
স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলতি বছর হবিগঞ্জ হাই স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য মনে কত স্বপ্ন বুনেছিল জনি দাশ কিন্তু তার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেছে। ঘাতক চোরের নির্মম ছুরিকাঘাত তার জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দিয়েছে। জনি দাশের পরিবারে এখন স্বজন হারানোর আহাজারি। তার মৃত্যু নাড়া দিয়েছে গোটা হবিগঞ্জবাসীকে। গতকাল দিনভর হবিগঞ্জ শহরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে একটাই আলোচনা ছিল চোরের ছুরিকাঘাতে অল্পবয়সী স্কুলছাত্রের মৃত্যু। নিহত ছাত্রের নাম জনি দাশ। তার বয়স প্রায় ১৫ বছর। সে হবিগঞ্জ শহরের দিয়ানতরাম সাহার বাড়ি ‘মহব্বত মঞ্জিলে’ পরিবারের সাথে ভাড়া বাসায় বসবাস করতো। তার পিতা নর্ধন দাশ হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজারের ক্ষুদ্র্র ব্যবসায়ী। তাদের বাড়ি বানিয়াচং উপজেলার ১৫নং পৈলারকান্দি ইউনিয়নের বাঘতলা গ্রামে।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, বুধবার দিবাগত ভোররাতে জনির বাবা নর্ধন দাশের বাসায় এক চোর চুরি করতে ঢোকে। এসময় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে জনি ঘর থেকে বের হয়। বাইরে বেরিয়েই সে চোরকে দেখতে পায় এবং চিৎকার শুরু করে। এসময় চোর তার হাতে থাকা ছুরি দিয়ে জনির শরীরে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। তখন জনির বড় ভাই জীবন দাশ জয় শয়নকক্ষ থেকে বের হলে চোর তাকেও আঘাত করে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে জনিকে গুরুতর আহত অবস্থায় হবিগঞ্জ আড়াইশ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। আহত বড় ভাই জয় হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
অপর একটি সূত্র জানায়, ভোররাতে বাড়ির দরজার কাছে সন্দেহজনক শব্দ শুনে জনি ঘুম থেকে জেগে যান। বাড়িতে কেউ ঢোকার চেষ্টা করছে, সেটা টের পেয়ে বড় ভাই জয়কে ডেকে তুলেন জনি। দুই ভাই মিলে বাইরে গিয়ে সন্দেহভাজন চোরকে ধরে ফেলে এবং তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় জনির বুকে ও শরীরের অন্যান্য স্থানে কয়েকটি ছুরিকাঘাত করে ওই চোর। এক পর্যায়ে অজ্ঞাত চোর পালিয়ে যায়। আহত দুই ভাইকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জনিকে মৃত ঘোষণা করেন। জয় চিকিৎসাধীন।
সকালে ঘটনাটি জানাজানি হলে গোটা শহরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায় জনির খুনের সংবাদ। কেউ কেউ তার খুনের সাথে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এ এন এম সাজেদুর রহমান। তিনি নিহতের স্বজনদের শান্তনা দেন এবং খুনীকে দ্রুত শনাক্ত করে গ্রেফতারের আশ^াস দেন।
গতকাল বিকেলে জনির মরদেহ স্থানীয় শ্মশানে দাহ করা হয়েছে। এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে রাত ৮টার দিকে শহরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবি জানান।
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) সজল সরকার বলেন, ছুরিকাঘাতে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। হত্যাকা-ে ব্যবহৃত ছুরি ও টর্চ লাইটসহ বেশ কিছু আলামত জব্দ করেছে পুলিশ। জনির দেহে অসংখ্য ছুরির আঘাত রয়েছে। তবে অন্ডকোষে আঘাতের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে। অপরাধীকে এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। তবে চিহ্নিত করার জন্য সিসি টিভি’র ফুটেজ দেখা হচ্ছে। অপরাধীকে সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে সেনাবাহিনী, ডিবি, র্যাব-পিবিআইসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। রাত ১১টায় এ রিপোর্ট লেখাকালে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি এবং কেউ আটকেরও খবর পাওয়া যায়নি।