ছবর বা ধৈর্য্য মানুষের মহৎ গুণাবলীর অন্যতম। দুঃখ, মন্দ, অকল্যাণ, বালা-মুছিবত ও সকল প্রকার বিপদ-আপদে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থাকেই সাধারণত ছবর বা ধৈর্য্য বলে। ধৈর্য্যরে অন্যতম একটি মাপকাঠি হলো ঈমান। যার ঈমান যত মজবুত বিপদে তার ধৈর্য্য তত বেশি। তাই যুগে যুগে আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকেই কঠিন বিপদের মাধ্যমে তাদের ধৈর্য্যরে পরীক্ষা নিয়েছেন। কি সেই পরীক্ষা এবং তার প্রতিদানই বা কি এ বিষয়ে আজকের আলোচনা।
দুনিয়াবী হোক কিংবা পরকালীন হোক প্রতিটি কাজেরই সফলতার পূর্বে কম বেশি প্রতিবন্ধকতা থাকেই। প্রতিকূল সেই পরিস্থিতিতে ধৈর্য্যই একমাত্র সফলতার স্বর্ণশিখরে আরোহন করতে সহায়তা করে। আল্লাহ্ তা’আলা নিজেই ঘোষণা করেন- নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ধৈর্য্যশীলদের সাথে আছেন।
ধৈর্য্যরে জ¦লন্ত প্রমাণ হলো ইসলামের প্রথম মহিলা শহীদ হযরত সুমাইয়া (রা.)। ইসলাম গ্রহণ করার কারণে আবু জেহেল ও মক্কার পাষাণ মুশরিকরা তাঁর উপরে অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে। উত্তপ্ত মরুভূমিতে শুইয়ে লোহার জ¦লন্ত শিক দিয়ে শরীরটা যখন ঝলসে দিচ্ছিল, যন্ত্রণার আর্তচিৎকারে ভারি করে তুলছিল মরুদ্যানের আকাশ বাতাস, ঠিক তখনই রাসুল (স.) পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন আর বলছিলেন- ধৈর্য্য ধারণ কর হে ইয়াছিরের পরিবার, তোমাদের জন্য রয়েছে সু-সংবাদ। জান্নাত তোমাদের প্রতিক্ষায় আছে।
আল্লাহ্ তা’আলা ধৈর্য্য পরীক্ষার জন্য আদম ও হাওয়া (আ.) এর বিচ্ছেদ করেছেন, হযরত ইউসুফ (আ.) কে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি করেছেন, হযরত মুসা (আ.) কে দিয়ে ছাগলের রাখালী করিয়েছেন, হযরত ইউনুস (আ.) কে পানির নিচে মাছের পেটে নিক্ষেপ করেছেন, হযরত আইয়ুব (আ.) কে আঠারো বছর কঠিন রোগে ভূগিয়েছেন, হযরত ইব্রাহীম (আ.) কে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করিয়েছেন। কঠিন কঠিন সেই পরিস্থিতিতে তাঁরা কেউই ধৈর্য্যহারা হননি বরং আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ^াস রেখেছেন। ফলশ্রুতিতে আল্লাহ্ তা’আলা তাঁদের সু-সংবাদ ও মহান সফলতা দান করেছেন।
আল্লাহ্ তা’আলা যখন তাঁর কোন প্রিয় বান্দাকে কাছে টেনে নিতে চান তখন তাকে ক্ষুধা, দারিদ্র্যতা, অভাব-অনটন ও বিপদ-আপদের মাধ্যমে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ্ যাচাই করতে চান যে বিপদে বান্দা ধৈর্য্য ধারণ করে আল্লাহর উপর ভরসা রাখে নাকি ধৈর্য্যহারা হয়ে হতাশ হয়ে যায়। যদি ধৈর্য্যরে সাথে মোকাবেলা করতে পারে, তখন আল্লাহ্ তাঁর জন্য উত্তম প্রতিদানের ব্যবস্থা করেন।
তাই আমাদের উচিত যত বিপদই আসুক সর্বাবস্থায় ধৈর্য্য ধারণ করা ও আল্লাহর উপর ভরসা রাখা।