মানব সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই একে অন্যের সাথে সাক্ষাতের সময় পরস্পর ভাব বিনিময়ের বিভিন্ন পদ্ধতি চালু হয়ে আসছে। সাক্ষাতে পরস্পরের ভাবের আদান প্রদান শুধু মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং প্রাণী জগতেও তাদের স্ব স্ব ভাষা ও বাচন ভঙ্গিতে ভাবের আদান প্রদান করে থাকে, এটাই চিরাচরিত নিয়ম।
মানব সমাজে তাদের রুচি, আদর্শ, সংস্কৃতি ও সভ্যতা অনুযায়ী ভাবের আদান প্রদানে ভিন্ন ভিন্ন শব্দ ও বাচনভঙ্গি ব্যবহার করে থাকে। যেমন ভারতীয় উপমহাদেশের হিন্দু সমাজে পরস্পর সাক্ষাতে আদাব, নমস্কার, নমঃ নমঃ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে থাকে। ইউরোপ আমেরিকার খ্রিস্টান সম্প্রদায় Good Morning, Good Afternoon, Good Evening, Good Night, Bye Bye, Ta Ta ইত্যাদি শব্দাবলী ব্যবহার করে। প্রাক ইসলামী যুগে আরব সমাজে (আন আমাল্লাহু বিকা আইনাইন) (আনআমা ছাবাহান) ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করত। ইসলামের আবির্ভাবের পর প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ইসলাম পূর্ব যুগের সকল পদ্ধতির অবসান ঘটিয়ে পরস্পর সাক্ষাতে আসসালামু আলাইকুম বলে অভিবাদনের নির্দেশ দেন। মূলত তখন থেকে উম্মতে মুহাম্মদ (স.) এর মধ্যে ইসলামের প্রচলন শুরু হয়।
সালামের ইতিকথা সংবলিত যে হাদীসখানা সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য তা হলো- হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন- আল্লাহ্ তা’আলা আদম (আ.) কে তার আকৃতিতেই সৃষ্টি করেছেন। তার উচ্চতা ছিল ষাট গজ। তাকে সৃষ্টি করে আল্লাহ্ তা’আলা বলেন যাও ফেরেস্তাদের ঐ দলকে সালাম কর, আর মনোযোগ সহকারে শ্রবণ কর তারা জবাবে কি বলে। কেননা এটাই হবে তোমার ও তোমার সন্তানদের অভিবাদনের পদ্ধতি। আদম (আ.) গিয়ে সালাম দিলেন এবং ফেরেস্তাগণ জবাবে একটি অংশ বৃদ্ধি করে বললেন।
সালাম নামক অভিবাদনটি শুধু দুনিয়াতেই সীমাবদ্ধ নয় বরং হাসরের ময়দানে হিসাব নিকাশের পর যারা জান্নাতি হবে তাদেরকে ফেরেস্তারা জান্নাতের দরজায় দাঁড়িয়ে সালামের মাধ্যমে অভ্যর্থনা জানাবে আর বলবে ‘সালামুন আলাইকুম’।
সালাম এমন একটি জান্নাতি আমল যা মুসলিম সমাজে পরস্পর পরস্পরে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি করে ও হিংসা বিদ্বেষ দূরীভূত করে। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত পশ্চিমা কালচারের অভিবাদন বাদ দিয়ে সর্বত্র সালামের প্রচলন করা।