চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ চুনারুঘাট উপজেলার ডানকার্ন ব্রাদার্সের নালুয়া চা বাগানে সহকারি ব্যবস্থাপক ও দুই কর্মচারির (বাবু) অপসারণের দাবিতে ১০ ঘন্টা ধর্মঘট পালন করছে চা শ্রমিকরা। বাগানের গাছ কেটে বিক্রি, চা পাতা চুরি, চা শ্রমিকদের নির্যাতন ও হয়রানিসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে গতকাল বুধবার সকাল ৬টায় বাগানের প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক কাজ বন্ধ রেখে ফ্যাক্টরীতে তালা ঝুলিয়ে দেয়। বেলা সাড়ে ৪টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুসরাত ফাতিমা, থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ নাজমুল হক, স্থানীয় চেয়ারম্যান, বাগান ব্যবস্থাপকসহ শ্রমিকদের সাথে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা শেষে সহকারি বাগান ব্যবস্থাপক ও দুই কর্মচারীকে অপসারণের পর শ্রমিকরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে।
চা শ্রমিক সূত্র জানায়, অনুমতি ছাড়া বাগানের সহকারি ব্যবস্থাপক ইকবাল হোসেন বড় বড় গাছ কেটে বিক্রি করে টাকা আত্মসাত, নতুন ভবনের মালামাল বিক্রি করে টাকা আত্মসাত, চা শ্রমিকদের নির্যাতন ও হয়রানি, কথায় কথায় চাকুরি থেকে শ্রমিকদের ছাটাইসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠে। একই সাথে বড় বাবু বশর তালুকদার ও কেরাণী অনন্ত ঘোষ চাকুরির মেয়াদ শেষেও চাকুরিতে থাকার কারণে বাগান থেকে অপসারণের জন্য চা শ্রমিকরা ৪ মাস আগে বাগানে অবরোধ করে। এ নিয়ে বাগান কর্তৃপক্ষ ও ইউপি চেয়ারম্যান আবেদ হাসনাত সনজু চৌধুরীর মাধ্যমে শ্রমিকদের সাথে আলোচনাক্রমে তাদেরকে অপসারণে ৪ মাস সময় নেওয়া হয়। শ্রমিকরা সেপ্টেম্বর এর মধ্যে তাদের অপসারণের সময় দেয়। এ আল্টিমেটাম শেষ হয় গত সোমবার। এসময়ে তাদের অপসারণ না করায় শ্রমিকরা ২ অক্টোবর বাগান অবরোধের ঘোষণা দেয় গত ২৬ সেপ্টেম্বর। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে বাগানে উত্তেজনা চলছিল। প্রশাসন বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এ অবস্থায় বুধবার সকাল ৬টা থেকে শ্রমিকরা বাগানের ফ্যাক্টরীসহ সকল কাজ বন্ধ করে ফ্যাক্টরীতে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরে তারা ফ্যাক্টরীর সামনে ধর্মঘট পালন করে। সকাল ১০টায় ঘটনাস্থলে আসেন ইউপি চেয়ারম্যান আবেদ হাসনাত চৌধুরী সনজুসহ চা শ্রমিক নেতারা। তারা বিষয়টি সমঝোতার মাধ্যমে শেষ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বেলা ৩টা পর্যন্ত বিষয়টির কোন সুরাহা না হওয়ায় ঘটনাস্থলে যান সহকারি কমিশনার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত নুসরাত ফাতিমা ও অফিসার ইনচার্জ শেখ নাজমুল হক। সমঝোতা বৈঠকে ইউপি চেয়ারম্যান, বাগান ব্যবস্থাপক জহিরুল ইসলাম, শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক নৃপেন পাল, লস্করপুর ভ্যালী সভাপতি রবীন্দ্র গৌড়, চা শ্রমিক নেতা যুবরাজ ঝড়া, ইউপি সদস্য নটবর রুদ্র পাল, মাখন গোস্বাামী, চা শ্রমিক পঞ্চায়েত সভাপতি উপেন্দ্র উড়াং, স্বপন তাতী, সাংবাদিকসহ চা বাগান নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত দফায় দফায় চলে সমঝোতা বৈঠক। কিন্তু চা শ্রমিকরা তাদের অপসারণ করা না হলে কাজে যোগদান করবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনা শেষে এক পর্যায়ে বেলা ৪টায় বাগান ব্যস্থাপক জহিরুল ইসলাম ঘোষণা দেন- সহকারি ব্যবস্থাপক ইকবাল হোসেন এবং বড় বাবুু বশর তালুকদার ও অনন্ত আজকের মধ্যে বাগান থেকে চলে যাবেন। ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে এ বিষয়ে দাবি আদায় করেই শ্রমিকরা আজ বৃহস্পতিবার কাজে যোগদানের ঘোষণা দেয়।