হত্যার দায় স্বীকার করে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে ঘাতক ॥ গর্ভপাতে রাজী না হওয়ায় তামান্নাকে হত্যা করা হয়েছে
নুর উদ্দিন সুমন ॥ চুনারুঘাটে কিশোরী তামান্না আক্তার প্রিয়া (১৪) হত্যাকান্ডের ঘটনায় প্রেমিক আলমগীরকে (২৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার দিবাগত গভীর রাতে চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ নাজমুল হকের নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই শেখ আলী আজহারসহ একদল পুলিশ পার্শ্ববর্তী উপজেলার বাহুবলের মিরপুর ইনিয়নের চন্দ্রচড়ি শ^শুর বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর তাকে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ঘাতক আলমগীর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়। এতে সে হত্যা কান্ডের দায় স্বীকার করে। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে তার বরাত দিয়ে ওসি শেখ নাজমুল হক জানান, হত্যার খবর পেয়ে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যার নির্দেশে আমরা প্রযুক্তির মাধ্যমে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ঘাতক প্রেমিক আলমগীরকে তার শশুর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। আলমগীর পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। সে দুধপাতিল গ্রামের আবুল হাসিম মিয়ার পুত্র এবং তামান্নার আপন চাচাত ভাই। দীর্ঘদিন ধরে সে মানিকগঞ্জ জেলায় থেকে রাজের কাজ করে মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসত। হঠাৎ একদিন তার মেজু চাচির নাম্বারে ফোন করে আলমগীর। তখন ফোন রিসিভ করে তামান্না। এ সময় তার সাথে বেশ কয়েক মিনিট কথা হয়। এর পর থেকে মাঝে মধ্যে চাচীর নাম্বারে ফোন দিয়ে কথা বলতো দুজনে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। গোপনে চলতে থাকে তাদের প্রেম। একে অপরকে কাছে পেতে মরিয়া হয়ে উঠে। তামান্নার মা সেলিনা বেগম ৩/৪ বছর ধরে গৃহকর্মীর কাজে সৌদি আরব থাকেন। ঘরে তামান্নার পিতা ও ছোট একটি ভাই ছাড়া কেউ নেই। পিতা বেশিরভাগ বাহিরে থাকেন, আর ছোট ভাই লেখা পড়ায়। আলমগীর সুযোগ সন্ধানে তার স্ত্রী সন্তানদের কাছে না গিয়ে মানিকগঞ্জ থেকে গ্রামের বাড়ি আসতো তামান্নার কাছে। চলতো দৈহিক সম্পর্ক। এক পর্যায়ে তামান্না ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্ব¡া হয়ে পড়ে। আলমগীর অন্তঃসত্ত্ব¡ার কথা শুনে সমস্যায় পড়ে যায়। একদিকে স্ত্রী সন্তান অন্যদিকে তামান্নার অন্তঃসত্ত্ব¡ার খবর। তারপরও আলমগীর তামান্নাকে ধৈর্য্য ধরার কথা বলে এবং তার স্ত্রী সন্তানদের একটি আলাদা ঘর বানিয়ে তামান্নাকে মানিকগঞ্জ নিয়ে যাবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। বিষয়টি মানতে নারাজ তামান্না। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল। এক পর্যায়ে গর্ভপাত করাতে চেয়েছিল আলমগীর। তামান্না গর্ভপাতে রাজী না হয়ে প্রেমিক আলমগীরকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। কিন্তু আলমগীর তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। ঘটনার দিন বিয়ের কথা বলে বাড়ির পার্শ্ববর্তী শাল বাগানে নিয়ে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করে আলমগীর। পরে তার কথায় রাজি না হওয়ায় তামান্নাকে সে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যাকান্ড সে একাই করেছে বলে জানায়। তামান্নার মৃত্যু নিশ্চিত হলে সকাল ৭টা পর্যন্ত লাশ পাহারা দেয় আলমগীর যাতে শেয়াল কুকুরে লাশ না খায়। এরপর সে তার শ^শুর বাড়ি মিরপুরে পালিয়ে যায়। হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে এমনই জবানবন্দী দেয় ঘাতক আলমগীর। হত্যার মূলে ছিল তামান্না অন্তঃসত্ত্বা হওয়া। সমাজে লোকলজ্জার কাছ থেকে রেহাই পেতে গর্ভপাত করার পরিকল্পনা করেছিল আলমগীর। কিন্তু তামান্না তার কথামতো গর্ভপাতে রাজি না হওয়ায় তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় আলমগীর।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সকাল ১১টায় দুধপাতিল মহুরী ছড়ার পাশে বন্দের বাড়ির পশ্চিমে শাল বাগানে একটি মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন। পরে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে চুনারুঘাট থানার এসআই মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে একদল পুলিশ স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় মৃতদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় তামান্নার পিতা বাদী হয়ে ঘাতক আলমগীরকে আসামী করে চুনারুঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে হত্যার ক্লু উদঘাটন এবং আসামী গ্রেফতার করায় চুনারুঘাট থানার ওসি শেখ নাজমুল হকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান এলাকাবাসী।