এসএম সুরুজ আলী ॥ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে লাখাই’র কৃষ্ণপুর গ্রামে গণহত্যা দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে বুধবার দুপুরে কৃষ্ণপুর বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয়। নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নিরবতা পালন করাসহ ৫ নিহত পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা প্রদান করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের কর্মসূচি সূচনা করা হয়। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা বীরমুুক্তিযোদ্ধা অমরেন্দ্র লাল রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শোকসভায় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হবিগঞ্জ সদর সার্কেল) মোঃ রবিউল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ভারপ্রাপ্ত ইউএনও সঞ্চিতা কর্মকার, জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী পাঠান, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার গৌর প্রসাদ রায়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থা কর্তৃক গঠিত জেলা সাক্ষী ও ভিকটিম সুরক্ষা কমিটির সদস্য রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন, মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট সালেহ উদ্দিন আহামেদ, লাখাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ এমরান হোসেন, শিক্ষা বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী (অবঃ) প্রদীপ কান্তি রায়, শিক্ষক প্রীতি রঞ্জন দাশ, লিটন চন্দ্র সূত্রধর, হামলায় আহত প্রিয়তোষ রায়, কৃষ্ণ মোহন রায়, ডাঃ অনুপ রায়, শিক্ষার্থী প্রমা দাস, দিপ্তী দাস, মিঠু দাস প্রমূখ।
সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বলেন, ১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী হাওর অঞ্চল লাখাই উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামে নারকীয় হত্যাকান্ড ঘটায়। তিনি বলেন, স্থানীয় রাজাকার, আলবদর, আলশামস, বাহিনীর সহযোগিতায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী একসাথে হত্যা করে ১২৭ জন নিরীহ মানুষকে। ইতিহাসে এটি একটি ন্যাক্কারজনক হত্যাকান্ড। তিনি আরো বলেন, ইতিপূর্বে সরকার অনেক যুদ্ধাপরাধীর বিচার কার্যকর করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলমান রয়েছে। কৃষ্ণপুর গণহত্যাকান্ডে জড়িত রাজাকারদেরও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় প্রদান করেছেন। কিন্তু অপরাধীরা পলাতক থাকার কারণে তাদের সাজা কার্যকর করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ সোচ্চার রয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থা কর্তৃক গঠিত জেলা সাক্ষী ও ভিকটিম সুরক্ষা কমিটির সদস্য রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন জানান, কৃষ্ণপুরের গণহত্যার সাথে জড়িত রাজাকার লিয়াকত, রজব আলীসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পরই আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের নজরে আসে। পরবর্তীতে ট্রাইব্যুনাল তদন্ত করে লিয়াকত আলী, রজব আলীসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ৬টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ৪টি মামলায় লিয়াকত ও রজব আলীর ফাঁসি ও ২টি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় ঘোষণা করা হয়েছে। মামলার তদন্তকালে রাজাকার লিয়াকত আলী দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। বর্তমানে সে আমেরিকায় বসবাস করছে। রফিকুল হাসান তুহিন দন্ডিত লিয়াকত আলীকে দেশে এনে রায় কার্যকর করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী হিন্দু অধ্যুষিত কৃষ্ণপুর গ্রামে হামলা চালিয়ে ১২৭ জন নিরীহ লোককে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। এ ঘটনায় আহত হয়েছিলেন গ্রামের শতাধিক নারী-পুরুষ। সেই সময় এতো মরদেহ এক সঙ্গে সৎকারের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পাশের নদীতে মরদেহগুলো ভাসিয়ে দেয়া হয়েছিল। হানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের হাতে সম্ভ্রম হারিয়েছেন অনেক নারী।
সভায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী পাঠান উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে হবিগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে কয়েকটি প্রশ্ন করে ৩ জনকে সঠিক উত্তরদাতা হিসেবে পুরস্কার প্রদান করেন। শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন স্কুলছাত্র খায়রুল ইসলাম। গীতা পাঠ করেন স্কুলছাত্রী অর্পিতা দাস। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সহকারি শিক্ষক গৌতম কুমার রায়।
কৃষ্ণপুর গণহত্যা দিবসে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com