মহান আল্লাহ্ তা’আলা ঘোষণা করেন আসমান জমিন ও এ দু’য়ের মধ্যে যা কিছু আছে সবই মানুষের কল্যাণে সৃষ্টি করেছি। আল্লাহর জমিনে মানুষ স্বাধীনভাবে বিচরণ করবে এবং তারই আনুগত্য করবে এটাই স্বাভাবিক। ঝগড়া, ফ্যাসাদ, মারামারি, খুনাখুনির মাধ্যমে জমিনে অশান্তি সৃষ্টি করার জন্য আল্লাহ্ তা’আলা মানুষকে তৈরি করেননি। বরং আল্লাহর জমিনে তাঁর হুকুমত কায়েম করে শান্তি প্রতিষ্ঠাই তাঁর উদ্দেশ্য। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা তার বিপরীত। অশান্তির কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন গোটা পৃথিবী। দ্বন্দ্ব সংঘাত আর হত্যা যেন স্বাভাবিক ব্যাপার। মানব জীবনের চেয়ে সস্তা যেন আর কিছুই নেই। মাত্র দশ টাকা অথবা হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য মানুষ মানুষকে খুন করে। সন্তানের হাতে বাবা অথবা বাবার হাতে সন্তান, ভাইয়ের হাতে ভাই, স্বামীর হাতে স্ত্রী অথবা স্ত্রীর হাতে স্বামী, বন্ধুর হাতে বন্ধু খুনের ঘটনা এখন আর গল্প নয়, জঘন্য বাস্তবতা। আহ্ কি নিষ্ঠুরতা। অথচ আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, অন্যায়ভাবে কোন মানুষ হত্যা করা গোটা মানব জাতিকে হত্যার শামিল। ইসলামী শরীয়ত মানব হত্যাকে হারাম ঘোষণা করেছেন। কবীরা গোনাহ সমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মানব হত্যা। হত্যাকারীর জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা।
কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে ইসলাম তার বিধান বর্ণনা করেছেন। যেমন- সূরা বানী ইসরাইলের ৩৩নং আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, সংগত কারণ ছাড়া তোমরা কাউকে হত্যা করো না- যা আল্লাহ্ হারাম করেছেন। যে অন্যায়ভাবে নিহত হয় তার অভিভাবককে হত্যাকারীর বিচার করার (ক্বিসাসের) ক্ষমতা দিয়েছি। তবে এ ব্যাপারে সীমা লঙ্ঘন করো না। যদি সীমা লঙ্ঘন না কর তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য প্রাপ্ত হবে- (আল কোরআন)।
আলোচ্য আয়াতে ক্বিসাস তথা হত্যার বদলা হত্যার বিধানের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। আর সূরা মায়েদার ৪৫নং আয়াতে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ্ বলেন- আর আমি তাদের উপর অবধারিত করেছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চোখের বিনিময়ে চোখ, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান ও দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং সমপরিমাণ জখমের বিনিময়ে জখম। আর যে তা ক্ষমা করে দিবে তা তার জন্য কাফফারা হবে।
বস্তুতঃ আল্লাহর আইন অনুযায়ী যারা বিচার করবে তারাই জালিম- (আল কোরআন)।
মহান আল্লাহ্ তা’আলার এই আইন যদি সমাজে বা রাষ্ট্রে বাস্তবায়িত হয় তাহলে কেউ কাউকে হত্যা করার সাহস পাবে না।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত- রাসুল (স.) এরশাদ করেন- ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত হারাজ বৃদ্ধি পাবে। সাহাবী প্রশ্ন করলেন- হারাজ কি? তিনি উত্তরে বলেন- হত্যা। (মুসলিম)।
হত্যা নামক অপরাধ যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এই হাদিস অনুযায়ী বুঝা যাচ্ছে ক্বিয়ামত খুবই কাছাকাছি।