কাউকে বোমা মেরে হত্যা করে জান্নাতে যাওয়া যাবে না ॥ শিক্ষার্থীদের অপ্রয়োজনে মোবাইল ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকবে হবে
এসএম সুরুজ আলী ॥ হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা (বিপিএম-পিপিএম-সেবা) বলেছেন- একজন প্রকৃত মানুষ কখনও সমাজে খারাপ কাজে সাথে জড়িত হতে পারে না। প্রকৃত মানুষের চিন্তা চেতনা হলো সমাজকে আলোকিত করতে কাজ করা। সমাজের উন্নয়ন হলে দেশের উন্নয়ন হবে। আর এই উন্নয়নের শিখরে পৌঁছতে হলে প্রত্যেককে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। তবে সেটা হতে হবে প্রকৃত শিক্ষা। শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। তাই প্রত্যেক পরিবারের সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশা উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে মাদক, দাঙ্গা, জঙ্গি বিরোধী স্কুল ভিত্তিক রচনা প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন- ছেলেমেয়েদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুললে পরিবারে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি আসবে। আর সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছতে হলে শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে কিংবা প্রার্থনা করে পড়ায় টেবিলে বসতে হবে। নিয়মিত স্কুলে যেতে হবে। স্কুল থেকে বাসা-বাড়িতে এসে মনোযোগ সহকারে লেখাপড়া করতে হবে। মা-বাবা, অভিভাবকসহ মুরুব্বীয়ানদের কথা শুনতে হবে। তাদের সম্মান করতে হবে। অবসর সময়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা করতে হবে। খেলাধুলা করলে মন ভালো থাকে এবং ভাল মানুষও হওয়া যায়। কিন্তু আজকাল খেলাধুলা না করে অনেক শিক্ষার্থী স্কুল থেকে বাসা-বাড়িতে এসে মোবাইল ফোনে গেমস খেলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এভাবে মোবাইল ব্যবহারের কারণে শিক্ষার্থীদের চোখ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে অল্প বয়সেই তাদের চশমা ব্যবহার করতে হচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীদের অপ্রয়োজনে মোবাইল ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকবে হবে। স্মার্টফোন শিক্ষার্থীদের জন্য ভয়ংকর। শিক্ষার্থীরা যাতে স্মার্টফোনের অপব্যবহার করতে না পারে এ জন্য তিনি অভিভাবকদের সচেতন থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন- আজকাল ছেলেরা স্মার্টনেস হওয়ার জন্য সিগারেট খায়। এক পর্যায়ে তারা সিগারেট থেকে মাদক গ্রহণ করে। সিগারেটকে ঘৃনা করতে হবে। সিগারেট নিজের, পরিবারের ক্ষতি ও অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন করে। যারা মাদক গ্রহণ করে তাদেরকে সমাজ খারাপ চোখে দেখে। মাদকসেবী টাকা না পেলে প্রথমে বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি করে। এরপর মায়ের জমাকৃত টাকা চুরি করে। এক সময় সে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িত হয়ে যায়। মাদককে সকলেই না বলতে হবে। তিনি বলেন- শিশু মেয়েরা জানে না কিভাবে সংসার চালাতে হয়। এ অবস্থায় তাদের বিয়ে দেয়া হয়। এতে তাদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। অনেক সময় বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। অকালে জীবন নষ্ট হওয়ায় অনেক মেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। তাই বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য শিক্ষার্থীদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে হবে। কোন মেয়েকে বাল্যবিবাহ দিতে চাইলে পরিবারের লোকজনদেরকে বুঝিয়ে বিবাহ বন্ধ করতে হবে। বাল্যবিবাহ হলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে যাবে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন- বিএ পাস ছাত্রীর বিয়ে হওয়ার পর যদি তার স্বামীর সাথে সম্পর্ক ভেঙ্গে যায় তখন বিএ পাস মেয়েটি বলতে পারবে আমার কাছে বিএ পাসের সার্টিফিকেট রয়েছে। যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরী করতে পারবে মেয়েটি।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা আরো বলেন- ইভটিজিং প্রতিরোধেও ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা রাখতে হবে। পাশাপাশি জঙ্গিবাদও প্রতিরোধ করতে হবে। হবিগঞ্জ একটি ঐতিহ্যবাহী ও সুন্দর জেলা। এখানে আন্তর্জাতিক মানের দ্যা প্যালেস রিসোর্ট, চা বাগানসহ অনেক পর্যটন স্পর্ট রয়েছে। সেগুলো দেখতে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা আসেন। এছাড়াও বিভিন্ন শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। কিন্তু এ জেলার একটি কলংক আছে, সেটি হলো দাঙ্গা। দাঙ্গার কারণে জেলার সুনাম নষ্ট হচ্ছে। ছোটখাট বিষয় নিয়ে এ জেলার অধিবাসীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষ অনেক পরিবারকে ধ্বংশ করে দিচ্ছে। এই সংঘর্ষ প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা রাখতে হবে। বাবা, ভাইসহ পরিবারের লোকজন সংঘর্ষে জড়িত হতে চাইলে অভিভাবকদের বুঝিয়ে সংঘর্ষ থেকে বিরত রাখতে হবে। শিবপাশা এলাকায় প্রায় সময় দাঙ্গা হয়ে থাকে। সকলে মিলে ওই এলাকাকে দাঙ্গা মুক্ত করতে হবে। দাঙ্গা মুক্ত হলে এলাকার উন্নয়ন হবে। ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে একটি মহল শিক্ষার্থীদের জঙ্গিবাদে জড়িত করছে। আমাদের মনে রাখতে হবে কাউকে বোমা মেরে হত্যা করে জান্নাতে যাওয়া যাবে না। জঙ্গিবাদ সম্পর্কে সকল শিক্ষার্থীদের সচেতন থাকতে হবে। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এটিএম জিল্লুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান, ওসি মোশারফ হোসেন তরফদার, ওসি তদন্ত আব্দুর রহিম, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তকছির মিয়া, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম প্রমূখ। অনুষ্ঠান শেষে রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের হাতে ক্রেস্ট, খাতাসহ শিক্ষা উপকরণ তুলে দেন পুলিশ সুপার। এছাড়া প্রতিযোগিতায় যারা অংশগ্রহণ করেছে তাদেরকেও খাতাসহ শিক্ষা উপকরণ দেয়া হয়। পরে পুলিশ সুপার শাহ আব্দুল কুদ্দুছ নূরী দাখিল মাদরাসা এবং মুখলিছ জান বিবি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাদক, দাঙ্গা, জঙ্গিবাদের কুফল সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতামুলক বক্তব্য প্রদান এবং রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট, খাতাসহ শিক্ষা উপকরণ তুলে দেন পুলিশ সুপার। পরে তিনি মাদ্রাসার এতিম ছাত্রদের সাথে নিয়ে দুপুরের খাবার খান এবং সবার সাথে কুশল বিনিময় করেন। এরপূর্বে তিনি মাদ্রাসার ২য় তলায় কম্পিউটার ল্যাবের উদ্বোধন করেন। এছাড়াও পুলিশ সুপার মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।