বিবেক ও দায়িত্ববোধ থেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে সঠিক মাপ ও রং এর জাতীয় পতাকা বিনামূল্যে বিতরণের উদ্যোগ নেই ॥ একটি শিশু যদি দেশপ্রেম নিয়ে বেড়ে না উঠে তাহলে সে কখনো সুনাগরিক হতে পারবে না ॥ জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ

জাতীয় ঐক্য ও আশা আকাক্সক্ষার প্রতিক জাতীয় পতাকা ॥ প্রফেসর ড. জহিরুল হক শাকিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেড় হাজারেরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে জাতীয় পতাকা বিতরণ করে শুধু হবিগঞ্জ তথা সিলেট বিভাগে নয়; সারাদেশে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ। সঠিক মাপ ও বিধি অনুযায়ী জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও প্রদর্শনের উপর গুরুত্বারোপ করে সোমবার সকাল থেকে দুপুর অবধি সারা জেলায় সফলভাবে সম্পন্ন হলো জাতীয় পতাকা উৎসব। হবিগঞ্জ জেলা শহরে অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ৯টি উপজেলার উদ্যোগে একযোগে চলে এ ব্যতিক্রমধর্মী প্রয়াস। আর জাতীয় পতাকার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিল হবিগঞ্জ জেলা। সুশৃংখল ও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে বিনামূল্যে জাতীয় পতাকা পেয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ছিলেন বেশ উচ্ছসিত। আর পতাকা বিতরণের পূর্বেই হবিগঞ্জ জেলায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসএস পাইপ স্থাপন করে বেদি নির্মাণ করা হয়। ফলে আজ হতে হবিগঞ্জ জেলায় একই মাপের সঠিক পতাকা উত্তোলিত হবে। এ ধরনের ব্যতিক্রমী ও সাহসী পদক্ষেপের জন্য হবিগঞ্জ জেলাবাসী জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
সোমবার সকালে শহরের জেলা পরিষদ মিলনায়তনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ শামসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ জহিরুল হক শাকিল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক নূরুল ইসলাম, পৌর মেয়র মিজানুর রহমান মিজান, অধ্যক্ষ জাহান আরা খাতুন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী পাঠান, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি হারুনুর রশিদ চৌধুরী, কবি তাহমিনা বেগম গিনি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমবেতে কন্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে।
জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ বলেন, যখন দেখা যায় সঠিক মাপের বাইরে, বিবর্ণ, ছেড়া, ময়লা যেনতেনভাবে কোনো বাশের দন্ডে অবহেলা করে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও প্রদর্শন করা হয় তখন জাতি হিসেবে আমরা লজ্জিত হই। আমাদের চেতনার প্রতীক জাতীয় পতাকা ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যারা অবমাননা করেন তারা ১৯৭২ ও ২০১০ সালের জাতীয় পতাকা বিধি অনুযায়ী গর্হিত অপরাধ করছেন। আমি বিবেক ও দায়িত্ববোধ থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে সঠিক মাপ ও রঙের জাতীয় পতাকা বিনামূল্যে বিতরণের উদ্যোগ নেই। শীঘ্রই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকার মর্যাদা ও তাৎপর্য শীর্ষক একটি নির্দেশনা পাঠানো হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে জাতীয় পতাকার মর্যাদা ও তাৎপর্য শীর্ষক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। জাতীয় পতাকা সম্পর্কে বিশদ জানার জন্য শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করা হবে। আর এসব করা হবে আমাদের নতুন প্রজন্মক বিপথগামীতা থেকে রক্ষা করার জন্য। জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ আরো বলেন, বিগত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন। আমি চাই আমাদের নতুন প্রজন্ম জাতীয় পতাকার সঠিক ইতিহাস জানুক। জাতীয় পতাকাকে সম্মান দিতে শিখুক।
মুল প্রবন্ধে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. জহিরুল হক শাকিল বলেন, আমাদের জাতীয় ঐক্য ও আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন জাতীয় পতাকা। আমাদের জাতীয় পতাকা বাংলাদেশের ইতিহাসে ধারক ও বাহক। দীর্ঘ সংগ্রাম ও ত্যাগ তিতীক্ষার যেমন আমাদের পতাকায় ফুটে উঠেছে তেমনি আমাদের পরিবেশ, প্রকৃতি শুভ্রতার পরিচয় পাওয়া যায়।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বলেন, আমাদের জাতীয় পতাকা হলো শৌর্য্যরে প্রতীক। এ পতাকা হলো আমাদের প্রকৃতি ও ত্যাগ তিতীক্ষার প্রতীক। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নিয়ে স্বরচিত দু’টি সঙ্গীত গেয়ে শোনান।
মেয়র মিজানুর রহমান মিজান ব্যতিক্রমী ও সাহসী উদ্যোগের জন্য পৌরবাসীর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দীর্ঘ ত্যাগ তিতীক্ষার পর আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে একটি পতাকা পেলেও যারা এর ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় অবমাননা করেন তারা নিঃসন্দেহে গর্হিত অপরাধ করছেন।
অনুষ্ঠান শেষে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ হবিগঞ্জ পৌর এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন।