স্টেডিয়ামকে বখাটেমুক্ত করতে জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নিতে বললেন আদালত
স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে মেডিকেল পরীক্ষা বাবদ নেয়া টাকা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ফেরত দিতে তত্ত্বাবধায়ককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাঁকন দে গতকাল এ আদেশ দেন।
জানা যায়, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল গ্রামে শিশু ধর্ষণের ঘটনায় সদর মডেল থানায় অভিযোগ দেয়া হয়। ভিকটিমের স্বজনরা অস্বচ্ছল হওয়ায় মেডিকেল পরীক্ষা করানোর ১ হাজার ৩৯০ টাকা তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই মোঃ আলী আকবর ব্যক্তিগতভাবে পরিশোধ করেন। পরবর্তীতে তিনি উক্ত টাকা ফেরৎ পেতে আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট হবিগঞ্জের সিভিল সার্জনকে তার অধিনস্থ সকল সরকারি ও বেসরকারী হাসপাতালে মেডিকেল টেস্টের জন্য টাকা না নিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। আদেশের অনুলিপি সিভিল সার্জন ও সদর থানার ওসির কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে অপর একটি মামলায় বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাঁকন দে হবিগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থা (আধুনিক স্টেডিয়াম) প্রাঙ্গণে প্রতিদিন কোমলমতি শিশু, কিশোর, যুবকসহ ক্রীড়া প্রেমীদের যাতায়াত নির্বিঘœ করতে মাদকাসক্ত ও বখাটেরা যাতে আড্ডা দিতে না পারে সে বিষয়ে আরো কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
আদেশে উল্লেখ করা হয়, স্টেডিয়ামে সকলেই যাতায়াত করেন। ফলে জেলার এ গুরুত্বপূর্ণ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য এ প্রতিষ্ঠান ও স্টেডিয়ামকে যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরবিচ্ছিন্ন দেখভালে কার্যকর ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সদর হাসপাতালে ভিকটিমের মেডিকেল পরীক্ষার বিষয়ে আদালত তার পর্যালোচনায় বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর ইতোপূর্বে প্রণীত ৩২ ধারায় ভিকটিমের মেডিকেল পরীক্ষার ফি এর বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট বিধান উল্লেখ না থাকায় বিগত ২৫/০৩/২০২৫ খ্রি. তারিখে উক্ত আইন সংশোধন করে ২০২৫ সালের ১১নং অধ্যাদেশ জারী করা হয়। উক্ত সংশোধিত অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয়- এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং অপরাধের শিকার ব্যক্তির মেডিকেল পরীক্ষা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করিয়া সরকারি হাসপাতালে কিংবা সরকার কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে স্বীকৃত কোন বেসরকারি হাসপাতালে সম্পন্ন করা যাইবে এবং সরকারি হাসপাতালে এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের শিকার ব্যক্তি নিজে হাজির হইলে কিংবা এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা অপরাধের শিকার ব্যক্তি পুলিশ কর্তৃক উপস্থাপিত হইলে তাহাদের মেডিকেল পরীক্ষার জন্য কোন ফি প্রদেয় হইবে না।
উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কোন হাসপাতালে এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের শিকার ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য উপস্থিত করা হইলে, উক্ত হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাহার মেডিকেল পরীক্ষা অতিদ্রুত সম্পন্ন করিবে এবং উক্ত মেডিকেল পরীক্ষা সম্পন্ন হইবার পরবর্তী বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যে এই সংক্রান্ত একটি সার্টিফিকেট বিনামূল্যে অপরাধের শিকার ব্যক্তিকে বা ক্ষেত্রমত তাহার পরিবারকে ও তদন্তকারী কর্মকর্তাকে প্রদান করিবে এবং এইরূপ অপরাধ সংঘটনের বিষয়টি স্থানীয় থানাকে অবহিত করিবে। বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের উক্ত সংশোধনী বিগত ২৫/০৩/২০২৫খি. তারিখ হতে কার্যকর হওয়ায় ভিকটিমের মেডিকেল পরীক্ষা বাবদ কোন ধরণের ফি আদায় করা যাবে না। যদি আদায় করা হয় তবে তা আইনের সুনির্দিষ্ট বিধানের লঙ্ঘন হবে।
উপর্যুক্ত অবস্থায় অত্র মামলার ভিকটিমের মেডিকেল পরীক্ষা ফি বাবদ ১ হাজার ৩৯০ টাকা আদায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের বিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন মর্মে প্রতীয়মান হয়। ভবিষ্যতে আইনী বিধানাবলী যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করা হলো। আদায়কৃত মেডিকেল পরীক্ষা ফি বাবদ ১ হাজার ৩৯০ টাকা এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ফেরৎ প্রদানের জন্য তত্ত্বাবধায়ক, ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতাল, হবিগঞ্জকে নির্দেশ প্রদান করা হলো। বিষয়টি নিশ্চিত করেন স্টেনোগ্রাফার পার্থ।