স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রতিপক্ষের আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করেও স্বামীকে খুনের হাত থেকে রক্ষা করতে না পারা আলোচিত মিন্নি এখন হবিগঞ্জে। এমন খবরে হবিগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজনের ফেসবুকে চলছে স্ট্যাটাসের পর স্ট্যাটাস। ফেসবুকে এ খবর দেখে অনেকেই বিষয়টি ফান মনে করে উড়িয়ে দিচ্ছেন। বিশ^াস করতে রাজি হননি তারা। তবে বিভিন্নভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে দেশব্যাপী আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আসামি ও নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি তার বাবাকে সাথে নিয়ে হবিগঞ্জের মাধবপুরে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, বুধবার হবিগঞ্জের মাধবপুরে মামাতো বোনের বাসায় বেড়াতে আসেন মিন্নি। মিন্নিকে এখন ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হচ্ছে। সে যেন মানসিকভাবে প্রশান্তি পায় সেজন্য তাকে নিয়ে তার মামাতো বোনের বাসায় আসেন তার পিতা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। তারা মাধবপুর উপজেলার শাহজিবাজার গ্যাসফিল্ডের বাংলোতে উঠেছেন।
বাংলানিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম সূত্রে জানা যায়, মিন্নির পিতা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী মিন্নি এখন জীবনযাপন করছেন। মানসিকভাবে যাতে প্রশান্তি পায় সেজন্য মিন্নিকে নিয়ে তার মামাতো বোনের বাসায় নিয়ে এসেছি। তিনি আরও বলেন, মাধবপুর উপজেলার শাহজিবাজার গ্যাসফিল্ডের বাংলোতে আমরা উঠেছি। স্থানীয় পুলিশ অমাদের অবস্থান সম্পর্কে অবগত আছে। ইতোমধ্যে ট্রেনের টিকিট কাটা হয়ে গেছে। শুক্রবার মিন্নিকে নিয়ে হবিগঞ্জ ত্যাগ করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, মিন্নির অবস্থান সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। এ ব্যাপারে পুলিশ যথেষ্ট সতর্ক রয়েছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ২৬ জুন প্রকাশ্য দিবালোকে বরগুনা সরকারি কলেজ রোডে স্ত্রী মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। হত্যাকান্ডের প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড ২ জুলাই ভোরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। এর মধ্যে মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেফতার করা হয়। ১৬ জুলাই সকালে বরগুনার মাইঠা এলাকায় বাবার বাসা থেকে মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বরগুনার পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রিফাত হত্যাকান্ডে সম্পৃক্ততার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় ওই দিন রাত ৯টার দিকে মিন্নিকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। পরদিন ১৭ জুলাই বিকেলে মিন্নিকে আদালতে হাজির করে সাতদিন রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে শুনানি শেষে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সিরাজুল ইসলাম গাজী পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন ১৯ জুলাই বিকেল ৫টার দিকে বরগুনা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিন্নি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। ২২ জুলাই বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রথমবার মিন্নির জামিনের আবেদন করা হলে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হয়। এরপর ৩০ জুলাই জেলা ও দায়রা জজ আদালত তার জামিন আবেদন নাকচ করেন। পরবর্তীতে ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট তাকে জামিন দেন। জামিনের শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, মিন্নি তার বাবার জিম্মায় থাকবে এবং মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পর ২ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার আদালত ‘নো অর্ডার’ আদেশ দেন।
পরদিন ৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কারাগার থেকে মুক্তি পান মিন্নি। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী এ মামলায় চার্জশিট গ্রহণ করে পলাতক নয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এছাড়া চার্জ গঠনের জন্য আগামী ৩ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন আদালত। এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী মিন্নিসহ ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির।