স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাহুবলের আলিফ সোবহান চৌধুরী সরকারি কলেজে শিক্ষকদের দলাদলিতে চরম ফল বিপর্যয় হচ্ছে। সিলেট বোর্ডে এইচএসসিতে গড়ে ৮০ শতাংশ পাশ করলেও এ কলেজে গত ২ বছর যাবদ পাশের হার ৩৮ থেকে ৪০ শতাংশ। এ নিয়ে ক্ষোভের অন্তঃ নেই শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে। সম্প্রতি আবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি নিজ কক্ষ থেকে সংস্কারের নামে নামিয়ে রাখেন অধ্যক্ষ। এ নিয়েও ক্ষুব্ধ শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। অবশেষে আন্দোলনের মুখে তিনি ফের ছবি টানিয়ে রাখেন। এ অবস্থায় অধ্যক্ষের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা তার অপসারণ দাবি করে ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট স্মারকলিপি দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়েশা হক জানান, স্মারকলিপি পেয়েছেন। এজন্য পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটিও গঠন করে দেয়া হয়েছে। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপির বিষয়ে তদন্ত করতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন ভূইয়াকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর শিক্ষকদের দলাদলির বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন ভূইয়াকে প্রধান করে পৃথক আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উভয় কমিটিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তিনি সিনিয়র কর্মকর্তা হওয়ায় উভয় কমিটিতেই তাকে প্রধান করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়েশা হক আরো বলেন, আমরা কলেজের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এর মাঝে ১ বিষয়ে কেউ অকৃতকার্য হলে তাকে উত্তীর্ণ করে দেয়া হবে না, কলেজে ৮০ শতাংশ উপস্থিতি থাকতে হবে, পোশাক ও পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক, সকাল পৌনে ১০টার মধ্যে কলেজে প্রবেশ করতে হবে, ১০টায় কলেজের গেইট বন্ধ করে দেয়া হবে, শিক্ষকদের ডিজিটাল হাজিরা ও সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন। আমরা বলেছি শিক্ষার পরিবেশ ঠিক রাখতে, ফলাফল ভাল করতে যা করতে সব কিছুই করা হবে বলে তিনি বলেন।
কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক মাসুদুর রহমান মাসুক জানান, অধ্যক্ষের কক্ষ সংস্কার করা হয়। তা শেষ হয় বেশ কয়েকদিন পূর্বে। কিন্তু তিনি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে জাতির জনক এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি নামিয়ে রাখেন। তাছাড়া সিনিয়র শিক্ষক ও জুনিয়র শিক্ষকদের মাঝে কিছু মনোমালিন্যতা রয়েছে। এগুলো অধ্যক্ষ চাইলেই বসে শেষ করে দিতে পারেন। জুনিয়র শিক্ষকরা দাবি দাওয়ার কথা বললেই তার রোষানলে পড়তে হয়। তিনি বলেন, শিক্ষকদের এমন বিরোধের কারণে কলেজের শিক্ষার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কলেজে সিনিয়র শিক্ষক রয়েছেন ১৯ জন এবং নতুন নিয়োগ পেয়েছেন ২৫ জন। সিনিয়র এবং জুনিয়র শিক্ষকরা দু’টি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম হেলাল জানান, জাতির জনক ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি না টানিয়ে তিনি দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সাধারণ ছাত্ররা মানববন্ধন করেছে। সিনিয়র ও জুনিয়র শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। জুনিয়র থেকে শিক্ষক প্রতিনিধি হন তা সিনিয়ররা সহ্য করতে পারেন না। তিনি বলেন, শিক্ষকরা ঠিকমতো ক্লাস করেন না। পড়ার মানও ভাল না। ফলে গত ২/৩ বছর ধরে কলেজে ৩৮ থেকে ৪০ শতাংশ থাকে এইচএসসিতে শিক্ষার হার। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। অথচ এ শিক্ষকরাই যখন বাইরে পড়ান, কোচিং সেন্টারে পড়ান তখন তারা খুব ভাল পড়ান। কলেজে পড়াননা কিন্তু বাইরে তাদের অনেক খ্যাতি রয়েছে। এ অবস্থায় অধ্যক্ষের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাকে বদলানোর দাবিতে তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট স্মারকলিপি দিয়েছেন।
জানতে চাইলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান বলেন, নানা অন্যায় আবদারে রাজি না হওয়ায় জুনিয়র শিক্ষকদের কর্মকান্ডে কলেজটির পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে, জুনিয়রদের কথা না শুনলেই তারা যা খুশি করছে। তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান রতন দেবের বিরুদ্ধে একটি ভূয়া অভিযোগ দাখিল করেছে। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইউএনও উপজেলা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার নেতৃত্বে তদন্ত কমিটিও গঠন করেছেন। এছাড়া গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে পাঠদান না করে কলেজের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগে ১২ জন শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। জুনিয়র শিক্ষকদের পেছনে কারা ইন্ধন জোগাচ্ছে তাদের খুঁজে বের করার জন্য কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান অধ্যক্ষ। তিনি বলেন, নিজের কক্ষ মেরামত করতে গিয়ে জাতির জনক ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি নামিয়ে রাখা হয়েছিল। মেরামত কাজ শেষে তা পুনরায় যথাস্থানে টানিয়ে রাখা হয়েছে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, সিনিয়র ও জুনিয়র শিক্ষকদের নোংরামির কারণে শিক্ষার পরিবেশসহ পড়াশুনা ‘লাটে’ উঠছে। দলাদলির কারণে শিক্ষকরা ঠিকমতো ক্লাস করছেন না। অনেকেই ছুটি না নিয়ে কলেজে অনুপস্থিত থাকেন। গত ১৫ দিন ধরে কলেজের পাঠদান কার্যক্রমই বন্ধ ছিল। সোমবার থেকে পুনরায় কলেজে পাঠদান শুরু হয়েছে। তবে কলেজের শিক্ষার পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এতে আবার কতিপয় শিক্ষক ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তবে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও কঠোর অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন।