশাল জায়গা জুড়ে রয়েছে অনেক বছরের পুরনো কিছু গাছপালা, যা প্রকৃতিগতভাবেই এলোমেলোভাবে সাজানো বটে। দেখে মনে হয় যেন বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে এগুলোকে সাজিয়ে রাখা হয়েছে একই মাপের ক্যাটাগরিতে। মনে হয় যেন প্রতিদিনই এই গাছ ও ডালপালা সজ্জিত রাখা আর সৌন্দর্য্য বর্ধিত করার কাজে হয়তো কোন না কোন ব্যক্তি নিয়োজিত আছেন। জায়গাটিকে পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় করে তোলার ক্ষেত্রে বেগুনাই ভবানীপুর সীমানা ঘেঁষে বয়ে যাওয়া ভাটারিয়া বিলের উপরে এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির কর্তৃক নবনির্মিত ব্রিজটির ভূমিকা অনস্বীকার্য।
এই জায়গার সৌন্দর্য্য মৌসুমে মৌসুমে পরিবর্তনও হয়ে থাকে। তাই এর অপরূপ বৈচিত্র্য এই মফস্বল এলাকাটিকে আরো ঋদ্ধ করেছে। তাই হয়তো জায়গাটি পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
বর্ষা মৌসুমে বিস্তীর্ণ জলরাশির বুক ছিড়ে বয়ে যাওয়া লুকড়া-মাদনা রাস্তাটি ঘেঁষে থাকা এই জায়গাটি দেখে মনে হয় এক লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার পাঁচশত সত্তর বর্গ কিলোমিটার এর মধ্যে দৃশ্যমান শুধু এই সামান্য জায়গাটুকুই সৌন্দর্য্য বিলিয়ে যাচ্ছে অভিরাম। বলা যায়- চতুর্দিকে পানির মধ্যখানে যেন ভেসে থাকা ছোট্ট একটা দ্বীপ। পড়ন্ত বিকেলে বয়ে যাওয়া মৃদু বাতাসে সৃষ্ট ছোট ছোট ঢেউয়ের কল কল শব্দে মনে হয় যেন সাগরের গর্জনও হয়তো এর কাছে অতি সামান্য। তাইতো আগত পর্যটকদের মনে এমনভাবে দোলা দিয়ে যায় যেন কল্পনার রাজ্যে সমূদ্র সৈকতের সৌন্দর্য্য কুড়িয়ে নিচ্ছে। তাইতো আগত পর্যটকদের কাছ থেকে একে ‘মিনি কক্সবাজার’ বলতেও শোনা যায়।
আর হেমন্ত মৌসুমে উত্তরে নয়নাভিরাম মাঠ আর ফসলি জমি পেরুলেই খোয়াই নদী। দক্ষিণে তাকালে মনে হয় হাজার হাজার হেক্টর শুধু ফসলি জমির সমন্বয়ে তৈরি এ যেন এক বিশাল কৃষি গবেষণাগার। এই কৃষি জমিগুলোও আবার একেক মৌসুমে একের রঙের রূপ বিলিয়ে যায়। যতদূর দৃষ্টি যায় সবুজ মাঠ আর সোনালি শস্যের ক্ষেতের পরতে পরতে বসে থাকা ক্লান্ত শ্রমিক আর রাখালের অপূর্ব বাঁশির সুর যেন আগত পর্যটকদের মনে শিহরণ জাগায়। পূর্বদিকে তাকালে নবনির্মিত আঁকাবাঁকা পথটি দেখে মনে হয় যেন ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোঁয়া লেগেছে সবেমাত্র এই মফস্বল এলাকাটিতেও। আর একটু পূর্ব দিকে এগুলেই “ভবানীপুর উচ্চ বিদ্যালয়” যেটি বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহিরের প্রচেষ্টায় “ভবানীপুর হাই স্কুল এন্ড কলেজ”-এ উন্নীত হয়েছে। পশ্চিমে বেগুনাই ভবানীপুর সীমানা ঘেঁষে বয়ে যাওয়া ভাটারিয়া বিলের উপরে এমপি মহোদয় কর্তৃক নবনির্মিত ব্রিজ এবং এটি পেরুলেই বেগুনাই-এর সীমানা। চতুর্দিকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য মিলিয়ে ব্রীজটি এখানকার সৌন্দর্য্যকে এতটাই বৃদ্ধি করেছে যে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য পিপাসু যে কেউ এই পথ ধরে যেতে যেতে ব্রীজটিতে স্মৃতিস্বরূপ একটি ছবি অন্তত মিস করতে পারে না।
এখানে আগত পর্যটকদের সাথে কথা বলে জানা যায় তাদের অভিব্যক্তি। তারা মনে করেন- এমন পুরনো স্মৃতি বিজরিত গাছপালা সমৃদ্ধ নয়নাভিরাম এই জায়গাটি খুব শিঘ্রই হয়তো পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারে। কারণ এটি এমনই এক স্থান যেখানে যে কোন মৌসুমেই যে কোন জায়গা থেকে আসা সুবিধাজনক। হেমন্তকালে সিএনজি, অটোরিক্সা, প্রাইভেট কার নিয়ে অনায়াসে (লুকড়া টু মাদনা) রাস্তা ধরে যে কেউ আসতে পারে স্বপরিবারে কিংবা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘুরতে। এছাড়া বাইক নিয়ে হবিগঞ্জ শহর থেকে মাত্র ২৫-৩০ মিনিট সময়ের মধ্যেই আসার মতো জায়গা এটি। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে নৌকা কিংবা লঞ্চযোগে চতুর্দিক থেকেই আসার সুবিধা রয়েছে এই জায়গাটিতে।
আমরা যতদূর জানি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে যুগে যুগে ভ্রমণকারীরা মুগ্ধ হয়েছেন। এর মধ্যে প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক স্থান, মসজিদ এবং মিনার, সমূদ্র সৈকত, পাহাড় ইত্যাদি অন্যতম। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি এলাকা বিভিন্ন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে বিশেষায়িত। যেমন- আমাদের হবিগঞ্জের বানিয়াচং পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গ্রাম হিসেবে একচ্ছত্র ইতিহাস সৃষ্টি করে আছে। অন্যদিকে সাগরদিঘী পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও অনেকটা সাড়া ফেলেছে।
সুতরাং বলা যায়- কোন একটি স্থান যখন পর্যটকদের আকর্ষিত করে সেটা ঐতিহাসিক কারণে হউক কিংবা সৌন্দর্য্যরে কারণেই হউক সেটাই ধীরে ধীরে পর্যটকদের উপস্থিতি বৃদ্ধি করে। আর এভাবেই এক সময় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়।
তাই আমরাও আশা রাখতে পারি কোন একদিন আমাদের এই জায়গাটিও বাংলাদেশ তথা বিশ্বের বুকে স্থান করে নিতে পারে। হয়তো এর জন্য কালক্ষেপন হতে পারে। তবে সরকার তথা স্থানীয় সংসদ সদস্য মহোদয়ের সৃজনশীল চিন্তা-ভাবনায় এই বিষয়টি রাখলে হয়তো খুব শিঘ্রই আমাদের কাক্সিক্ষত স্বপ্ন পূরণ হতে পারে।
লেখক- ফখরুল আলম
বেগুনাই, লাখাই, হবিগঞ্জ।