এম.এ আহমদ আজাদ, নবীগঞ্জ থেকে ॥ ভূয়া লন্ডনী কন্যা সেজে ফেসবুকের মাধ্যমে নতুন প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে রিমা আক্তার রিতা নামে এক তরুণী। নানা সময়ে ভিন্ন ভিন্ন ঠিকানা ব্যবহার করে ফেসবুকে লন্ডনী কন্যা পরিচয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে যুবকদের আকর্ষণ করে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে সে। ফেসবুকের মাধ্যমে ধণাঢ্য পরিবারের যুবকদের সাথে প্রেমে সম্পর্ক গড়ে তুলে প্রতারণা করছে। লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। একের পর এক বিয়ের খেলায় মেতে উঠেছে রিতা। এখন পর্যন্ত সে ১০টি বিয়ের অভিযোগ থাকলেও ৩টি বিয়ের লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১ম ও ২য় স্বামীর বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে একাধিক মামলা করেছে। লন্ডনী কন্যা সেজে বিয়ে করে ২ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আত্মগোপন করেছে।
মামলা ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলা সদরের সোনাপুর গ্রামের তেরা মিয়ার কন্যা রিমা আক্তার রিতা লন্ডনী কন্যা সেজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন যুবকের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে। এরপর ফেসবুকে সম্পর্ক গড়ে তুলে নবীগঞ্জের মিঠাপুর গ্রামের এক ধণাঢ্য যুবক মৌলভীবাজার শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ফয়সর আহমদ। তার সাথে মোবাইল ফোন ও ফেসবুকে লন্ডনী কন্যা রিমা আক্তার রিতার ফোনে আলাপ ও সরাসরি দেখা সাক্ষাত শুরু হয়। এতে প্রেমিক ফয়সর আহমদ রিতার প্রেমে মুগ্ধ হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে বিষয়টি লন্ডনী কন্যার আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে জানাজানি হয়। পরে দু’পক্ষের সম্মতিক্রমে লন্ডনী কন্যা পরিচয়ধারী রিমা আক্তার রিতার মা পিয়ারা বেগম, মামা ফারুক মিয়া ও জাবেদ মিয়ার মাধ্যমে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হয়। বিয়ের পূর্বেই লন্ডনী কন্যার আত্মীয়-স্বজনরা প্রেমিক ফয়সর আহমদকে লন্ডন নেয়ার খরচ বাবদ ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। এতে প্রেমিক ফয়সর বিয়ের আগেই নগদ ৫ লাখ টাকা প্রদান করে। পরে গত ৯ জানুয়ারি সিলেট নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে ১ লাখ টাকা দেনমহর সাব্যস্ত করে ফয়সর আহমদ ও রিমার বিবাহ হয়। এরপর শ^শুর বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে নব-দম্পত্তি হানিমুন করেন। কিছুদিন পর হঠাৎ করে লন্ডনী কন্যা রিতা অসুস্থ হয়ে পড়লে স্বামী মৌলভীবাজার শহরের শ্রীমঙ্গল রোডের একটি ডায়াগনিস্টক সেন্টারে নিয়ে যায়। সেখানের পরীক্ষা নিরীক্ষার পর রিমা ২ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ধরা পড়ে। এতে স্বামী ফয়সর আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠে। এর কিছুদিন পর চলতি বছরের ১৪ মার্চ ফয়সর তার স্ত্রীকে মোবাইলে বার বার কল দিলে সে মোবাইল রিসিভ করেনি। ফয়সর তার শ^শুর বাড়ি মৌলভীবাজার সোনাপুরে যায়। সেখানে তার স্ত্রীকে না পেয়ে ফয়েজ তার শাশুড়িকে রিমার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রিমা তো বাড়িতে নেই। আমরা তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। এ কথা শুনে স্বামী ফয়েজ হতাশ হয়ে পড়ে।
পরে ফয়সর আহমদ এলাকার লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারে, রিমা আক্তার রিতা কোন লন্ডনী কন্যা নয়। সে লন্ডনী কন্যা সেজে বিভিন্ন যুবকের সাথে প্রতারণার মাধ্যমে এসব করছে। এ খবরে স্বামী ফয়সর আহমদ আরো বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে আবারও সে তার শ^শুর বাড়িতে যায়। সেখানে গিয়ে রিমার আত্মীয়-স্বজনের সাথে লন্ডন নেয়ার জন্য যে ৫ লাখ টাকা দিয়েছিল তা ফেরত চাইলে তারা ফয়সর আহমদকে শান্তনা দিয়ে বলেন, তুমি বিষয়টি কাউকে বলিও না। তোমার টাকা আগস্ট মাসের ৩১ তারিখ আমরা দিয়ে দেব। এতে ফয়সর আহমদ নিশ্চুপ সেখান থেকে চলে আসে। তাদের কথা অনুযায়ী তারিখ মতো টাকা না পাওয়ায় আবারও ফয়সর আহমদ ওই এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ মুরুব্বিয়ানদের নিয়ে তাদের বাড়িতে গিয়ে নগদ ৫ লাখ টাকা ফেরত চায়। তখন তারা মারমুখি হয়ে উঠে। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে ভূয়া লন্ডনী কন্যার আত্মীয়-স্বজন টাকা আত্মসাতের জন্য নানা পায়তারা শুরু করে। এক পর্যায়ে ভূয়া লন্ডনী কন্যাকে আড়াল করে একের পর এক মিথ্যা মামলা করে। পরে ফয়সর আহমদ জানতে পারে এর আগেও রিমার বিয়ে হয়েছিল এবং সেই স্বামীর উপরও রিমার মামলা আছে।
পরে ফয়সর আহমদ স্ত্রী ও তার আত্মীয়-স্বজনদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করেন। এ মামলার খবর পেয়ে আসামীরা বাদী ফয়সর আহমদকে প্রকাশ্যে হুমকি দেয় মামলা তুলে নেয়ার জন্য। এমন কথা শুনে বাদী মৌলভীবাজার মডেল থানায় নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে একটি সাধারণ ডায়রি করে। ডায়রী নং ২৫৩।
ভূয়া লান্ডনী কন্যা রিমা আক্তার রিতা মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের কালিনগর গ্রামের আতিকুর রহমানের পুত্র আরিফ রহমানকে বিয়ে করে। আরিফের সাথে দীর্ঘদিন মোবাইল ফোনে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে। সে ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকার দেনমোহরে রিমা ও আরিফের বিবাহ হয়। বিয়ের প্রায় সাড়ে ৩ মাসের মাথায় রিমা আক্তার রিতা বাদী হয়ে আরিফ রহমানের উপর ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবির জন্য বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (সদর) মৌলভীবাজারে একটি মামলা দায়ের করে।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com