অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার ॥ ৬ পুলিশ আহত

ঘটনাস্থল থেকে ১টি দেশীয় পাইপগান ৫ রাউন্ড রাবার কার্তুজ ২টি রামদা ১টি লোহার রডসহ ডাকাতির কাজে ব্যবহারের সরঞ্জামাদি উদ্ধার করে পুলিশ
ডাকাত সর্দার কুদরত আলী ২টি বিয়ে করলেও যেখানে ডাকাতি করতো সেখানেই মহিলাদের ধর্ষণ করতো

এসএম সুরুজ আলী ॥ শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার সুরাবইয়ে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে কুদরত আলী নামে আন্তঃবিভাগীয় ডাকাত সর্দার নিহত হয়েছে। নিহত ডাকাত কুদরত আলী (৪৫) হবিগঞ্জ সদর উপজেলার দড়িয়াপুর গ্রামের বাসিন্দা ওমর আলীর ছেলে। মঙ্গলবার ভোররাতে সুরাবই গ্রামের ফজলু মিয়ার বাঁশ বাগানে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় ৬ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদেরকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ১৪টি ডাকাতির মামলা রয়েছে।
গতকাল বিকেলে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ উল্ল্যা (বিপিএম-পিপিএম-সেবা) জানান, মঙ্গলবার ৩টার দিকে রাত্রীকালীন তদারকী করাকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হবিগঞ্জ সদর সার্কেল) মো. রবিউল ইসলাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারেন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশর্^বর্তী সুরাবই গ্রামের ফজলু মিয়ার বাঁশ বাগানে একদল ডাকাত ডাকাতির প্রস্তুতি নিয়েছে। এ খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ইন-সার্ভিস) শেখ মোঃ সেলিম, হবিগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মানিকুল ইসলাম, শায়েস্তাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোজাম্মেল হকসহ শায়েস্তাগঞ্জ থানা ও ডিবি পুলিশের একটি টিম রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে ডাকাতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতরা পুলিশ উপর হামলা ও তাদের লক্ষ করে এলোপাতারি গুলিবর্ষণ করে। এক পর্যায়ে আত্মরক্ষার্থে পুলিশ পাল্টা গুলি ছুড়লে ডাকাতরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। এ সময় অন্যান্য ডাকাতরা পালিয়ে গেলেও ঘটনাস্থল থেকে কুদরত আলীকে আহত অবস্থায় আটক করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজনও ডাকাতদের আটক করতে পুলিশকে সহযোগিতা করেন। স্থানীয় লোকজন আটককৃত ডাকাতকে দেখে পুলিশকে জানান সে কুদরত আলী ডাকাত। পরে পুলিশ আহত অবস্থায় ডাকাত কুদরত আলীকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে ১টি দেশীয় পাইপগান, ৫ রাউন্ড রাবার কার্তুজ, ২টি রামদা, ১টি বাঁকানো লোহার বড় রডসহ ডাকাতির কাজে ব্যবহারের সরঞ্জমাদি উদ্ধার করা হয়। ডাকাতদের হামলায় ডিবির এসআই আবুল কালাম আজাদ, এসআই মোজাম্মেল মিয়া, কনস্টেবল জয়নাল আবেদিন, নূরুল ইসলাম, রনি কর ও রিপন আহত হন। তাদের উদ্ধার করে হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
পুলিশ সুপার আরো জানান, নিহত ডাকাত কুদরত আলী আরো একাধিক ডাকাতির ঘটনার সাথে জড়িত। ৫ অক্টোবর লাখাইয়ে তার ৫ জন সহযোগীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি এলইডি টেলিভিশন, রামদা, রড, লোহার পাইপ, হাতুরি, বটি দা উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত ওই ৫ ডাকাত পুলিশকে জানায়, লাখাই উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের মিলন মিয়ার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনাটি নিহত ডাকাত কুদরত আলীর নেতৃত্বে ঘটেছে। অপরদিকে গত ৯ জানুয়ারি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শায়েস্তাগঞ্জের সুতাং এলাকায় সিলেটের বালাগঞ্জের লন্ডন প্রবাসী নুরুল ইসলামের গাড়ীতে ঢিল মেরে আটক করে নিহত কুদরত আলীর নেতৃত্বে ৮/১০ ডাকাত ডাকাতির ঘটনা ঘটায়। এ সময় ডাকাতরা গাড়ী থেকে প্রবাসীর ব্যবহৃত ১৫ লাখ টাকা দামের একটি ডায়মন্ডের ঘড়ি, নগদ টাকাসহ মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় প্রবাসী নুরুল ইসলাম শায়েস্তাগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ অভিযান চালিয়ে কুদরত আলীর সহযোগী ৬ ডাকাতকে গ্রেফতার এবং প্রবাসীর ডাকাতি হওয়া মালামাল উদ্ধার করে। পরে গ্রেফতারকৃত ডাকাতরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। কিন্তু ডাকাত সর্দার কুদরত আলী ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যায়।
ভয়ঙ্কর এই ডাকাত সর্দার কুদরত আলী ২টি বিয়ে করলেও যেখানে ডাকাতি করতো সেখানেই মহিলাদের ধর্ষণ করতো। সে সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করতো। বিরুদ্ধে সিলেট মেট্রোপলিটন থানাসহ বিভিন্ন থানায় ১৪টি ডাকাতির মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরো মামলা আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এছাড়া তার বাড়িতে ডাকাতির কোন মালামাল থাকলে পুলিশ তাও উদ্ধার করবে। পুলিশ সুপার আরো বলেন, ডাকাতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ৪০ জন ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যান্য ডাকাতদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের অব্যাহত অভিযান চলছে। এসব ডাকাতদের গ্রেফতার করা হলে জেলার মানুষ রাতে আরামে-আয়েশে ঘুমাতে পারবেন। তিনি বলেন, সকলের সহযোগিতায় পুলিশ আন্তরিকভাবে কাজ করে হবিগঞ্জের আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা ও সামাজিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে দাঙ্গা, মাদক, ইভটিজিংসহ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করেছে পুলিশ। তিনি বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ডাকাতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মহাসড়কের হবিগঞ্জের সীমান্ত পর্যন্ত রাস্তার পাশের জঙ্গল পুলিশের পক্ষ থেকে পরিস্কার করা হবে। সকলের সহযোগিতা নিয়ে হবিগঞ্জের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হবিগঞ্জ সদর সার্কেল) মো. রবিউল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ইন-সার্ভিস) শেখ মোঃ সেলিম, ডিআই-১ কাজী কামাল উদ্দিন, হবিগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মানিকুল ইসলাম, ডিবির ওসি এমরান হোসেন, হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাসুক আলী, শায়েস্তাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোজাম্মেল হক প্রমূখ। এদিকে দুপুরে ময়না তদন্ত শেষে ডাকাত কুদরত আলীর লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।